চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‘বদলে দিতে’ নয়, ‘বদলে যেতে’ এসেছেন ডোমিঙ্গো

স্পোর্টস ডেস্ক

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মুখ থেকে যেন হাসি সরছিলই না তার। সংবাদ সম্মেলনে ঢুকলেন হাসতে হাসতে, বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও চওড়া হাসি। শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কিছুটা খুনসুটিও করলেন। বাংলাদেশ দলের নতুন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মধুচন্দ্রিমার শুরুটা হলো বেশ একটা ফুরফুরে হাওয়ায়। আরেক বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট তুলনায় একটু কম সপ্রতিভ ছিলেন। কে জানে, হয়তো এশিয়ায় কোচিং করানো হয়ে গেছে বলে বোলিং কোচ ল্যাঙ্গেভেল্টের ডমিঙ্গোর মতো ‘যা দেখি দারুণ লাগে’ মনে হচ্ছে না। ডমিঙ্গোর সকালটা গতকাল শুরু হয়েছে অনেক আগে। নিজেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সকাল ছয়টায় ঘুম ভেঙেছে। ঢাকার ট্রাফিকের দুর্গতির অভিজ্ঞতা এর আগেও হয়েছে নিশ্চয়, ছয়বার যে বাংলাদেশে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে! সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ধারণা করেছিলেন, আজ হয়তো মাঠে পৌঁছাতেই সময় লেগে যাবে ঘণ্টাখানেকের বেশি। সকাল বলেই বোধ হয় বেশিক্ষণ লাগল না, মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌছে গেলেন মিরপুরে। গতকাল শুধু ফিটনেস সেশন ছিল, অনেকটা সময় রানিং করলেন সবাই। সকাল সকাল এসে সবার সঙ্গে পরিচয়পর্ব সেরে ফেললেন দুই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। কিছুটা সময় অনুশীলন দেখলেন, মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের বিরতি শেষে আবার মাঠে গেলেন। ডমিঙ্গো নিজে যেমন এতবার এসেছেন বাংলাদেশে, তবে তাকে ঘিরে প্রচারমাধ্যমের যে এতোটা আগ্রহ থাকবে সেটা আশা করেননি। বিমানবন্দরে নেমে ক্যামেরার বহর দেখে একটা ছোট ধাক্কা খেয়েছিলেন। গতকাল সকালে কানায় কানায় পূর্ণ সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে অস্ফুটে নিজের বিস্ময়টাও জানালেন, ‘সবচেয়ে বেশি অবাক লেগেছে আমার সামনে এতো মানুষ দেখে। দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে আট থেকে নয়জন থাকে বড়জোর। আমি একসঙ্গে এত বেশি রিপোর্টার জীবনেও দেখিনি। কাল (পরশু) বিমানবন্দরেও মনে হয় শ’খানেকের মতো ক্যামেরা ছিল। এতজনকে সামলাতে তো পুলিশ লাগে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই ব্যাপারটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছে। সমর্থকদের এরকম আবেগের জন্য এখানে আসার ব্যাপারে আরও বেশি প্রেরণা পেয়েছি।’ নিজের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় কলপ্যাকসহ আরও নানা কারণে অন্য খেলার সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রিকেট। অনেকে তো কলপ্যাকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। ডমিঙ্গোর যেমন কখনো উপমহাদেশে কাজ করা হয়নি। ক্রিকেটের এই সংস্কৃতির এই ধাক্কাটা সামাল দেওয়াও কি চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা? ডমিঙ্গো খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, ‘আমরা তো এখানে জগতটা বদলে দিতে আসিনি। উপমহাদেশে অনেক আগে থেকেই ক্রিকেট খেলা হয়ে আসছে। আমরা আশা করতে পারি না বাংলাদেশের ক্রিকেট আমাদের সাথে খাপ খাইয়ে নেবে। আমাদেরই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। সেই পথ আমাদের বের করে নিতে হবে। আমাদের সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নিতে হবে।’ ডমিঙ্গো নিজের দেশের সমর্থকদের সঙ্গে বাংলাদেশের তফাত দেখছেন না, ‘দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকদের সঙ্গে এখানে তফাত নেই। হারজিত খেলার অংশ, সেটা সব আন্তর্জাতিক দলের জন্য। মানুষজন অনেক কিছু বলবে, কিন্তু দলকে খেলার দিকেই মনযোগটা দিতে হবে।’ চার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করছেন ডমিঙ্গো। মূলত খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালো ধারণা নেয়া এবং তাদের আস্থা অর্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো প্রথমত, খেলোয়াড়দের ভালোভাবে দেখা, তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়া, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি এবং খেলোয়াড়দের আস্থা অর্জন করা।’ তিনি যে এ প্রাথমিক লক্ষ্যপূরণে বিশেষ মনোযোগী তা বোঝা গেছে দলের সঙ্গে তার ক্যাম্পের প্রথম দিনেই। কেননা সকাল ৯টায় ক্যাম্পে এসে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগপর্যন্ত খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়ার ও বোঝার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে তাকে। যা আশা জাগাচ্ছে দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট