চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সু স্থ থা কু ন

রমজানে লিভার রোগীদের করণীয়

১২ মে, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানুল মোবারক শুরু হয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এই রমজানে সক্ষম সবাই রোজা রাখার চেষ্টা করেন। এ বছর প্রচ- গরমে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় উপবাস করতে হচ্ছে। লিভারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের পবিত্র রমজান মাসে করণীয় সম্পর্কে আসুন জেনে নিই।
প্রথমে জানবো কোন লিভার রোগের রুগীরা রোজা রাখতে পারবেন আর কারা পারবেন না। যদিও সবার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য হবেনা। তবুও আমরা একটি সাধারণ আলোচনা করতে পারি।
১. একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং একিউট লিভার ফেইলার : হঠাৎ করে তীব্র জন্ডিসে আক্রান্ত একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং লিভার ফেইলরের রুগীদের লিভারের কার্যক্ষমতা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ায় তারা রোজা রাখতে পারবেন না।
২. ফ্যাটি লিভার ডিজিজ : ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা হওয়া বর্তমানে আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বের একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তবে যারা ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন তাদের জন্য রোজা আশীর্বাদ হতে পারে।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে হেপাটোসাইট বা লিভার সেলের জেনেটিক একটিভিটির তারতম্যের জন্য কম খাবার খেলে ফ্যাটি লিভারের রুগীরা ভালো থাকবেন। উপবাসের সময় লিভার সেলের নানামুখী তৎপরতায় লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয় না। কাজেই অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ সাথে না থাকলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে উপকৃত হবেন।
৩. ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস বি এবং সি : হেপাটাইটিস বি কিংবা সি তে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী যাদের শারীরিক তেমন কোন অসুবিধা নাই এবং লিভার ফাংশন ভালো তারা রোজা করতে পারবেন। তবে যারা এই রোগের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তারা অবশ্যই যথারীতি ঔষধ চালিয়ে যাবেন।
৪. লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার : সাধারনভাবে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগী যাদের জন্ডিস, পা কিংবা পেটে পানি আসা, রক্ত বমি কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে তাদের জন্য রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রুগীরা রোজা রাখতে পারবেন না।
এবার রমজানে লিভারের রোগীদের খাবার বিষয়ে জানবো ঃ
ক) ইফতার : ইফতারের সময় প্রচুর পানি এবং তরল খাবার, কম চর্বি যুক্ত এবং রসালো খাবার ও ফলমূল খাওয়া উচিত। কম তেলে ভাজা দু একটি পেয়াজু, বেগুনী খেতে পারবেন। মাঝারি মাপের একটি জিলাপি এবং ছোট এক বাটি হালিম খেতে পারবেন। তবে এই খাবারগুলো ঘরে বানানো হলে ভালো হয় এবং যাদের এসিডিটি সমস্যা বেশী তারা এই খাবারগুলো এড়িয়ে চললে ভাল থাকবেন।
১. পানীয় : পানি, দুধ, শরবত, ঘরে বানানো ফলের রস, সাথে অল্প পরিমাণ চিনি খেলে সারা দিনের রোজাজনিত পানি শুন্যতা পুরণ হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সতেজ হতে পারবেন।
২. খেজুর : ইফতারের সময় খেজুর খাওয়া সুন্নত। ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানেরা খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গেন। খেজুরে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি এবং শক্তি, এ ছাড়াও রয়েছে পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফাইবার- যা আপনাকে মুহূর্তেই চাঙ্গা করবে, লিভারের রোগীরাও প্রতিদিন ইফতারিতে ৩-৪ টি খেজুর খেতে পারবেন।
৩. ফল : যে কোন ধরনের ফল লিভারের রোগীরা খেতে পারবেন। যথেষ্ট পরিমাণ রসালো ফল খেতে পারেন তবে সাথে ডায়বেটিস থাকলে মিষ্টি ফল বেশি খাবেন না।
৪. স্যুপ : ভ্যাজিট্যাবল, চিকেন কিংবা কর্ণ যে কোন স্যুপ লিভারের রোগীরা খেতে পারবেন।
খ) রাতের খাবার : ইফতারের পর রাতের খাবার হাল্কা হতে হবে। এ সময়ে আপনি ভাত অথবা রুটি অথবা পেস্তা সাথে মুরগি, মাছ, সব্জি, পরিমাণ মত খেতে পারবেন। এসময় ফ্যাটি লিভারের রোগীরা টক দই খেতে পারেন।
গ) সেহেরী : সেহেরীতে পরিমিত ভাত, রুটি, সব্জি, মাছ, মুরগি খেতে পারবেন। কম চর্বি দুধ এবং সাথে কলা খেতে পারবেন।
এড়িয়ে চলুন : অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, গরু ও খাসির মাংস, বড়চিংড়ি (বিশেষত ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিসের রোগীরা), অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয়।
রমজানে ব্যয়াম : শারীরিকভাবে সক্ষম ক্রনিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিসের কোন কোন রুগী ইফতারের পর সাধ্যমত হাল্কা ব্যয়াম কিংবা হাঁটাহাটি করতে পারবেন।
সবশেষে : চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার গ্রহনের মাধ্যমে লিভারের বিভিন্ন রোগীরা মাহে রমজানের ফজিলত লাভ করতে পারেন। সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন।
ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট