চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হোয়্যাটসঅ্যাপে ইসরাইলি ম্যালওয়্যারের নতুন ফাঁদ

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৫ মে, ২০১৯ | ২:১২ অপরাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ হোয়্যাটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। হোয়্যাটসঅ্যাপে একটি নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে স্রেফ একটি মিসড কল দিয়েই টার্গেটের মোবাইল ফোনে ইন্সটল করা সম্ভব হয়েছে একটি ক্ষতিকর ইসরাইলি সফটওয়্যার (ম্যালওয়্যার)। আর ওই ম্যালওয়্যার দিয়ে টার্গেটের ফোনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকার।

-ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্পাইওয়্যার ডিলার বলেন, টার্গেট যদি ওই ফোন না-ও ধরেন, তবুও সফটওয়্যারটি ইন্সটল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই কলের অস্তিত্ব আপনাআপনি কল তালিকা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়।

হোয়্যাটসঅ্যাপের নিরাপত্তা কর্মীরা এই মাসের শুরুর দিকে আবিষ্কার করেন যে, কোনো ব্যাক্তির হোয়্যাটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিয়েই তার ফোনে একটি ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে সেটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পেরেছে হ্যাকাররা। ওই ম্যালওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলো ইসরাইলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপ।  ঠিক কতজনের ফোন এই কায়দায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এখনও ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়্যাটসঅ্যাপ এর তদন্ত চলছে। এমনকি যখন হোয়্যাটসঅ্যাপের প্রকৌশলীরা এই নিরাপত্তা দুর্বলতা ঢাকার উপায় বের করার চেষ্টা করছিলেন, সেদিনও ঠিক একই কায়দায় যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একজন মানবাধিকার কর্মীর ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে।

এনএসও’র সবচেয়ে আলোচিত পণ্য হলো পেগাসাস। এই বিশেষ ম্যালওয়্যার কোনো ফোনে ইন্সটল করা সম্ভব হলে, ওই ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, কিবোর্ড, ইমেইল, মেসেজ ও লোকেশনের সমস্ত তথ্য চলে যায় নিয়ন্ত্রকের কাছে। ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও’র এই ক্ষতিকর সফটওয়্যার নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছে টরোন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাব-এর বিশেষজ্ঞরা। পেগাসাস নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন সিটিজেন ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক জন স্কট রেলটন। এনএসও মূলত এই পণ্য বিক্রি করছে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।

অ্যামনেস্টি টেক-এর উপ পরিচালক ডানা ইংলেটন বলেন, ‘এনএসও গ্রুপ এমন সব সরকারের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করছে যারা কিনা ভয়ঙ্কর সব মানবাধিকার লঙ্ঘণের দায়ে অভিযুক্ত। এই ভয়ঙ্কর সফটওয়্যার পেয়ে ওই সরকারগুলো মানবাধিকার কর্মী ও সমালোচকদের টার্গেট করছে।’

হোয়্যাটসঅ্যাপ বলেছে, তাদের প্রকৌশলী দল রাতদিন এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে এই ত্রুটি সারাতে আপডেট দেওয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার নতুন সংস্করণ এনেছে হোয়্যাটসঅ্যাপ, যেখানে এই সমস্যার সমাধান রয়েছে।

হোয়্যাটসঅ্যাপ আক্রমণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এনএসও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোনো অবস্থাতেই এনএসও বিক্রিত পণ্যের টার্গেট নির্বাচনে জড়িত হয় না। এই কাজ সম্পূর্ণই গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা করে থাকে। এনএসও নিজ থেকে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে কখনই টার্গেট করে না বা করতে পারে না।’

হোয়্যাটসঅ্যাপ শুক্রবার থেকে যেই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা যোগ করেছে, তার কারণেই সেই হামলা ব্যর্থ হয়েছে।’

জেরুজালেম ভিত্তিক আইনজীবী আলা মাহাজনে বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক তবে বিস্ময়কর নয়। আমরা আমাদের মামলায় যেই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আমার দলের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এনএসওর বিরুদ্ধে নতুন আরেক মামলা করা হবে। ওই মামলায় তাদের সফটওয়্যার রপ্তানি করার লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশনা চাওয়া হবে। এই মামলা করছেন একদল ইসরাইলি নাগরিক ও নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী। এই মামলায় সমর্থন দিচ্ছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।  এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির একজন গবেষকের ফোনও একই কায়দায় হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট