চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

মানুষের চন্দ্র বিজয়

জাহাঙ্গীর সুর

৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর ৩.৭৮ সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। কিন্তু পৃথিবীর একমাত্র এই কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে মানুষের কৌতূহল এতটুকু কমেনি। ২০ জুলাই ১৯৬৯ ‘সুন্দর এই পৃথিবী’র বাইরে ভিন্ন কোনো মহাজাগতিক বিশ্ব হিসেবে চাঁদে প্রথম পা পড়েছিল মানুষের। চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নিল আর্মস্ট্রংয়ের মতে, ‘একজন মানুষের জন্য সেটা ছিল ছোট্ট একটা পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য ছিল বিরাট অগ্রগতি।’ চলতি মাসের ২০ জুলাই চন্দ্রজয়ের ৫০ বছর পূর্তি নানাভাবে উদযাপন করেছে বিশ্ববাসী।
চাঁদ আমাদেরই একটা অংশ। এবং সে কারণেই মানুষের পূর্বজাত বা আদিমানবেরা চাঁদের সঙ্গে মনের মিলও খুঁজে পেয়েছিলেন। চাঁদের সৃষ্টি নিয়ে অনেক তত্ত্ব আছে। উল্লেখযোগ্য একটি ভাবনা হলো: সূর্য সৃষ্টি হওয়ার পর আদি সৌরজগতে ‘থিয়া’ নামে একটি গ্রহ ছিল। আকারে মঙ্গলগ্রহের মতো। পৃথিবীর সঙ্গে সেই গ্রহের সংঘর্ষে চাঁদের জন্ম হয়েছিল।
আজ আমরা মঙ্গলগ্রহে এমনকি আরো দূরের গ্রহে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখছি, সেই সাহসের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। সেদিন আন্তর্জাতিক সময় রাত ৮টা ১৭ মিনিটে চাঁদে অবতরণ করে মনুষ্যবাহী পৃথিবীর প্রথম নভোযান ‘অ্যাপোলো-১১’। এর ভেতর ছিলেন কমান্ডার নিল আর্মস্ট্রং ও অবতরক যানের পাইলট এডউইন বাজ অলড্রিন। ওপরে মূল চন্দ্রযান উড়াচ্ছিলেন তাদের সহযোগী ক্রু মাইকেল কলিন্স। এর ছয় ঘণ্টা পরে প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের পৃষ্ঠে পা রাখেন আর্মস্ট্রং। ১৯ মিনিট পরে তাকে অনুসরণ করেন অলড্রিন।
চাঁদে মানুষ পাঠানো সহজ কাজ ছিল না মোটেও। অ্যাপোলো প্রকল্পে বিশ্বের চার লাখ মানুষের নিরলস শ্রম ও মেধার গৌরব জড়িয়ে রয়েছে চন্দ্রজয়ের ইতিহাসের সঙ্গে। এদের মধ্যেই পড়েন তিন নভোচারী- আর্মস্ট্রং, অলড্রিন আর কলিন্স। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি মহাকাশ বন্দর থেকে স্যাটার্ন ফাইভ রকেটে করে তাদের ওড়ানো হয়েছিল, ১৬ জুলাই। চারদিনের মাথায় অ্যাপোলো-১১ নভোযানে চেপে তারা পৌঁছে যান চাঁদের কক্ষপথে। আঙিনায় নামার জন্য মূল নভোযান থেকে আলাদা হয়ে যান দুজন; ‘ইগল’ নামের অবতরক যানে চড়ে ১৩ মিনিটেই তারা ছুঁয়ে ফেলেন চাঁদের মাটি। কলিন্স কক্ষপথেই ঘুরতে থাকেন, অভিযান শেষে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিনকে তো ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা ‘আপন বাড়ি’ পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন ২৫ জুলাই। কলিন্সের মতো মোট ছয়জন নভোচারীর ‘গোপন যাতনা’- তারা চাঁদে গিয়েও নিরাপদে নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাঁদের মাটিতে নামতে পারেননি।
পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসাবে চাঁদে পা রাখা আর্মস্ট্রং তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন, মানুষের এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপটি মানব সভ্যতাকে বহুদূর এগিয়ে রাখল। আর ইগল চন্দ্রযান থেকে বেরিয়ে অলড্রিন চাঁদের বিস্তীর্ণ সৌন্দর্য দেখে বলেছিলেন, ‘অভাবনীয় নির্জনতা’।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি চাঁদে ফোন করেছেন। ল্যান্ডফোনে তিনি আর্মস্ট্রংদের সঙ্গে যে আলাপ করেছিলেন, তাও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল টেলিভিশনে। নিক্সন নভোচারীদের বলেছিলেন, পৃথিবীবাসী তাদের জন্য গর্বিত।
যদি ইগল অবতরণকালে বিধ্বস্ত হতো, তাহলে নির্ঘাত মারা যেতেন কিংবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হতেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। আর সেরকম হলে প্রেসিডেন্ট নিক্সন কী বক্তব্য রাখতেন, তাও আগে থেকে ঠিক করা ছিল। নিক্সনের নির্দেশনা মোতাবেক ভাষণলেখক উইলিয়াম স্যাফায়ার সেই বক্তব্য লিখে রেখেছিলেন। স্যাফায়ার নিজেই ১৯৯৯ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেন। লিখিত ভাষ্য অনুযায়ী, নিক্সন তাহলে বলতেন, ‘নিয়তিই লিখে রেখেছিল, যারা শান্তিতে চাঁদে অভিযানে যাবে, তারা চিরশান্তিতে চাঁদেই রয়ে যাবেন।’
চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখা সম্পর্কে বাজ অলড্রিন বলেন, ভরা পূর্ণিমার রাতে পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় দেখায়, চাঁদের মাটি থেকে আমাদের এই পৃথিবীকে তার চেয়ে ৪ গুণ বড় দেখায়।
চাঁদ থেকে আমি পৃথিবীকে দেখেছি নিকষ কালোর ভেতর যেন দীপ্তিমান পাথর। তিনি আরো বলেন, আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদের মাটির কোনো মিল নেই। ওখানে প্রাণের কোনো চিহ্নমাত্র নেই।
পুরো ভূমি যেন পাউডারের সাগর। এছাড়া ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাথর-নুড়িপাথরের চাদর যেন বিছানো আছে চাঁদের গায়ে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট