চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রত্যাবাসন শুরু আজ

শর্ত মানলেই ফিরবে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

হ প্রথম দিন যাবে ৩শ রোহিঙ্গা
হ প্রস্তুতির মধ্যেও অনিশ্চয়তা
হ ৬১ এনজিওর আপত্তি
হ ঢাকা অফিস

নিজ দেশে ফেরা নিয়ে আবারও সংশয় তৈরি হয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে। শর্ত মানলেই কেবল মিয়ানমারে ফিরবে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন কমিশন দল মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্বাক্ষর নেওয়ার কাজ শেষ করেছে। তবে, বিপত্তি হল বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তােদর শর্ত পূরণের আগে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনিচ্ছার কথা জানিয়েছেন উখিয়ায় ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা খিন মং।

এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণ উদ্যোগ বানচাল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফেরত কার্যক্রমের শেষ মুহূর্তে এসে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি ৬১টি এনজিওর যৌথ বিবৃতিতে তালগোল পাকানোর অবস্থা হয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। তবে প্রত্যাবাসন সংশিষ্টরা পূর্বনির্ধারিত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবারকে লক্ষ্য করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার দিনের যেকোনো সময় রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও গ্রহণ করতে মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর খবরে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

একইসাথে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করা সংগঠন রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। খিন মং জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে স্বাভাবিক। ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে যে, তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে কিনা। জানা গেছে, আজ (২২ আগস্ট) প্রথম দফায় ৩ হাজার ৪শ ৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সাক্ষ্য নিয়েছে ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গত দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে মিয়ানমারের তদন্ত টিম। প্রত্যাবাসন নিয়ে গত মঙ্গলবার শালবন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য নেওয়ার নির্ধারিত সময়েও ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে কেউ উপস্থিত হননি। পরে প্রত্যাবাসন কমিশন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কাছে যান । সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন ও সাক্ষ্য নেন তারা। এসময় তাদের বোঝানো হয় মিয়ানমার তাদের দাবী মেনে নিয়েছে। এদিন ২১ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গার মতামত নেয় ইউএনএইচসিআর। যদিও মতামত নেওয়া রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে সম্মত কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানাননি তারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এ বিষয়ে বলেন, সব ঠিক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। প্রথম দিন যাবে ৩ ‘শ রোহিঙ্গা। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নাফ নদী দিয়ে না হয়ে প্রত্যাবাসন হবে স্থল পথ দিয়ে। তিনি আরও জানান, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বলছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়ে এবং সকল দাবি মেনে নিয়ে তাদের ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু এই কথাগুলো বোঝানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের এই কথা বোঝানো অব্যাহত রেখেছি। তারা হয়তো এক সময় বুঝে নিজ উদ্যোগে তাদের দেশে চলে যাবেন। এর আগে তাদের কোনো মতেই জোর করে পাঠানো যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের ছাড়পত্র দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার ৪শ ৫০ জন রোহিঙ্গার যাচাই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৮ দলের সদস্যরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত নিয়েছে। রোহিঙ্গারা বলছেন, দাবি-দাওয়া মানলেই তারা কেবল মিয়ানমারে ফিরবেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা না হলে তারা যাবেনা। এ কারণে তালিকাভুক্তদের অনেক রোহিঙ্গা গা ঢাকা দিয়েছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. কামাল বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সনদপত্র এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আমার মিয়ানমারে যাব না। আগে এসব নিশ্চিত করা হোক তখন যাব।’ বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছৈয়দ আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘মিয়ানমার আমার জন্মভূমি। আমি ওখানে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু অনিরাপদ হয়ে নয়। বারবার আমাদের ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আমরা ফিরব না। এভাবে হলে হবে না। দেখা যাক। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে নিজ দেশ মিয়ানমারেই ফিরে যাব।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট