ভারতের উড়িষ্যার রাজ্য প্রশাসন দাবি করেছে, আগাম সতর্কতা জারি করে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ৩১ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশে বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আর এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত ও শঙ্কিত তখনই এমন দাবি এলো উড়িষ্যা রাজ্য প্রশাসন থেকে। তারা জনায়, যুক্তরাষ্ট্রের এক বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় নতুন এক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বজ্রপাতের মৃতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছেন তারা।

মূলত ওই প্রযুক্তি বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে থাকে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা জারি করা হয়।

উড়িষ্যার বিধানসভায় রাজ্যটির মন্ত্রী সুদাম মারান্ডি দাবি করেন, ২০১৭-১৮ সালে উড়িষ্যায় ৪৬৫ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে পরের বছর সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ জনে।

অনেক বছর পর এবারই নিহতের সংখ্যা চারশর নীচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

নতুন সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর পর হতাহতের সংখ্যা কমাতে তারা সফল হয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী জানান, জনগণ রাজ্য প্রশাসনের এ সতর্কবার্তা ঠিক মতো মানলে হতাহতের সংখ্যা আরো কম হতে পারতো।

প্রযুক্তির কার্যকারিতার ব্যাখ্যায় ভারতীয় গণমাধ্যমে উড়িষ্যার দুর্যোগ মোকাবেলা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষ্ণুপদ শেঠি বলেন, ‘ প্রযুক্তিটির নাম – আর্থ নেটওয়ার্ক সিস্টেম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। কোনো এলাকায় বাজ পড়বে, তা প্রায় একঘণ্টা আগে জানিয়ে দেয় এ প্রযুক্তি। কন্ট্রোল রুম ওই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে নিরাপদে, কংক্রিটের ছাদের তলায় আশ্রয় নিতে বলা হয়।’

দুই থেকে তিন মিনিট সময়ের মধ্যেই সাধারণ মানুষ জেনে যাচ্ছেন যে, কোন এলাকায় আগামী ১ ঘণ্টার মধ্যে বজ্রপাত হতে যাচ্ছে। তারা থকন নিরাপদে অবস্থান করেন।

জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমসের প্রকৌশলী ভোলানাথ মিশ্র জানান, ‘আর্থ নেটওয়ার্ক উড়িষ্যার বিভিন্ন পয়েন্টে ছয়টি সেন্সর বসিয়েছে। সেসব সেন্সর থেকে সংগ্রহ করা তথ্য তাদের দপ্তরে পৌঁছাচ্ছে। মেঘের অবস্থান, আকৃতি, বাতাসের গতিবিধির মতো অনেকগুলি প্যারামিটার খতিয়ে দেখে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে কোন এলাকায় সম্ভাব্য বজ্রপাত হতে পারে। আর সেই তথ্য কন্ট্রোল রুমে আসা মাত্র স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া একটি এপের মাধ্যমেও সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে উড়িষ্যায়। এপটি এন্ড্রয়েড ও এপেল ফোনের জন্য উপযোগী। ’

তবে অনেকেই মোবাইলে এসএমএস না পড়ে থাকতে পারেন। সেজন্য আরেকটি ব্যবস্থা জুড়ে দেয়া হয়েছে সেখানে।

ভোলানাথ মিশ্র জানান, ‘কেউ যদি মোবাইলের মেসেজ না পড়েন বা এপের এলার্ট না দেখেন, সে আশঙ্কা থেকে সাইরেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৪টি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় সাইরেনের ব্যবস্থা চালু করেছি আমরা।

তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তির ওপর নির্ভর থাকছেন না উড়িষ্যা রাজ্য প্রশাসন। তাল, সুপারি, খেজুর বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছ যাতে কেটে ফেলা না হয়, সেদিকে প্রচারণা চলানোসহ কঠোর হস্তক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পূর্বকোণ/ময়মী