চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘শর্ত পূরণ না হলে স্বদেশে ফেরত যাবনা’

টেকনাফের শালবাগান ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ

নিজস্ব সংবাদদাতা , টেকনাফ

২১ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফের শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের মতামত সাক্ষাতকার গ্রহণের কার্যক্রম চলেছে। ২১ জন রোহিঙ্গার মতামত নেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। রোহিঙ্গাদের মতামত নেন জাতিসংঘ উদ্বাস্ত বিষয়ক হাইকশিনের (ইউএনএইচসিআর) কর্মকর্তা এডম নর্ড এবং টেকনাফের শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) মো. খালেদ হোসেনের নেতৃত্বে ১০টি গ্রুপ। নয়াপাড়া শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সিআইসি কার্যালয়ের পাশে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যাবে, তাদের এসব ঘরে রাখা হবে। এ ছাড়া ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। টেকনাফের ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকায় কাদের নাম রয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। জানা যায়, মিয়ানমার ১ম দফায় ২২ আগস্ট ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। তবে

রোহিঙ্গারা এসব প্রতিনিধিকে শর্ত পূরণ না হলে যাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তারা ফিরতে রাজি। রোহিঙ্গাদের শর্তের মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-জমি ফিরিয়ে দেয়া, মিয়ানমারে আটককৃতদের মুক্তি, হত্যা, গণধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের বিচারসহ নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া ইত্যাদি। অনেক রোহিঙ্গা বিনা শর্তে ফিরতে রাজি থাকলেও তাদের নেতাদের ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেনা।

ক্যা¤েপ মতামত দিতে আসা রশিদ আমিন বলেন, ‘মতামত দেয়ার কথা সংস্থার প্রতিনিধিরা আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসেন। পরে ২৬ নম্বর ক্যা¤েপ অনুষ্ঠিত হয় মতামত গ্রহণ। নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তাসহ যে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো না মানলে আমরা কখনও মিয়ানমার ফেরত যাবোনা। মিয়ানমার আমাদের শনাক্ত করেছে, সেটা ঠিক আছে’।
শালবাগান ক্যা¤েপর ডি-২ বাসিন্দা মো. রিয়াজ বলেন, ‘আমরা সেই পুরনো দাবিগুলো তুলে ধরেছি। নাগরিকত্ব ও মিয়ানমারের ১৩৫ জাতি রয়েছে তাদের মধ্যেও আমরা নেই। সেই দাবিগুলো পূরণ হলে ফিরব’।
আরেক রোহিঙ্গা রুহুল আমিন বলেন, ‘দাবি না মানলে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব ছাড়া সেখানে গেলে আবারো সহিংসতা ঘটনা হতে পারে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দিয়েছে। এটা মিয়ানমারের একটা চক্রান্ত’।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নিজ নিজ ক্যাম্পের ইনচার্জ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও কাজ করছে। তবে কতজনকে প্রত্যাবাসন করা যাবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছেনা’।
ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গারা যদি স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয় তাহলে আমরা চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবো। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করবোনা।

শেয়ার করুন