চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উত্তরমেঘের ভ্রাম্যমাণতা

দেবযানী বসু

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

বইপত্র
২০১৭ র জুলাই সংখ্যার ‘যদিও উত্তরমেঘ’ নামের একটি ছোট পত্রিকার সঙ্গে মোলাকাত হল। প্রকাশক জিললুর রহমান। এতজন কবি মিলে এত সুন্দর করে ভেবেছেন, যে ভাবনাটাকে আমরা আন্তর্জাতিক ভাবনা বলেই জানি। বিশ্বায়নের দ্বার খুলে যাওয়ায় সহজেই জেনে যাচ্ছি আমেরিকান কবিরা এসব ভাবনা আগেই করে রেখেছে। আর সব দেশের কবিদের সমস্যাগুলো প্রায় একরকম। জানি কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কবি প্রাবন্ধিকরা যুগে যুগে ভাবনার পরিচয় রাখবেন। এতে করে নিজেদের অবস্থান যাচিয়ে নেওয়া যায়। ‘কবিতার ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কবি’ সম্বন্ধে বলতে কবিরা টাইম মেশিনে চড়ে বসেছেন। প্রত্যেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে অনুসরণ করে বলেছেন কবিতা কি ছিলেন, কি আছেন কবিতা, কবিতা কি হইবেন।
আমরা কবিতা কানে গুঁজে কবিতা খুঁজতে বেরিয়েছি। যা পাচ্ছি যা পড়ছি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না। একে অপরের কবিতার প্রতি সন্দেহ পোষণ করছি। আবার প্রবীণ ও নবীন কবির কবিতাবোধে বিপুল তরঙ্গময় দূরত্ব আর সংঘাত।
একটা সমাধানে এসে সবাই পৌঁছেছেন যে যুগ যুগ ধরে কবিতার ভাষা ও রীতির পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। এখন যারা লেখালেখি করছি তখন আর তারা থাকব না। আর ভবিষ্যতের কবিতা এখন যদি লিখে ফেলি সেটিও তো এখনকার কবিতাই হবে, কালানুযায়ী ভবিষ্যতের হবে কি করে। সব কবি ভবিষ্যতের কবিতার পথ বাতলে দিতে পারেন না। কোনো কোনো কবি এমন কিছু সংকেত রেখে যান লেখায় যা পরবর্তী কবিদের কেউ কেউ তার অনুসরণ করে নতুন কবিতারীতির প্রচলন করতে পারেন। কারণ কবিতা বিভিন্ন ঘরানার পরম্পরা। একজন বারীন ঘোষাল একজন মলয় রায় চৌধুরী একজন শম্ভু রক্ষিত একজন অমিতাভ মৈত্র ছিলেন/আছেন বলেই আজ শূন্য দশকের কবিরা নিজের নিজের স্বাতন্ত্র বজায় রাখছেন।
জীর্ণ বাস পরিত্যাগ করে আত্মা যেমন নব কলেবর ধারণ করতে চায় তেমনি কবিতাও খোলনলচে বদলে ফেলবে। এখনকার সরকারি যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে আমাদের ভাগ্যে ভবিষ্যতের কবিদের কপালে যা নাও থাকতে পারে।
প্রাবন্ধিক শাহিদ হাসান বলেছেন : কবিতা অনিবার্যভাবে পাল্টে যাবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর হবার সম্ভাবনা বেশি।
খুব ভালো লাগলো এই ভবিষ্যদ্বাণী। আমি বলছি ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে, এমন সফ্টওয়্যার তৈরি হবে যে কবিতার ভাষা ও নমুনা যন্ত্রে ইনপুট করা মাত্র কম্পিউটার বা রোবট কবিতা লিখে দেখাবে। হয়তো শ’খানেক জীবনানন্দধর্মী, মলয় রায় চৌধুরীধর্মী, অলোক বিশ্বাসধর্মী কবিতা লিখে দেবে কম্যান্ড ও ডিম্যান্ড অনুযায়ী। এর জন্য কাউকে আর ভানুসিংহ ছদ্মবেশ নিতে হবে না। অথবা কোনো নতুনতম কবিতা লিখে দেখাবে। আশ্চর্যান্বিত হয়ে লাভ নেই।
আমাদের বঙ্গীয় সাহিত্য সবটুকুই তো বৈদেশিক সাহিত্য থেকে ধার করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওয়ার্ডসওয়ার্থ কীটস প্রমুখ রোমান্টিক কবিদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। পোস্ট মডার্ন, পাওয়ার পোয়েট্রি, ম্যাজিক রিয়ালিজম ইত্যাদিও বৈদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সাহিত্যতে অ্যাংরি ইয়ং মেনদের কবিতা নতুন যুগের সৃষ্টি করল। জন অ্যাসবেরি, মার্গারেট অ্যাটউড, সল বেলো, রিচার্ড ব্রটিগান প্রমুখ হাজার কবি কবিতা লিখেছেন। এই ঢেউ বাংলা সাহিত্যে এসে পৌঁছেছে স্বাভাবিকভাবেই। আশির দশকে বাংলা কবিতায় ব্যাপক ভাষাবদলের প্রভাব দেখা যায়।
এখন শূন্য দশক পেরিয়ে প্রথম দশকের কবিতায় আবেগের ভাটা পড়েছে সামান্য। আবেগ নামক সোনায় খাদ মিশিয়ে বেশ শক্তপোক্ত কবিতা গড়ে তোলা হচ্ছে যাকে বিনির্মাণবাদী কবিতা শৈলী বলা যায়। বয়স্ক
প্রাচীনপন্থী এবং নব্য প্রাচীনপন্থী উভয়েই গেল গেল রব তুলছেন। তবে খুব ছোট্ট একটা পয়েন্ট তৈরি হয়ে গেছে। ঐ বিন্দুতে কিছু কবি কাজ করে চলেছেন। একঘরে হবার ভয়ে বেশির ভাগ কবি এ পথ মাড়ায় না। তারা জনগণপ্রিয় কবি নন। তারা সরকারের দ্বারা আদৃত কবি নন। এদের কবিতার মধ্যে আয়রনি, প্লেফুলনেস, ব্ল্যাক হিউমর, হাইপাররিয়েলিটি, প্যারানোইয়া, ফ্র্যাগমেন্টেশন ইত্যাদি কতোরকম বৈশিষ্ট্য আছে।
কে পড়বে আপনার কবিতা, কোন ধরনের আলোয় এনলাইটেন্ড তিনি এসব দিক লক্ষ্য করে কি কবিতা সবসময় লেখা যায়? যায় হয়তো। জীবনপ্রণালীর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাই কবিতার ভাষা ও রীতি পাল্টে যায়। আমরাও বলতে পারি আমার সন্তান যেন থাকে কবিতাতে। আমাদের কবিতার সংকেত ধরে আসবে ভবিষ্যতের কবি। খুব সুন্দর করে বিষয়টিকে মান্যতা দিয়ে লিখেছেন কবি তথা প্রাবন্ধিক শ্রী শেখর দেব, শ্রী তুষার গায়েন, অনিন্দ্য রায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট