চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নুসরাতের আলিমের ফল কাঁদালো সহপাঠীদের

১৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আলিমের ফল প্রকাশের পর নুসরাতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আনন্দের বদলে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো করলেও নুসরাতের কথা স্মরণ করে শোকাভিভূত সহপাঠীরা তা উদযাপন করতে পারেননি। আবেগাপ্লুত হন শিক্ষকরাও। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আগে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিমের যে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ওই দুটিতে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। বিষয়গুলো হলো ‘কোরআন মাজিদ’ এবং ‘হাদিস ও উসুলে হাদিস’।-বিডিনিউজ
বুধবার এইচএসসির সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের আলিম পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে।
দুটি পরীক্ষা দেওয়ার পর এ বছরের ৬ এপ্রিল তৃতীয় পরীক্ষা দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হন নুসরাত। পাঁচদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় নুসরাতের সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনরা শোকাভিভূত হয়ে পড়েন। পরীক্ষার ফল জানতে আসা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নুসরাতের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখও সজল হয়ে ওঠে।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ। নিহত নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে।
তিনি বলেন, “নুসরাত মেধাবী ছাত্রী ছিল। দুই বিষয়ে পরীক্ষাও দেয় সে। সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফল করত।”
ফলাফল জানতে আসা নুসরাতের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিশাত সুলতানা, সহপাঠী তামান্না, নাসরিন সুলতানা জানান, তাদের সঙ্গে নুসরাতেরও পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে।
নিশাত বলেন, “আমাদের মতো তারও আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু নুসরাত আমাদের মাঝে নেই। আমরা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হলেও কোনো সহপাঠীর মধ্যে আনন্দ নেই।”
এদিকে, আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না করছেন নুসরাতের মা।
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের পরিবারে আজ আনন্দ-উৎসবে ভরে যেত। কিন্তু আমার মেয়ে সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।”
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, নুসরাত খুব মেধাবী ছিল। ২৭ মার্চের শ্লীলতাহানির ঘটনার পর তারা তাকে পরীক্ষা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
“কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। আমি নিজে তাকে পরীক্ষা হলে নিয়ে যেতাম। ১ ও ২ এপ্রিল দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয়। পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তার গায়ে আগুন দেওয়া হয়।”
নোমান আরও বলেন, বুধবার সকাল থেকে পরিবারে সবাই খুব বিমর্ষ। নুসরাতের বেশ কয়েকজন সহপাঠী ফোন করে তাদের রেজাল্টের খবর জানায়। এ সময় ওরা নুসরাতের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (সাবেক) সিরাজ উদ-দৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন। ওই ঘটনায় ওইদিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর জের ধরে সিরাজ উদ-দৌলার সহযোগীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তারা মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে তাকে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বোরকাপরা কয়েকজন লোক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাতের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নুসরাতের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
এছাড়া শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ অগাস্ট অভিযোগ গঠনের দিন নির্ধারণ করা আছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট