চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবুজে মিশে থাকে সোনা-কপালি হরবোলা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চাবাগানের বাংলোগুলো গাছগাছালিতে পূর্ণ। তার কোনো একটিতে দুপুর নির্জনতা। উত্তাপ নিয়ে দীর্ঘতর হচ্ছে দুপুর। ধেয়ে আসা বাতাসের দেখা নেই। গরম তার সীমাকে অতিক্রম করেছে তখন। একটু স্বস্তির জন্য খোলা বারান্দায় আসতে অদূরের ডাল কেঁপে কেঁপে ওঠে। সেই সঙ্গে মধুর ডাকও। কৌতূহলী চোখ ওদিকে তাকাতেই কিছুই তেমন দেখা যায় না; কেবল গাছের পাতা-ডালগুলো নড়ে ওঠা ছাড়া। রহস্যে ঢাকা সময় গড়ায়। বস্তুটিকে দেখার আগ্রহ ক্রমশই অদম্য হচ্ছে! কিছুক্ষণ পরে ঘনপাতাময় স্থান থেকে শুকনো ডালে গিয়ে বসতেই রহস্য উন্মোচন হলো। সে আর কেউ নয়; সবুজের মধ্যে মিশে থাকা এক সবুজময় পাখি। তার নাম ‘সোনা-কপালি হরবোলা’। অবশ্য তাকে ‘পাতা বুলবুলি’ও বলা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে তাকে এড়ষফবহ-ভৎড়হঃবফ খবধভনরৎফ এবং তার বৈজ্ঞানিক নাম ঈযষড়ৎড়ঢ়ংরং ধঁৎরভৎড়হং।
এরা আমাদের দেশের ‘সুলভ আবাসিক পাখি’ ঠিকই। তবে প্রায়শই পাতার সবুজে মিশে থাকে বলে তাকে গাছের ডালে শনাক্ত করা কঠিন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, এরা ঈযষড়ৎড়ঢ়ংরং গণের পাখি। পৃথিবীতে ৮ প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে যে ৩টি প্রজাতির পাওয়া যায়, তার মধ্যে ‘এড়ষফবহ-ভৎড়হঃবফ খবধভনরৎফ’ একটি। এরা ছোট আকারে বৃক্ষচারী পাখি। দেহ প্রধানত সবুজ। ঠোঁট সরু ও বাঁকা।
তিনি আরো বলেন, তাদের ঠোঁটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ফুলের মধু সহজে খাওয়ার জন্য তাদের ঠোঁটের আগায় খাঁজ থাকে। তাদের নাকের ছিদ্র ডিম্বাকার। ডানাগুলো গোলাকার ও পা ছোট। পাখিটির স্বভাব ও খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘এড়ষফবহ-ভৎড়হঃবফ খবধভনরৎফ’ গুলো চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন এবং বৃক্ষবহুল অঞ্চলে বিচরণ করে। এর একা থাকে না; তবে জোড়া বা ছোট দলে বিচরণ করে। গাছের ঘন পাতা বা উঁচু বনে এরা খাবার খায়। তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে- নানান জাতের পোকা, ফুলের মধু ও রসালো ফল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো- তাদের গলায় সুমিষ্ট সুর রয়েছে। এরা মাঝে মধ্যে অন্যপাখির ডাক অনুকরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। জানুয়ারি-আগস্ট ‘এড়ষফবহ-ভৎড়হঃবফ খবধভনরৎফ’দের প্রজনন মৌসুম। তখন এরা বনের সুবিধাজনক গাছগুলোর ডালে ঘাস, পাতা ও শেওলা-মাকড়সার জাল দিয়ে বেঁধে হালকা বাটির মতো বাসা বানিয়ে দু’টি থেকে তিনটি ডিম পাড়ে বলে জানান এ প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট