চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছোটদের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু

সাদ আব্দুল ওয়ালী

৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

এই তো সেদিন পর্যন্ত মানুষ জানত না যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু’র আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষের ধারণা ছিল উদ্ভিদ জড় পদার্থ মাত্র। তিনিই লক্ষ্য করেন, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের মতো উদ্ভিদেরও রয়েছে আবেগ ও সুখ-দুঃখের অনুভূতি। তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন, জীবদেহের মত উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে এবং রয়েছে অসীম প্রাণশক্তি।
বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করলেও পদার্থ বিজ্ঞানের পাশাপাশি জীব বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে বুঝতে সক্ষম হলেন, বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে। ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র। এখানে তাঁর বক্তৃতায় বিষয় ছিল ‘জীব ও জড়ের ওপর বৈদ্যুতিক সাড়ার একাত্বতা’। সেখানে জীব ও জড়ের সম্পর্ক বিষয়ে ব্রিটিশ এসোসিয়েশনের ব্রাডফোর্ড সভায় বক্তৃতা দিলেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘জবংঢ়ড়হংবং রহ ঃযব ষরারহম ধহফ হড়হ ষরারহম’। ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হল তাঁর দুটি গ্রন্থের মধ্যে তিনি প্রমাণ করলেন উদ্ভিদ বা প্রাণীকে কোনভাবে উত্তেজিত করলে তা থেকে একইরকম সাড়া মেলে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা তাঁর আবিষ্কার সম্বন্ধে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীগণ ধীরে ধীরে গবেষণার সত্যতাকে স্বীকার করে নিচ্ছিলেন। দেশে ফিরেই স্যার বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র গবেষণা শুরু করলেন। বিভিন্ন অবস্থায় উদ্ভিদ কিভাবে সাড়া দিতে পারে তা প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বেগুন, ফুলকপি, গাজর, মূলা, বাদাম, শালগম সহ বেশকিছু ধরনের উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এসময় তিনি উদ্ভিদের জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। গবেষণার এ পর্যায়ে তিনি উদ্ভাবন করলেন তাঁর বিখ্যাত যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ। তিনি উদ্ভিদের বৃদ্ধিপ্রক্রিয়া শনাক্ত করার জন্য ক্রেস্কোগ্রাফ নামে এক বিশেষ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। ১৯১৪ সালে তিনি ইংল্যান্ড গেলেন। এবার যাত্রার সময় তিনি তাঁর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সঙ্গে নিয়ে গেলেন লজ্জাবতী ও বনচাঁলড়াল গাছ। এ গাছগুলো সহজে সাড়া দিতে পারে। তিনি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, এছাড়া রয়েল সোসাইটিতেও তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করলেন, জীবদেহের মতো বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, তারাও আঘাতে উত্তেজনায় অনুরণিত হয়। ১৯১০ সালের দিকে বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ‘জীব ও জড়ের সাড়া’(জবংঢ়ড়হংব রহ ঃযব খরারহম ধহফ ঘড়হ-খরারহম) নামে বই আকারে প্রকাশ করেন। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর গবেষণা স্বার্থক হলো। তাঁর গবেষণার ফলাফল সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। তিনিই সর্বপ্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুধাবন করেন এবং তা প্রমাণ করতেও সক্ষম হন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট