চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোনো একদিন

নুর আঙ্গেজ বেগম

৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ব্যাগটা হাতে নিয়ে টাকাগুলো আবার গুণে দেখে নীলা। মা মেয়ের বেশ হবে। রীতুটা বায়না ধরেছে আজ কতদিন ধরে। মা চলো না চাইনিজ খেতে। প্রতিদিন ঘরে খেতে ইচ্ছে হয় নাকি। আমার বন্ধুরা সব খুব গল্প করে। ওরা তো ছুটির দিনে কি সুন্দর বাইরে খেতে যায় বাবা মাকে নিয়ে। ও মা এবার আমিও যাব তোমাকে নিয়ে।
অন্যায় আবদার সেও তো নয়। তার সাত বছরের মেয়েটা এখনো অবুঝ। জন্মের পর থেকে মাকেই তো দেখে এসেছে। বাবার ভূমিকায় কেউ ছিল না। আর নেইও। বীজ বপন করেই দায়িত্ব শেষ। বেশ আছে অন্য আর এক নারীকে সঙ্গিনী করে। একলা মায়ের যুদ্ধটা নীলার একার। এতো উপেক্ষিত ছিল ভাবনায়ও আসেনি কোনদিন। সংসার যেন রুটিনে বাঁধা অভ্যেস। এক ঘেয়েমী রুটিনে বদলের চেষ্টাও নীলা কম করেনি। ব্যর্থ হয়েছে অনিকের কাছে। ক্লিনিকের বেডে শুয়ে রক্তাক্ত শরীরটা যখন প্রথম মেয়ের মুখ দেখলো। তখন কেবল স্বপ্নতেই মগ্ন ছিল। এবার অনিক মেয়ের জন্য হলেও নিজেকে বদলাবে। সময় দেবে সংসারকে। মেয়েকে আদরের বন্যা বইয়ে দেবে। মিছে মেয়ের জন্মদিন। মিছে তার ভাবনা। ক্লিনিকে নীলাকে দেখতে এসে একটি খাম এগিয়ে দিল। শ্রেষ্ঠ গিফট।
এখানে তোমার সাইন চাই।
এটা কি! কিসের খাম?
আমাদের ডিভোর্স পেপার।
সেদিন বাইরে রক্তক্ষরণের সাথে ভেতরের রক্তক্ষরণটা কি কেউ দেখেছিল? প্রচ- অভিমান, আত্মমর্যাদা, অসহায়ত্ব সব কিছুর মাঝেই তো ডুবে ছিল সে। যে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল অনিক, সে ঘরের বন্ধ কুটিরে তার এতোগুলো বছর কি কিছুই নয়। সেইদিন অভিমানকেই জয় করে নিয়েছিল নীলা। তার মা বাবা কেউ তো নীলার পছন্দকে দাম দেয়নি। সহকর্মী অভিকে নীলার যোগ্য মনে করেনি। নীলার ভালোবাসা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে অতীত হয়ে। রীতুটা ছয় বছর গিয়ে সাতে পা ছিল। জন্মদিনটা তাই রীতুর ইচ্ছেতেই হবে। নতুন আনা লাল টুকটুকে জামাটা খুব মানিয়েছে মেয়েকে। যেন লাল পরী। নিজেকেও আজ সাজিয়ে নিল শাড়িতে। শপিংমলে এসে মেয়ের বায়না মিটিয়ে খেলনা কিনলো। বাড়তি গিফট থাকলো চকোলেট বক্স। মেয়ে যেন খুশিতে আটখানা। অর্ডারটা রীতুর পছন্দ মতোই ছিল চাইনিজে এসে। মেয়ে খেলাতেই মেতে আছে। চীনা খাবার আসতে এখনো দেরি। হালকা আলোয় কতজন বসে আছে টেবিল দখল করে। কেউ খাচ্ছে। কেউ অপেক্ষায় আছে। নীলার চোখ তাই দেখছিল। হঠাৎ চোখ আটকে যায় কোনার টেবিলটায়। অনিক বসে আছে সঙ্গিনী নিয়ে। ভেতরটায় যেন মৌমাছি হুল ফোঁটালো। দু’একবার যে নীলার চোখাচোখি হয়নি তাও নয়। অনিক রীতুকেই দেখেছিল বারবার। হয়তো ভাবছে বীজ বপনের পর চারা গাছটি এতো বড় হলো। নিজের অগোচরে অজানা ভয় নীলাকে গ্রাস করছে। অনিক কি এতোদিনেও বাবা হয়নি। সন্তান ওদের সাথে খেতে আসবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি। খাবার বিস্বাদ লাগে নীলার। অনিকের বিষণœ মুখ সাক্ষী দিচ্ছে খুব ভালো নেই অনিক।
সুন্দরী সঙ্গিনীও কি তার সুখ মিটাতে অক্ষম হলো। অনিকের চোখ রীতুতেই আটকে আছে। বেশ হলো। বাবা হয়েও যে মানুষ বাবা ডাক শুনতে পায় না তার কষ্টও কি কম কিছু। অনিকের কি লোভ হচ্ছে একটি বার মেয়েকে কাছে পাওয়ার। আদরে আদরে ভরিয়ে বলবে তুই আমার সোনামনি। যে ডাকের শূন্যতায় আমি বারবার আহত। আমার সেই শূন্য বুকে ফিরে আয় মা। একটিবার বাবা ডাক। নিজের মন থেকেই সাহস ফিরে পায় নীলা। হেরেও কেমন হারিয়ে দিল অনিককে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট