চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

গাছের এম্বুলেন্স

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ মে, ২০১৯ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে চেন্নাইয়ে শুরু হল, গাছের এম্বুলেন্স পরিষেবা! উদ্বোধন করলেন উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নায়ডু। পৃথিবী যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, তাতে বাঁচার জন্য দূষণ কমানোর পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে গাছের সংখ্যা বাড়ানোই অন্যতম জরুরি পথ বলে মেনে নিয়েছে বিশ্বের সমস্ত পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা। এখন যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী, তাতে প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে হাতে আর খুব বেশি সময়ও নেই বলেই জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। এই সময়ে শুধু নতুন গাছ লাগানো নয়, পুরোনো গাছের যত্ন এবং পরিচর্যাও সমান প্রয়োজন।
কিন্তু গাছের জন্য এম্বুলেন্স কী রকম! কী ভাবেই বা কাজ করবে সেটি?
জানা গেছে, নানা সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপড়ে যায় বহু গাছ। কখনও আবার নির্মাণের কাজে বাধা তৈরির ‘অপরাধে’ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয় তাদের। এই এম্বুলেন্স তাদেরই তুলে নিয়ে গিয়ে নতুন করে মাটিতে পোঁতার ব্যবস্থা করবে। সম্প্রতি ঘূর্ণীঝড় ফণীর তাণ্ডবে ওড়িশা-সহ দাক্ষিণাত্যের পূর্ব উপকূল জুড়ে কয়েক লক্ষ বড় গাছ উপড়ে গেছে। সেই গাছগুলিকেই তুলে নিয়ে গিয়ে ফের নতুন কোনও জায়গায় বসানোর চেষ্টা করা হবে।
আইডিয়াটি প্রথম এসেছিল পরিবেশ আন্দোলনকারীকে আবদুল ঘানির মাথায়। ভারতের সবুজ মানুষ, গ্রিন ম্যান অফ ইন্ডিয়া বলে পরিচিত আবদুল চল্লিশ লক্ষ গাছ পুঁতেছেন দেশে। আরও অনেক সামাজিক আন্দোলনে তাঁর নাম সামনে এসেছে বারবার। একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে তিনি এই প্রস্তাব রাখলে, কাজ শুরু হয় বিষয়টি নিয়ে।
উপড়ে যাওয়া গাছকে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় লাগানোর পাশাপাশি, এই এম্বুলেন্স বিভিন্ন জায়গায় বয়ে নিয়ে বেড়াবে নানা গাছের বীজও। শহরের মানুষদের মধ্যে গাছ লাগানো-সংক্রান্ত সমস্ত রকম সচেতনতা ও সাহায্য করবে তারা। কোনও গাছ মারা গেলে, তার অংশগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছেও দেবে তারা।
এম্বুলেন্সই থাকবেন দক্ষ মালি ও গাছ-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে থাকবে বাগান করার নানা জিনিসপত্র, সার, জল, ঝারি, খুরপি ইত্যাদি।
এই প্রজেক্টে বিশেষভাবে সহায়তাকারী বেসরকারি সংস্থা সাগার তরফে সুরেশকুমার যাদব জানান, একই সঙ্গে দূষণ বাড়ছে এবং গাছের সংখ্যা কমছে। এই অবস্থায় বড় বড় প্রাপ্তবয়স্ক গাছগুলির মৃত্যু বোধ হয় আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া মুশকিল। সে জন্যই, কোনও গাছ যাতে প্রাকৃতিক বা মানুষিক কারণে মরে না যায়, তাই সেগুলিকে রক্ষা করার এই উদ্যোগ এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হয়েছে আমাদের। যা যন্ত্রপাতি বা ওষুধপত্র দরকার, সে সবই আমরা রেখেছি এম্বুল্যান্সে। কোথাও থেকে গাছ তুলে এনে অন্য জায়গায় লাগানোর জন্যও অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
এম্বুলেন্স প্রকল্পের উদ্যোক্তা কে আবদুল ঘানি বলেন, “কত গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। পড়ে পড়ে মারা যায় সেগুলি। নতুন করে লাগানোর ব্যবস্থা করাই হয় না। এই এম্বুলেন্স আর তা হতে দেবে না। হেল্পলাইনে ফোন করামাত্র আমরা এম্বুল্যান্স নিয়ে পৌঁছে যাব, বিনামূল্যে গাছটিকে সরিয়ে আনব।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপড়ে যাওয়াই নয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, গাছের কারণে সমস্যায় পড়ছেন পথচারী বা শহরবাসীরা। সেগুলি কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। শুধু চেন্নাইয়েই এরকম ঘটনা শ’য়ে শ’য়ে ঘটছে রোজ। আমাদের জানালে আর এভাবে মারতে হবে না গাছগুলিকে। যত্ন করে তাদের সরিয়ে অন্যত্র বসাব আমরা।“

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট