চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগরীর সুর ধারার আয়োজনে রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালিত

মো. দেলোয়ার হোসেন

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রচনায় তিনি রেখে গেছেন স্বপ্ন, কল্পনা, প্রেম। প্রাণ দিয়ে গেছেন সুর ও আলোর স্পর্শ, শুভ চেতনায়। তাঁর গান গেয়ে শিল্পী সে স্বপ্ন, সে সূর, সে শুভ চেতনার বাণী পৌঁছে দিতে চাইলেন দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে। রবি ঠাকুরের গান, কবিতা অবলম্বন করে দুঃসময়কে সম্মিলিতভাবে অতিক্রম করার আহ্বান জানালেন শিল্পীরা। সে সাথে পৃথিবী থেকে হিংসা দূর করে সবার প্রাণে মনুষ্যত্বের বাণী পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্ধকারের বিরুদ্ধে রবির সৃজন আলোর প্রেরণায় জীবনের জয়গান গাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন শিল্পীরা।
সাহিত্য-সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগের মধ্য দিয়ে যে স্থাপত্যের পূর্ণতা সম্ভব, তা রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে তাঁর ভাবনা ছিল নিবিড়। পূর্ব বঙ্গের শিলাইদহ, প্রতিসর, শাহজাদপুর বসবাসের সূত্রে শান্তি নিকেতনের প্রাক-কথন, আলো-বাতাস রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্যের আস্থা বিশ্বাস করতেন। স্থাপত্য তাঁর কাছে ছিল আকারের মহাযাত্রা। শান্তি-সম্প্রীতি, সৃষ্টি ও কল্যাণ ভাবতেন সব সময়। তাঁর স্থাপত্য চিন্তাতেও খুঁজে পাওয়া যায় কাল উত্তীর্ণ মানব ভাবনা। কবিগুরুর কাব্য ও গদ্যরীতি সমৃদ্ধ করেছে বাংলা ভাষাকে। তিনি ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ, ঊনিশ খ-ের পত্রসাহিত্য- এই বিপুল কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি বঙ্গীয় আধুনিক চিত্রকলার পথপ্রদর্শক হিসেবে চিরস্মরণীয়। ‘রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এখানে মানুষের শাশ্বত চেতনা ও অনুবেদনার স্বাক্ষর রয়েছে।’ আধুনিক বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথ একজন পথপ্রদর্শক। পৃথিবীর বহু বৈচিত্র্যময় ধাঁচের সুর ও ছন্দে প্রায় ২ হাজার বাংলা গান রচনা করেছেন তিনি। একাদশী, রূপকড়া, ঝম্পক, মধুছন্দার মত বৈচিত্র্যময় সব তালের এই স্রষ্টার গান বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের জন্য পেয়েছেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। রবীন্দ্রনাথের গান ব্যথিত ক্লান্ত হৃদয়কে প্রশান্ত করে তোলে, আশার আলো জ্বালিয়ে তোলে ভারাক্রান্ত সময়ে। তাই সুখ-দুঃখ, নিরাশা কিংবা আশায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজও নীরবে রয়েছেন বাঙালির সব অনুভূতির কেন্দ্রে।
গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮ তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নগরীর সুর ধারা সংগঠনের উদ্যোগে শৈশব ও চন্দনাইশ সংগীত নিকেতনের সহযোগিতায় নগরীর ডিসি হিল সংলগ্ন ফুলকি’র একে খান মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্বে সংগঠনের আহবায়ক শুভাগত চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ফুলকি অধ্যক্ষ শীলা মোমেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রবি ঠাকুরের সাহিত্য কর্মজীবন সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করে উপস্থিত দর্শকদের মোহিত করেন। আলোচনা শেষে ‘অশ্রু নদীর সুদূর’ গানটি নিয়ে মঞ্চে আসে সীমা পাল। এরপর আলপনা বড়–য়া গাইলেন, ‘জীবন মরণ সীমানা’, মশিউল আনোয়ার খান পরিবেশন কররেন ‘তোমার অসীমে প্রাণ মন’। আবৃত্তি শিল্পী মিলি চৌধুরী সঞ্চালনায় মঞ্চে বনানী চক্রবর্তী গাইলেন ‘আমার হিয়ার মাঝে’, সুমিত্রা বিশ্বাস পরিবেশন করলেন, ‘আমি কান পেতে রই’। রূপা দত্ত পরিবেশন করলেন ‘আজ কিছুতে যায় না’। নন্দিনী রায় পরিবেশন করলেন, ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে’, অসীম শর্মা গাইলেন, ‘আমি হৃদয়েতে পথ কেটেছি’, অর্পিতা দাশ পরিবেশন করলেন, শ্রাবণের ধারার মত’, সীমা পাল করলেন, আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে’, ‘আজি বিজন ঘরে’, পরপর দু’টি সংগীত পরিবেশন করলেন। কমল গন্ধা দত্ত পরিবেশন করলেন, ‘আমারে কর মার্জনা’, ছায়া ঘনাইয়াছে’, পরপর দু’টি সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মোহিত করে তুলেন। এরপর মঞ্চে আসেন শ্যামলী পাল- তিনি গাইলেন ‘আজ যেমন করে’, ‘কোলাহল তো বারণ’, ‘তোমায় গান শোনাব’, পরপর ৩টি গান পরিবেশন করেন। এরপর মঞ্চে আসে শুভাগত চৌধুরী-তিনি গাইলেন ‘এ পথে আমি যে’, ‘তুমি কি কেবলই ছবি’। সবশেষে দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করলেন, শুভাগত চৌধুরী ও শ্যামলী পাল ‘যদি জানতেন আমার’। অনুষ্ঠানে মিউজিশিয়ানে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে, কিবোর্ডে- নিখিলেশ বড়–য়া, তবলায়-প্রীতম আচার্য, বাঁশিতে- প্রাণেশ্বর ভট্টাচার্য্য, অক্টোপেডে-রনি চৌধুরী। দীর্ঘ ২ ঘণ্টার অধিক সময়কাল ধরে হল ভর্তি দর্শক রিমঝিম বৃষ্টির মাঝে রবি ঠাকুরের গানগুলো শ্রবণ করেছেন মনের মাধুরী দিয়ে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট