চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিন সিটিতে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু

চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত, ঢাকার মাঠে তাবিথ ও ইশরাক লন্ডনের সবুজ সংকেত

শিবুকান্তি দাশ হ ঢাকা অফিস

২৪ আগস্ট, ২০১৯ | ২:৫২ পূর্বাহ্ণ

আগামী ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে এখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। চট্টগ্রামে সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. শাহাদাতকে আপাতত ধরে রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত নগর সহসভাপতি আবু সুফিয়ানের নাম ও সামনে চলে আসতে পারে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ধরে রাখা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের আশা- ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছিল। তখন দলের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ হয় কারাগারে নইলে পলাতক ছিলেন। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নেতাকর্মীরা জামিনে আছেন। আগাম প্রস্ততিও নেওয়া হচ্ছে। তাই নির্বাচন মোটামুটিভাবে স্বচ্ছ হলেই জয়ী হবেন তারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবুজ সংকেতও রয়েছে এ তিন প্রার্থীর প্রতি। ফলে তিন নেতাই এখন নানা ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হওয়ার কথা। কোরবানির ঈদের আগে স্থায়ী কমিটিতে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে- জাতীয় ও স্থানীয় যে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। জানা গেছে, বিএনপি হাইকমান্ডের দৃষ্টিতে চট্টগ্রামে নগর

বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়রপ্রার্থী হিসেবে যোগ্য। মহানগরে তার শক্ত অবস্থান আছে। তবে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও সহসভাপতি আবু সুফিয়ানেরও প্রার্থী হতে আগ্রহ আছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, স্পর্শকাতর মামলার জটিলতা না থাকলে কারাবন্দী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে প্রার্থী করার পক্ষে নেতাকর্মীরা। সুফিয়ানের পক্ষে আছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির এক নেতা।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিষয় ডেংগু প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতাকে ইস্যু করে ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে ইশরাক হোসেন তারেক রহমানের নির্দেশে নগরবাসীর সঙ্গে জনসংযোগ মূলক কাজে সক্রিয় রখেছেন নিজেদের। বিএনপি একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সিটির নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে উত্তরে তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে ইশরাক হোসেন প্রার্থী হচ্ছেন।
নির্ধারিত সময়ে ঢাকার সিটিরে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রাণঘাতী ডেংগু নিয়ে বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সরকার যথাসময়ে নির্বাচন দেবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তবু দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ এগিয়ে রাখছে। এরই মধ্যে লন্ডন থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের প্রার্থীর বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নীতিগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলীয় ফোরামে প্রার্থী কারা হচ্ছেন তা নির্ধারণ করা হবে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থেকে কাজ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ঈদের আগে তারেক রহমানের নির্দেশে দুই মেয়রপ্রার্থী তাবিথ ও ইশরাক বাড্ডায় গণপিটুনিতে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রেনুর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের ঈদ উপহার দেন। এর মাধ্যমে তারেক রহমান তার দুই প্রার্থীর ব্যাপারে নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা দিয়েছেন।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উত্তরে গত সিটি নির্বাচনের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে এবারও বেছে নেওয়া হয়েছে। তিনিই দলের প্রার্থী সেই বার্তা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান। উত্তর কমিটিকে তাবিথের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণে প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অথবা তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মেয়রপ্রার্থী পদে নির্বাচন করার আগ্রহ নেই। সেখানে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারেক রহমান।
ইশরাককে প্রার্থী করার পক্ষে যুক্তি হলো- দক্ষিণের বেশিরভাগ মানুষই স্থানীয় বাসিন্দা। পুরনো ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা হলে আনুকূল্য পাওয়া যায়। সেই চিন্তা থেকে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। যদিও দক্ষিণে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ আছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের।
জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশের পর উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ডেংগু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন তাবিথ। কয়েক দিন আগে তাবিথকে নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আগুনে পুড়ে যাওয়া মিরপুর-৭ ঝিলপাড় চলন্তিকা বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান।
তাবিথ আউয়াল বলেন, গতবার প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচনের পর থেকেই উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখনো করছি। নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত। তবে সরকার নির্বাচন আদৌ দেবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
একই সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটিতে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রাথমিক নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেংগু প্রতিরোধে কার্যক্রম করছেন ইশরাক। ঈদের দিন বিকালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, আমার বাবা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। আমিও প্রকৌশলী। ঢাকাকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি। আমি নিজেও যানজট নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তাই বাবার অভিজ্ঞতা আর আমার পড়াশোনাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক ঢাকা গড়তে পারব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট