চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঢাকায় রবিবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

চামড়ার বাজারে ধস : নেপথ্যে বকেয়া নিয়ে আড়তদার- ট্যানারি মালিকদের রেষারেষি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ৬:১১ অপরাহ্ণ

ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের মধ্যে বকেয়া টাকা নিয়ে রেষারেষির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চামড়া শিল্প। কোটি কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়েছে দাম দিয়ে চামড়া না কেনার কারণে। কেউ কেউ পুঁতে ফেলেছেন কোরবানির পশুর চামড়া।

ঢাকার পোস্তার আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি শিল্প মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে ৪০০ কোটি টাকা। তারা কোরবানির আগে ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন, অথচ পরিশোধ করেননি আড়তদারদের কোনো টাকা। এজন্য এবার তারা চামড়া কিনতে পারেননি। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা ধরেছেন ভিন্ন সুর। তাদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের সব টাকা বাস্তব সমস্যার কারণে শোধ করা যায়নি। কিন্তু এজন্য আড়তদাররা যে এই অবস্থার সৃষ্টি করবেন এটা ভাবাও যায় না। তারা গরিব অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করলেন। এখন সরকার এবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের কারণে লবণযুক্ত চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছেন না আড়তদাররা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (১৮ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠকে টানাপড়েন নিরসনে চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর পোস্তার চামড়া আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক ঋণ পেলেও আড়তদারদের টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করছেন না। বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে এ টাকা। বাকিতে চামড়া নিয়ে পরে শোধ করার কথা বললেও তা আর শোধ করেন না। এ পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এ কারণে কাঁচা চামড়া কিনতে চান না আড়তদাররা। ফলে এবারের ঈদে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া এনে অনেকে বিপাকে পড়েন। অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। বিক্রি করতে না পেরে কাঁচা চামড়া ফেলে চলে গেছেন অনেকে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও একই ঘটনা ঘটেছে। এর ওপর আড়তদাররা নিয়েছেন নতুন সিদ্ধান্ত। তারা বলছেন, সরকার সমাধান না করলে তারা যতগুলো চামড়াতেই লবণ দিয়েছেন, তা আর ট্যানারিতে বিক্রি করবেন না। প্রয়োজনে তারা মজুদ করে রাখবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রপ্তানি করবেন।

বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের প্রায় পড়ে আছে ৪০০ কোটি টাকা। বকেয়া এ টাকাগুলো না পাওয়া পর্যন্ত কোনো চামড়া তাদের দেবো না। শনিবার থেকে চামড়া কেনার কথা থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া দেব না। আমরা একটি সুরাহা চাই। সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা চামড়া দেবো না। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ জানুক কাদের কারণে চামড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা এমন না করলে চামড়ার এ দুরবস্থা হতো না।

তবে এই অবস্থার জন্য পুরোপুরি আড়তদারদের দায়ী করছেন ট্যানারি মালিকরা। অভিযোগ করে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়া হলে চামড়া শিল্প কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।

আড়তদারদের পাওনা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়তদারদের সঙ্গে ৩০ বছরের ব্যবসা। কারও কারও লেনদেন আছে। তার অর্থ এই নয় যে ৪০০ কোটি টাকা। ট্যানারি মালিকদেরও বাস্তব কিছু সমস্যা ছিল। তাই হয়তো সব টাকা শোধ করতে পারেননি।

ট্যানারি মালিকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত চামড়া কেনার অনুরোধ করা হলে তারা ঘোষণা দেন পূর্ব নির্ধারিত ২০ আগস্টের আগেই ১৭ আগস্ট শনিবার থেকে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেনার। কিন্তু এতে বাদ সাধেন আড়তদাররা। সরকারের পক্ষ থেকে সমাধান না হলে চামড়া বিক্রি করবেন না বলে জানান তারা।

সরকারের কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের পর নড়েচড়ে বসেন ট্যানারি মালিকরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) বুধবার (১৪ আগস্ট) আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানায়। তবে এখনো চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে অটল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট