চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জোড়া লাগানো সেই মনি-মুক্তা পা দিয়েছে দশ বছরে

অনলাইন ডেস্ক

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ১০:৪০ অপরাহ্ণ

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে প্রথম জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরণের ফল মনি- মুক্তা ১০ বছরে পা দিয়েছে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের বেড়ে ওঠা মনি- মুক্তা এখন স্থানীয় পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় মনি-মুক্তার জন্মদিন। বিকালে বিদ্যালয় শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধুবান্ধবসহ প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পালন করে পরিবারের লোকজন। জন্মদিন উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।

মনি ও মুক্তা দুজনই সুস্থ আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায়। বেশ সুন্দর করে কথা বলে। নিয়মিত স্কুলে যায় বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা-মা। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে মনি-মুক্তা। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।

২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসাপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।

মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এ আর খানের সফল অস্ত্রোপচারে আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি। তিনি বলেন, সব কষ্ট ভুলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন তিনি। মনি-মুক্তাদের একমাত্র বড় ভাই সজল কুমার পাল অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় পাল ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলি আকতার জানান, মনি-মুক্তা এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। তারা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। সহপাঠীরা তাদের খুব ভালোবাসে। মনি শান্ত হলেও মুক্তা বেশ চটপটে বলেও তিনি জানান।

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট