চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

অন্তিম জীবন ও তাঁর সৃষ্টি

নাসরীন জেবিন

২ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪২ পূর্বাহ্ণ

সমাজ ও মনোবাস্তবতার রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য সাধনায় তিনি ছিলেন সৎ পথের সন্ধানী। স্বপ্ন-বিলাসী মন তাঁর ছিল না, বরং সবরকম শোষণ, উৎপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাই সাহিত্য জীবনের প্রথম পর্বে মধ্যবিত্তের উপরি স্তরের আবরণকে তিনি উন্মোচন করেছেন অত্যন্ত সার্থকতার সঙ্গে। শ্রেণিগত স্বরূপ উন্মোচনের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত জীবনের মেকি আবরণটি উদ্ঘাটন সম্ভব বলে তিনি মনে করতেন। কিন্তু দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের দর্শন গ্রহণের পর তিনি কল্পনার অসারতা অনুভব করেন। মধ্যবিত্তের ভাবালুতা অথবা শ্রমজীবী মানুষের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবনার অহংবোধ বিসর্জন এবং সেই সঙ্গে জাতীয় জীবনের মূলধারার সঙ্গে সংযোগ ছাড়া এ সমাজের যে মুক্তি অসম্ভব, তা তিনি বুঝেছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে উত্তর পর্বের সাহিত্যে অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত মধ্যবিত্ত জীবনের রূপায়ণে এই শ্রেণির প্রতি মানিকের সহানুভূতি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নিজ মর্যাদাবোধ ও ভদ্রতাজনিত অন্তঃসারশূন্যতা সম্পর্কে অস্তিত্ববিনাশী মধ্যবিত্তের উপলব্ধিজাত অনুভূতিই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ পর্বের সৃষ্টিকে ঔজ্জ্বল্য দান করেছে, যা ছিল লেখকের অভিজ্ঞতাজাত চেতনার ফসল। জীবনের নানামাত্রিক শোষণের উন্মোচন মানিক সাহিত্যে সর্বদাই উজ্জ্বল।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্য জীবনে মোট আটচল্লিশটি উপন্যাস, একটি নাটক এবং ষোলোটি গল্পগ্রন্থসহ একাধিক সংকলন ও পত্র-পত্রিকায় প্রায় দুই শতাধিক ছোটগল্প রচনা করেছেন। তিনি তেত্রিশটি উপন্যাস তাঁর জীবিত অবস্থাতেই প্রকাশ করেছেন। মৃত্যুর পর চারটি ও অপ্রকাশিত ছিল দুটি। জন্মশতবর্ষ অতিক্রম করে গেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর পরও কেটে গেছে বাষট্টি বছর। আটচল্লিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাহিত্যসেবা করেছেন মাত্র সাতাশ বছর। বাংলা সাহিত্যে তাঁর মতো প্রতিভাধর কথাসাহিত্যিকের যতটা মনোযোগ পাওয়া উচিত ছিল, তিনি ততটা পাননি। বাংলা কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনব এক নতুন পথের যাত্রী। তাঁর হাতেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি মার্কসবাদকে বিশ্বদৃষ্টি দিয়ে অনুভব করেছিলেন। জীবনের শুরুতেই তিনি বুঝেছিলেন আমাদের সমাজ ও সময় রোগাক্রান্ত ও মরণাপন্ন। পরে অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে জীবনের মধ্যপর্বে তিনি উপলব্ধি করেছেন, এ সমাজের রোগমুক্তির জন্য প্রয়োজন সমাজ বিপল্গব। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মানুষের মুক্তির এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত অনুসন্ধান মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। নিম্নবর্ণের মানুষের প্রতি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আকর্ষণ ছিল আশৈশব। তারই প্রতিফলন আমরা তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করেছি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এক মননদীপ্ত বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের জবধষরংস-এর শুধু প্রবর্তকই ছিলেন না, শ্রেষ্ঠ রূপকারও ছিলেন। তিনি মার্কসবাদকে শুধু বুদ্ধি দিয়ে গ্রহণ করেননি, জীবন দিয়ে উপলব্ধি ও হৃদয়ঙ্গম করেছেন। লেখক জীবনের প্রথম পর্বে মধ্যবিত্তের রক্তক্ষয়ী জীবন-যন্ত্রণার স্তরকে ছাপিয়ে ভদ্রতার আবরণ উন্মোচনেই তিনি বেশি আগ্রহী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে লেখক নিজেই বলেছেন-
‘ভদ্র জীবনের সীমা পেরিয়ে ঘনিষ্ঠতা জন্মাচ্ছিল নিচের স্তরের জীবনের সঙ্গে। উভয়স্তরের জীবনের অসাম্যঞ্জস্য, উভয়স্তরের জীবন সম্পর্কে নানা জিজ্ঞাসাকে স্পষ্ট ও জোরালো করে তুলতো। ভদ্র জীবনের অনেক বাস্তবতা কৃত্রিমতার আড়ালে ঢাকা থাকে, গরিব, অশিক্ষিত খাটুয়ে মানুষের সংস্পর্শে এসে এই বাস্তবতার উলঙ্গ রূপ দেখতে পেতাম, কৃত্রিমতার আবরণটা আমার কাছে ধরা পড়ে যেতো।… সেই সঙ্গে সাহিত্যে আবার জাগতো নতুন নতুন জিজ্ঞাসা। জীবনকে বুঝবার জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়তাম গল্প-উপন্যাস। গল্প-উপন্যাস পড়ে নাড়া খেতাম গভীরভাবে গল্প-উপন্যাসের জীবনকে বুঝবার জন্য ব্যাকুল হয়ে তল্লাশ করতাম বাস্তব জীবন।’
শোষিত মানুষের অনুসন্ধান থেকে আত্মপ্রতিষ্ঠা- এই ধারাবাহিকতাই আমরা মানিক সাহিত্যে লক্ষ্য করেছি। নিঃস্ব জীবন যাপন ও সাহিত্য রচনাকে তিনি একে অপরের পরিপূরক করে তুলেছিলেন। তাঁর প্রথম ও শেষ জীবনের রচনাবলিতে জীবন-যন্ত্রণার উপলব্ধিজাত অনুভূতিই আমরা লক্ষ্য করেছি। মানব মনের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই হলো আত্মলড়াইয়ের মধ্যে ক্রমে বিশুদ্ধচারীর অভিযাত্রী হওয়া। লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগেই আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মধ্যবিত্ত জীবন-চেতনার বিরুদ্ধে আত্মসংগ্রামের প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। লেখনীর সাহায্যেই তিনি মধ্যবিত্তের আত্মপ্রতারণাকে আঘাত করেছেন নিমর্মভাবে। সমাজকে মধ্যবিত্তের জীবন চিনিয়ে দিয়ে তা থেকে মুক্তিদানে তিনি হয়ে ওঠেন একনিষ্ঠ। সমাজবাদী তত্ত্বজিজ্ঞাসাই তাকে আরও বেশি সতর্ক ও বিশ্লেষণ-উন্মুখ করে তুলেছিল। জীবনযুদ্ধের ক্ষত নতুন জীবন দর্শনের আলোকে তিনি এভাবেই অবলোকন করেছেন-
‘….প্রথম বয়সে লেখা আরম্ভ করি দুটি স্পষ্ট তাগিদে, একদিনে চেনা চাষি মাঝি, কুলি মজুরদের কাহিনী রচনা করার, অন্যদিকে নিজের অসংখ্য বিকারের মোহে মূর্ছাহত সমাজকে নিজের স্বরূপ চিনিয়ে দিয়ে সচেতন করার। মিথ্যার শূন্যকে মনেরাম করে উপভোগ করার নেশায় মরমর এই সমাজের করতালি গভীরভাবে মনকে নাড়া দিয়েছিল। ভেবেছিলাম, ক্ষতে ভরা নিজের মুখখানাকে অতি সুন্দর মনে করার ভ্রান্তিটা যদি নিষ্ঠুরের মত মুখের সামনে আয়না ধরে ভেঙে দিতে পারি, সমাজ চমকে উঠে মলমের ব্যবস্থা করবে।’
জীবন জিজ্ঞাসার প্রবণতা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৈশোরকাল থেকেই দেখা দিয়েছিল। সে সময় থেকেই তাঁর মধ্যে এক ধরনের ঙনংবংংরড়হ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আর এই বোধই তাঁর ব্যক্তিত্বের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি নিজেই বলেছেন-
‘ছোটবেলা থেকে কেন নামক মানসিক রোগে
ভুগছি, ছোট বড় সব বিষয়ের মর্মভেদ করার অদম্য আগ্রহ যে রোগের প্রধান লক্ষণ।’
১৯৩৬-এর শেষ ভাগ থেকে ১৯৪৪-৪৫ মানিক সাহিত্যের একই সময়কালকে আমরা বাস্তবতার সংকটরূপেই চিহ্নিত করতে পারি- যা তাকে বিপন্ন ও বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪৪-৪৫ সাল পর্যন্ত এই নয়-দশ বছরের সময়কালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যে এমন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, যেখানে চেতন-অবচেতন, প্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃত ব্যক্তি, রাজনীতি, নৈরাজ্য, সমাজ এবং তার ধারাবাহিক ইতিহাস ও নিরবচ্ছিন্ন প্রাগৈতিহাসিক আন্দোলন ও অন্তঃস্রােতে চালিত জীবন ও জগৎ একাকার হয়ে গিয়েছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে নাস্তিকতার অভিজ্ঞতাই আমাদের পাঠকের কাছে চরম মূল্য পেয়ে গেছে। তিনি নিজেই তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ নামক প্রবন্ধে প্রথম জীবনের সাহিত্যের আপেক্ষিত সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বলেছেন-
‘সদিচ্ছা ছিল, নিষ্ঠা ছিল, জীবন ও সাহিত্য থেকেই নতুন সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছিলাম, কিন্তু মার্কসাবদ না জানায় কিছুই করতে পারিনি- এই গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দেওয়া মার্কসবাদকে অস্বীকার করারই সমান অপরাধ। নিজের সাহিত্য সম্পর্কেও এ কথা ঘোষণা করার অধিকার আমি পাইনি। জগতে আমি একা মার্কসবাদ না জেনে সাহিত্যচর্চা করিনি- কারণ সামান্য লেখার সঙ্গে বিশ্ব সাহিত্যে এদের বিপুল সৃষ্টিকে ব্যর্থ আবর্জনা বলে উড়িয়ে দেবার স্পর্ধা আমি কোথায় পাব?’
সমাজ-সতর্ক লেখক মানিকের মনোলোকে সময়ের প্রভাব শেষ পর্বের গল্পগুলোর মাঝে পড়েছিল। ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হানাহানি আমাদের বাংলাভাষী অঞ্চলের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুশক্তি এ দেশে তাদের শাসনের অবসানের সংকেত পেয়েছিল বলেই তারা আরও হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। এর ফলে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনায় তারা মেতে উঠেছিল। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংঘাতের ওপর ভিত্তি করে তখন কলকাতা নগরী যেমন অস্থির হয়ে উঠেছিল তার ওপর ভিত্তি করে মানিক ‘খতিয়ান’, ‘ভালবাসা’, ‘ছেলেমানুষি’, ‘স্থানে ও স্থানে’ প্রভৃতি গল্প লিখেছেন। সে সময়ের দাঙ্গার ভয়াবহ রূপ পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, হানাহানি সংঘাতে উভয় সম্প্রদায়ের মৃত্যু আমরা গল্পগুলোর মাঝে দেখেছি। হিন্দু-মুসলমানের মরদেহ পাশাপাশি পড়ে থেকেছে, যারা এক সময় একে অপরের বন্ধু ছিল, ছিল একই কারখানার শ্রমিক। হিন্দু বা মুসলিম পরিচয়টি মানুষের মুখ্য নয়- একজন ব্যক্তির আসল পরিচয়ই হলো সে মানুষ। সাল্ফপ্রদায়িক বিভেদের কারণে মানুষের প্রতি মানুষের সে নিষ্ঠুরতা মানিক অত্যন্ত বেদনার্ত হৃদয়ে তা তাঁর সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন। আমাদের মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের অবমাননায় মানিক প্রশ্ন রেখেছিলেন এভাবেই- মড়াপচা গন্ধ শুঁকে বুঝতে পারছ কোনটা হিন্দুর, কোনটা মুসলমানের?
এ উক্তি আমাদের মানবতাবোধের চেতনাকে স্পর্শ করে। পঞ্চাশের মন্বন্তরে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়। দুর্ভিক্ষের করুণ দৃশ্য কতটা বেদনাহত হতে পারে ‘ছিনিয়ে খায়নি কেন’ গল্পের মাঝে দেখিয়েছেন। ১৯৪৬ সালের ২৯ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ডাক-এর পরেই এসেছিল কলঙ্কিত দিন। ১৬ আগস্টের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম, ইংরেজরা তখন শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু হলো না বরং তাদের ষড়যন্ত্রে সংগ্রাম শুরু হলো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। সে ২৯ জুলাই সাধারণত হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল সেই হিন্দু-মুসলমানই আবার ১৬ আগস্ট একে অপরের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়। সেই ঘৃণিত দাঙ্গা অনেকদিন ধরে চলেছিল। বাঙালির ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার পীঠস্থান যে কলকাতা, তা যেন হিংগ্র মানুষের দাবানলে পরিণত হয়েছিল। এতে হিন্দু-মুসলমান কারোরই লাভ হয়নি- লাভ হয়েছিল ইংরেজ শাসকদের। তারা দেশকে দু’ভাগ করে আরও বহুদিন এই বিভেদের সুযোগ নিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব বজিয়ে রেখেছিল। এই দাঙ্গার পটভূমির ওপর ভিত্তি করে লেখক আরও গল্প লিখেছিলেন।
ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে সমাজে তারা আর সম্মানিত হননি। স্বাধীনতার কোনো সুফলই তারা পাননি বরং অর্থনৈতিক পীড়নের সম্মুখীন তারা হয়েছেন। অপরদিকে রাজনীতিতে যারা স্বার্থপর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, তারাই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করেছে। এ সময় সমাজে একদিকে যেমন ভাঙন দেখা দিয়েছিল, অন্যদিকে তেমনি এগিয়ে যাওয়ার লড়াইও চলেছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার সাহিত্য জীবনের শেষ ভাগে এসে অস্তিত্বের পীড়ন ও অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাননি। তিনি জীবনের শেষ ভাগে এসে ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। জীবন-যন্ত্রণাকে তিনি যেন আর টেনে নিয়ে যেতে পারছিলেন না। জীবনকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যতবার তিনি দেখেছেন, ততবারই বাস্তবের কাঠিন্যে ক্লেদাক্ত হয়েছেন। তাঁর মানবাত্মার ক্রন্দনে শ্লেষ, দুঃখ, যন্ত্রণা, তিক্ততা, ক্ষোভ, আশা-হতাশা, ঘৃণা, ভালোবাসা অনুভূতি সবই ধরা পড়েছে। তাই ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সের মধ্যে ত্রিশের দশকের শূন্যতা, ক্ষয়, চলিল্গশের বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম সবই তাকে আশাহীন ও মোহশূন্য করে দিয়েছিল। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষক্ষ, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন, শাসক ও শোষকের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়েই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গল্পকে বাস্তবমুখী করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ জীবনের গল্পগুলোর মনোজগতে সূচিত হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। সমাজবাদী রাজনীতির প্রভাবে নিম্নবর্গের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা, দ্রোহী মানসিকতা ও স্বাধিকার সত্তা শেষ পর্বের গল্পগুলোকে মহিমান্বিত করেছে। সময় ও সমাজগর্ভে শিকড়সন্ধানী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ছোটগল্পের ধারায় এক অনন্য নতুন পথের দিশারী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট