চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চড়েছে পেঁয়াজের দাম

২৪ আগস্ট, ২০১৯ | ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির ঈদের পর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, যার কারণ হিসেবে ভারতে এই খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকায় এর আমদানি নির্ভরতা খুব একটা নেই। তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতীয় আমদানির ওপর নির্ভর করে স্বীকার করে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলছেন, ভারতে দাম বৃদ্ধির সুযোগে দেশের বাজারে কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়াবেন তারা।-বিডিনিউজ

গত এক মাসে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে শতকরা ৫০ ভাগ।

ঢাকায় পেঁয়াজের বড় পাইকারি মোকাম শ্যামবাজারের আল মক্কা বাণিজ্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস হাওলাদার গতকাল শুক্রবার বলেন, “বর্তমানে ভারতীয় এলসির পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। সেই সঙ্গে দেশীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩৮ থেকে ৪০, ভারতীয়টা ৪৫ টাকায় বেচাবিক্রি চলছে গত দুইদিন ধরে।” কোরবানির ঈদের আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২৮ টাকা ছিল বলে জানান তিনি। এদিন রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর অঞ্চলের দেশীয় ভালো মানের পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকায়।
এছাড়া রাজধানীর মিরপুর, মহাখালী ও কারওয়ানবাজার এলাকার মুদি দোকানগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কারওয়ান বাজারে শরীফুল ইসলাম নামে একজন ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছেন এক কেজি পেঁয়াজ।
হঠাৎ করে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে তো ক্রেতার কিছুই বলার নেই। বাজারে দাম যত, তত টাকা দিয়েই কিনতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতারা সব সময় অসহায় থাকেন।”
এই বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “এবার কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের বাজার বেশ স্থিতিশীল ছিল। গত দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়ছে।”

কারওয়ানবাজারের প্রায় সব কটি আড়তে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের ভরপুর মজুদ দেখা গেছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসাইন গতকাল শুক্রবার বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে শোনা গেলেও গত এক সপ্তাহে সরবরাহে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে ২৭০টা গাড়ি আসছে। এর মধ্যে ৬০-৭০টাই থাকছে পেঁয়াজবাহী গাড়ি। এর মানে হচ্ছে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদন ক্ষেত্র মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম গত এক মাসে অন্তত ৭১ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার লাসালগাঁওয়ে এক মাস আগে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১২ রুপিতে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০ দশমিক ৫০ রুপিতে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের ‘সর্বোচ্চ মূল্য’।
এদিকে দাম বৃদ্ধির সুফল কাজে লাগাতে কৃষকরাও ব্যাপক হারে বাজারে পেঁয়াজ আনা শুরু করেছেন বলেও জানানো হয়েছে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে। “অগাস্টের ২০ তারিখে লাসালগাঁওয়ে পেঁয়াজ এসেছে দুই হাজার ৫০০ টন, এক মাস আগেও একদিনে এসেছিল ১৫০০ টন পেঁয়াজ।”

এবার পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা আগের চেয়ে কমেছে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ২২ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল। চাহিদা পূরণে ওই বছর ৭ লাখ ৪৪ হাজার টন আমদানি করতে হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৬ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় আমদানি নির্ভরতাও কিছুটা কমেছে। তবে এরপরেও কেন ভারতীয় বাজারে দাম বাড়লে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে, সেই প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পেঁয়াজের দাম অনেকটা ভারতীয় আমদানির ওপর নির্ভর করে। ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে পারে। “এর পরে আমরা মনিটরিং জোরদার করছি যাতে ভারতে দাম বৃদ্ধির সুযোগে দেশের বাজারে কেউ অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে।”

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা গেলে আমদানি নির্ভরশীলতা কমে যাবে। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। “ভরা মওসুমে পেঁয়াজের দাম অনেক কমে যায়, যখন মওসুম থাকে না তখন দাম অনেক বেড়ে যায়। কৃষক যাতে সব সময় পণ্যের ন্যায্য মূল পায় সেজন্য নীতিগত কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।”

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট