চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হাসির রাজা গোপাল ভাঁড়

সবুজ অরণ্য

৩০ জুলাই, ২০১৯ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

গোপাল ভাঁড়। কে না চেনে তাকে! ছোট থেকে বুড়ো সবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব গোপাল ভাঁড়। তার নাম শুনেই হেসে ফেলেন অনেকে। অনেকে রসিক কাউকে গোপাল ভাঁড় বলে সম্বোধনও করে বসেন।
তবে ভাঁড় নয় গোপালের পদবি ছিল ‘নাই’। এমনটি দাবি করেছেন নগেন্দ্রনাথ দাস নামক জনৈক ব্যক্তি। কেননা ভাঁড় কোনো পদবি নয়। এ ছাড়া তিনি নিজেকে গোপাল ভাঁড়ের বংশধর বলেও দাবি করছেন। তবে এসব দাবির আগে প্রশ্ন উঠতে পারে বাস্তবিকই কি ছিলেন গোপাল ভাঁড়? কে এই গোপাল? নাকি সবই জনশ্রুতি, লোকমুখে জন্ম নেয়া কাহিনী!
এসব প্রশ্নে সদুত্তর ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত করে দিতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। তবে বিতর্ক যতই চলুক- গোপাল ভাঁড়ের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকুনও।
গোপাল ভাঁড়ের গল্প থেকে যা জানা যায়, অষ্টদশ শতাব্দীতে ভারতের নদিয়া জেলার প্রখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় বিদূষক ছিলেন গোপাল। রাজা তাকে তার সভাসদদের মধ্যকার নবরত্নদের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এমনটিই বলছেন বেশ কিছু ঐতিহাসিক। সেই আমলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের সামনে নির্মিত তার একটি প্রতিকৃতি ভাষ্কর্য এখনও সেখানে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে।
পরে কৃষ্ণনগর পৌরসভার সীমানায় ঘূর্ণিতে গোপাল ভাঁড়ের নতুন মূর্তি স্থাপিত হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক দিয়েছেন ভিন্নমত। তাদের মতে, গোপাল নামে কেউ ছিল না। তারা বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় অতিসুচতুর, বিজ্ঞ ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল। তাদের সম্মিলিত রূপই জনগণের মাঝে গোপাল ভাঁড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবে এ বক্তব্যটিও মানছেন না অনেক প-িত। কিন্তু এসব বিতর্কের মাঝে সরাসরি কেউ যদি বলেন, ‘গোপাল ভাঁড় ছিলেন এবং আমি তার বংশধর!’ তা হলে সে বিষয়টি বিতর্ককে না থামিয়ে তার আগুনে ঘি ঢালবে নিশ্চিত। বেশ কয়েক বছর আগে নিজেকে গোপাল ভাঁড়ের বংশধর বলে দাবি করেছিলেন নগেন্দ্রনাথ দাস নামক জনৈক ব্যক্তি। এ নিয়ে তিনি ‘নবদ্বীপ-কাহিনী বা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়’ নামে একটি বই লিখে ফেলেন। এ বইয়ে তিনি দিয়েছেন গোপাল ভাঁড়ের ইতিহাস ও নতুন কিছু তথ্য। তিনি জানাচ্ছেন, ‘ভাঁড়’ নয় গোপালের পদবি ছিল ‘নাই’।
গোপাল ভাঁড়ের দাদার নাম আনন্দরাম নাই। তিনি ছিলেন এক ধর্মীয় সাধক। আর গোপালের বাবার নাম দুলালচন্দ্র নাই, যিনি ছিলেন পেশায় নরসুন্দর। নরসুন্দরের ছেলে হওয়াতেও গোপালের বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে নদিয়ারাজ তার সভার অন্যতম রত্ন হিসেবে স্থান দেন গোপালকে। তখন থেকে গোপালের উপাধি হয় ‘ভা-ারী’। একসময় ‘ভা-ারী’ শব্দটি বিকৃত হয়ে দাঁড়ায় ‘ভাঁড়’! এভাবেই সমাজ, রাষ্ট্রে বিখ্যাত হয়ে ওঠে গোপাল ভাঁড় নামটি। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, গোপাল ভাঁড়ের কোনো সন্তান ছিল না, তা হলে তার বংশধর আসবে কী করে? সে প্রশ্নের উত্তর নগেন্দ্রনাথ দাস তাই বইতে দিয়েছেন। তার দাবি, কোনো পুত্রসন্তান না থাকলেও গোপাল ভাঁড়ের একটি কন্যা ছিলেন। যার নাম ‘রাধারাণী’। তবে রাধারাণী নয় নিজেকে গোপালের বড় ভাই কল্যাণের উত্তরসূরি বলে বক্তব্য দেন নগেন্দ্রনাথ। নগেন্দ্রনাথের এসব দাবি অকাট্ট প্রমাণিত নয় বলে অনেকে তা মেনে নেয়নি। তবে কমিক বই ও অ্যানিমেটেড কার্টুনে গোপাল ভাঁড়ের উদ্ভট কীর্তিকলাপ আর তীক্ষœবুদ্ধি যে যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে প্রথিত থাকবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট