চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

চামড়ার বাজারে ধস
আজ থেকে চামড়া কিনবে
ট্যানারি মালিকেরা

বাণিজ্য মন্ত্রলালয়ের অনুরোধে আজ শনিবার থেকে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাভারের ট্যানারিগুলো। সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা হবে বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। তবে চামড়ার গুণগত মান খারাপ হলে দামে হেরফের হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। আজ প্রথমে রাজধানীর পোস্তার আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কেনা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তদার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের থেকে চামড়া কিনবে ট্যানারিগুলো।
গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দামে ধস নামায় বিক্রি করতে না পেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ চামড়া ফেলে দেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতি থেকে চামড়া ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে এবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একইসাথে দ্রুত নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে বলা হয় ট্যানারি মালিকদের। এদিকে, ট্যানারি মালিকদের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকার অভিযোগ করেছেন আড়তদাররা।
এদিকে, মূল্য বিপর্যয়ের কারণে চামড়া খাতে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কোরবানির পশুর চামড়ার ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন। বিপুলসংখ্যক এ চামড়া রাস্তায় ফেলে, নদীতে ভাসিয়ে ও মাটির নিচে চাপা দেয়া হয়। কাঁচামাল হিসেবে এসব চামড়া ট্যানারিগুলোতে আসত। নষ্ট চামড়াগুলো যথাসময়ে কেনা সম্ভব হলে বিদেশে রপ্তানি করে সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকা আয় হতো। কিন্তু এবার তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
এদিকে চামড়ার বাজারে এ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। চামড়া মাটি চাপা দেয়ার বিষয়গুলো তদন্ত শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও দমকল বাহিনী আলাদাভাবে তদন্তে নেমেছে। তাছাড়া, ব্যাংকগুলো খতিয়ে দেখবে তাদের দেয়া ঋণের অর্থ ট্যানারি শিল্পের মালিকরা সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন কিনা। কারণ এ বছর ৭শ’ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেয়া হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ে তারল্য সংকট থাকার কথা নয়।
জানা গেছে, দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। এ বছর কমপক্ষে ১ কোটি ১৮ লাখ পশুর চামড়া কেনা-বেচা হওয়ার কথা। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭২ লাখ। এছাড়া ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্য পশু। পোস্তার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিএইচএসএমএর হিসাব মতে ৩০ শতাংশ চামড়া এ বছর নষ্ট হয়েছে। এর অর্ধেকই গরুর চামড়া। একটি গরুর চামড়া (গড়ে ১৮ বর্গফুট) বিদেশে রফতানি করে আয় হয় সর্বনি¤œ ২১৬০ টাকা।
এবার নষ্ট হওয়া গরুর চামড়া থেকে রফতানি আয় কমবে প্রায় ৩৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকার বেশি রপ্তানি মূল্য রয়েছে। সে হিসাবে ছাগলের চামড়া থেকে আয় কমবে কমপক্ষে দেড়শ’ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, গরু-ছাগলের চামড়া নষ্ট হওয়ায় সব মিলে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার রফতানি আয় কমে যেতে পারে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি খাতে আয় ৯ হাজার ২৯১ কোটি টাকা (১০৯.৩০ কোটি মার্কিন ডলার)। ধারণা করা হচ্ছে, কাঁচামাল সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, চামড়া জাতীয় সম্পদ। এটি মাটিতে পুঁতে ফেলা, রাস্তায় বা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া গর্হিত কাজ। এ ধরনের কাজ যারা করেছেন, তারা ঠিক করেননি। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলছি। নিশ্চয়ই সামনে এ নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট