চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

পুষ্টিবিদ হাসিনা লিপির পরামর্শ

ইফতারে তেলে ভাজা খাবার কমিয়ে ফলমূল রাখতে হবে

ইমাম হোসাইন রাজু

৬ মে, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সিয়াম সাধনার ও সংযমের মাস রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পবিত্র এ মাসে মানুষের স্বাস্থ্য ভাবনার যেন কমতি নেই। বিশেষ করে সারাদিন রোজা রাখার পরে সুস্থ থাকার জন্য কেমন ইফতার হবে-বিষয়টি রোজাদারদের ভাবিয়ে তোলে। তবে রমজানকে ঘিরে ইফতারের বাজারে যেসব মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়, তার স্বাস্থ্য ও গুণগত মান নিয়ে উদ্বিগ্ন পুষ্টিবিদরা। তাদের মতে, ইফতারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। কিন্তু বেশিরভাগ রোজাদার ইফতারের সময় যেসব খাবার গ্রহণ করে তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইফতারের পদে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ও সড়কের পাশের দোকান থেকে বা অভিজাত হোটেলগুলোতে নানা পদের নানা নামের সুস্বাদু খাবার সবার নজর কাড়ে। এসবের বেশিরভাগই হচ্ছে তেলে ভাজা বিভিন্ন ভারী খাবার। আবার বাসার টেবিলে যে খাবারগুলো পরিবেশন করা হয় তার মধ্যেও বেশি হচ্ছে তেলে তৈরি বিভিন্ন মসলাদার খাবার। চিকিৎসকদের মতে, সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদার যদি এসব ভাজাপোড়া, তেল মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাহলে এর ফলে হার্ট ও কিডনি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। এসব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক খাদ্য ও পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি পূর্বকোণকে জানান, ইফতারের আগমুহূর্তে টেবিলে যে সকল মুখরোচক খাবার সাজানো থাকে তা দেখে অনেকেই লোভ সামলাতে পারে না। তবে এসব খাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন টানা ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার ফলে আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পানির ঘাটতি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে প্রথমত পানীয় বা শরবত জাতীয় খাবার ইফতারের সময় এবং পরবর্তীতে বেশি খাওয়া উচিত। আর ইফতারে খেজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো।
তিনি বলেন, বাসায় বা বিভিন্ন দোকানগুলোতে ইফতারের জন্য যেসকল তেলে তৈরি ভাজা খাবার পাওয়া যায় তা একদম না খাওয়াই ভালো। কেননা সারাদিন রোজা রাখার পর এসব ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে হার্ট বা কিডনির সমস্যাও হতে পারে। সাধারণত এসব খাবার গ্রহণের পরপরই এসিডিটি শুরু হবে।
পুষ্টিবিদ বলেন, বিশেষ করে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা রমজান মাস এলেই রাস্তার পাশে যে খাবারগুলো তৈরি করা হয়, তাদের বেশিরভাগই পোড়া তেলে তৈরি খাবার। একই তেলে বার বার ভাজার কারণে সেগুলো শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আর অতিরিক্ত ডালের তৈরি খাবার বা মসলাদার খাবারও আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করে ইফতারে চাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। পেঁয়াজু, বেগুনি, বড়াজাতীয় খাবারের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। খাদ্যতালিকায় শসা ও তাজা ফলমূল রাখতে হবে।
যে সকল খাবার খাওয়া উচিত
ইফতারে শুরুতেই পানীয় বা শরবতজাতীয় খাবার খেতে হবে। এর মধ্যে আনারাস, তরমুজ, জাম্বুরা, জাম, কমলা, অথবা রসালো ফলের জুস খাওয়া।
বিভিন্ন রকমে ফল বিশেষ করে তাজাফল খাওয়া। যেমন, খেজুর, কলা, আপেল, কমলা, মাল্টা, লিচু, আতা ফল, কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, নারকেল, বেদানা, বেল, আনারস, আঙ্গুর, শসা, খিড়া, গাজর, কাঁচা পেয়ারা ইত্যাদি।
কোন প্রকার রোগব্যধি না থাকলে ঘরে তৈরি পিঁয়াজু, আলুরচপ বা বেগুনি খেতে পারবে জানিয়ে পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার বলেন, ঘরের তৈরি ইফতার পরিচ্ছন্ন ও ভাল পরিবেশে ভালো তেলে ভেজে তৈরি হয়। ফলে তা খেতে বাধা নেই। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা আলসার জাতীয় কোন সমস্যা রয়েছে তাদের খাওয়া যাবে না। এসব খাওয়াকেও নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ঘরে তৈরি এসব ভাজা খাবার গ্রহণ করতে হলেও কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। কতটুকু পরিমাণ আমি খাবো, যা খাচ্ছি তা মানসম্মত কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
তাঁর মতে এসব খাবারের (যেকোন একটি) মধ্যে বুনা ভুট আধা কাপ সঙ্গে ২ থেকে ৩ কাপ মুড়ির সংমিশ্রণ থাকতে হবে। আর পিঁয়াজু যদি খাবার ইচ্ছে করে তাহলে মাত্র ২/৩ টি পেঁয়াজু ও বেগুনি খাওয়া যেতে পারে। তবে এসবের মধ্যে যে কোন একটি খাবারই গ্রহণ করতে হবে অথবা চিড়াও খাওয়া যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট