চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

রপ্তানি নাও হতে পারে এবারের সংগৃহীত চামড়া

অনলাইন ডেস্ক

১৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৬ অপরাহ্ণ

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেছেন, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিলেও এবারের সংগৃহীত চামড়া রপ্তানি করা সহজ হবে না। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি এত সহজ না। এটা অনেক কঠিন একটা বিষয়। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে হলে যে ধরনের লজেস্টিক সাপোর্ট লাগবে, তা নেই। শুধু অনুমতি দিলেও তো রপ্তানি করা যায় না। কাঁচা চামড়া নেওয়ার জন্য নিদিষ্ট কন্টেইনার থাকতে হবে। রপ্তানির বাজার তৈরি করতে হবে। এলসি করতে হবে। আরও অনেক কিছু লাগবে। এসব করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। অর্থাৎ এই মুহুর্তে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার সুযোগ নেই। তবে দেরি করে যদি কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হয় তাহলে এর সুবিধা সাধারণ মানুষ পাবেন না। গরিব-মিসকিন, এতিম ও দুস্থরা এর কোনও বেনিফিট  পাবেন না। বেনিফিট পাবেন আড়তদাররা ও যারা ফরিয়াদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। এ কারণে তিনি সরকারের প্রতি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।

শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে শতভাগ দেশীয় এই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তিনি মনে করেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার যদি দুইতিন মাস আগে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিতে পারতো তাহলে গরিব-মিসকিন, এতিম ও দুস্থরা ঠকতেন না।

এদিকে আগামী শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে সরকার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছে চামড়া শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ)। বুধবার (১৪ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলামের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর কাঁচা চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার সরকারের কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি বাতিলও হতে পারে, ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসও পাওয়া গেছে।

অবশ্য কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা চামড়া রপ্তানির অনুমতির জন্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও তারাও বলছেন, এবারে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা সহজ হবে না। কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড  এন্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি এর আগে কখনও হয়নি। বিষয়টি নতুন। এ কারণে সময় লেগে যাবে। তবে চামড়া রপ্তানির সুযোগ থাকলে আগামী বছরগুলোতে এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই-তিন মাস আগে যদি কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত হতো তাহলে সম্ভব ছিল।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, সরকার চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে অনেকেই যোগযোগ করতে শুরু করেছেন। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে কোরবানিদাতারা চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাবেন। আবার আড়তদারদের ট্যানারি মালিকদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। টাকার সমস্যাও থাকবে না। গরিবের হকও নষ্ট হবে না।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দেশে প্রথমবারের মত কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মানুষ যেন কাঁচা চামড়ায় ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা দিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে পশুর চামড়া। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এবার ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার দাম দিয়েছেন ২শ’ টাকারও কম। এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩শ’ টাকায়। চামড়ার দাম না পাওয়ায় কোরবানি দাতাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে চামড়া মাটিতেও পুঁতে দিচ্ছেন। অনেকে রাস্তাতেও চামড়া ফেলে দিয়েছেন।

এদিকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের নেতারা ও পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পরস্পরকে দায়ী করছেন। ট্যানারি মালিকরা  কাঁচা চামড়ার দাম কমানোর নেপথ্যে আড়তদারদেরকেই দায়ী করেছেন । সংগঠনটির চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বুধবার (১৪ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, চামড়ার দাম না পাওয়া ও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী আড়তদাররা। তিনি বলেন, বকেয়া টাকা আদায় হয়নি এমন দোহাই দিয়ে কোরবানির কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে ফায়দা লুটেছেন অসাধু আড়তদাররা। আড়তদাররাই সিন্ডিকেট করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের ঠকাচ্ছে। তারা পানির দামে চামড়া কিনেছে কিন্তু আমাদের কাছে যখন বিক্রি করবে তখন সরকার নির্ধারিত দামই নেবে।

এদিকে আড়তদারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় অনেকেই চামড়া কিনতে পারেননি। ফলে বাজারে চামড়ার দাম পড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে আড়তদারদের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাঁচা চামড়ার দাম কমানোর নেপথ্যে রয়েছেন ট্যানারি মালিকরাই। কারণ, তারা এবছর আমাদের বকেয়া টাকা দেননি। তাদের কাছে এখনও ৩শ’ কোটি টাকার ওপরে পাওনা রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি চামড়ার দাম কমানোর সিন্ডিকেটের নায়কদের খুঁজে বের করার জন্য একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।

পূর্বকোণ/মিজান

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট