চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্যাম্পে জীবন চলছে যেমন

রোহিঙ্গা কিশোরীদের স্বপ্ন বিবাহ

কায়সার হামিদ মানিক হ উখিয়া

৪ আগস্ট, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার বুচিদং ফিয়াজি পাড়া থেকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন সানজিদা (১৪) ও তারই চাচাত বোন রফিকা (১৩)। তারা এগারো-বারো বছর বয়সে দেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম ভয়াবহতা। বালুখালী ময়নাঘোনা ১১ নং ক্যাম্পে কিশোরী সানজিদা ও রফিকার সাথে কথা হয়।
সানজিদা অকপটেই বলেন, সেখানকার করুণ কাহিনী। তার গ্রামে বৃদ্ধা ও তরুণীদের পৃথক লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। সেখানে তরুণী যুবতীদের আলাদা একটি বাড়িতে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা গণধর্ষণ করেছে। তার বড় বোনও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তার সামনেই তিন তরুণীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়। সেই মর্মান্তিক স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। দুটি বছর পার হতে চলেছে, আগস্ট মাস তাদের জীবনের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা কিশোরী সানজিদার বুক ফাটা আর্তনাদই বলে দেয় কি অবর্ণনীয় দুর্দশায় আছেন। এখানে ক্যাম্পে কেমন আছেন, আর স্বপ্ন কী ? জানতে চাইলে মৃদু হেসে জবাবে বলেন, ‘এখন একটিই স্বপ্ন বিবাহ। আমাদের মতো রোহিঙ্গা কিশোরীদের কাছে পৃথিবী অন্ধকারময়।
প্রিয় মাতৃভূমি মিয়ানমারে শিশুকাল কেটেছে। বয়োসন্ধিকালে কিশোরী বয়সে অজানার পথে আমাদের ভবিষ্যত। তাই সুখ-দুঃখ শেয়ার করার মতো জীবনসঙ্গীকে বেছে নিতে বিয়ের বিকল্প নেই। ক্যাম্পে আমার বয়সী অনেকেই সন্তানের মা হয়েছেন। অল্প বয়সটা আমাদের জন্যে কোন ফ্যাক্ট না।’ মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য নির্মমতার শিকার হয়ে সানজিদা এখন ময়নাঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
তেরো বছরের রফিকা বলেন, বাবাকে বার্মিজ সেনারা গুলি করে মেরেছে। মাকে নিয়ে বাংলাদেশে ক্যাম্পে আশ্রয় পেলেও মা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন সবসময়। মা ছাড়া আমার পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই। জীবন কখনো আর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। আমার পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট। মগ সেনাবাহিনী এসেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই হামলা থেকে কোনমতে আমি আর আমার মা পালাতে পেরেছি। সেসময় সীমান্তে পৌঁছানো খুব কঠিন ছিল। আর এখন জীবন বাঁচাতে ভাল মনের একজন সাথী প্রয়োজন। ক্যাম্পে বন্দী জীবনে সাথী ছাড়া নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। মাকে টেনশনমুক্ত করতে আমি জীবন সাথী হিসেবে একজনকে পছন্দ করি। সে আমাদের গ্রামের ছেলে। ময়নাঘোনা ক্যাম্পেই আছে। আমাদের খোঁজখবর রাখেন। দু’এক মাস পরেই তার সাথে আমার বিয়ে হবে। বিয়ে মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী এক ভালবাসার বন্ধন। আমাদের ক্যাম্প জীবনে শত কষ্টের মাঝেও একটু সুখের আশা করতেই পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট