চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইমপেটিগো- শিশুদের চর্মরোগ

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও এই রোগটি বেশ দেখা যায়। গরমকালে শিশুদের মাঝে ইমপেটিগো এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্যনীয়। আবার শিশু ছাড়া বড়দেরও এটি আক্রমণ করতে পারে, বিশেষত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। দুই ধরণের ব্যাকটেরিয়ায় এই রোগ ঘটাতে পারে, তবে লক্ষণ-উপসর্গ একটু আলাদা হয়। স্টাফাইলোকক্কাই নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সৃষ্ট চর্মরোগটি ঠোসা বা ফোসকা যুক্ত হয় বলে এটিকে বুলাস ইমপেটিগো নাম দেওয়া হয়েছে।
আবার বিটা হেমোলাইটিক স্প্রেপটোকক্কাস জীবানু ঘটিত চর্মরোগটিতে ঠোসা বা ফোসকা থাকে না বলে এটি নন-বুলাস ইমপেটিগো। আক্রমণের জন্য এই দুটি ব্যাকটেরিয়া সাধারণত শিশুদের ত্বকের খোলা অংশ বেছে নেয়। নাকের আশপাশ সহ মুখের চামড়ায়, কান, গলা পর্যন্ত এর বিস্তার থাকতে পারে। এছাড়াও বগল তল, পায়খানার রাস্তা, উরু-সন্ধি সহ শরীরের যেকোন স্থানে এদের আক্রমণ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে সামান্য ব্যাথা নিয়ে এক বা একাধিক লালচে বা গোলাপি বিচি দেখা দেয়। বুলাস ইমপেটিগোতে বিচিগুলি রসযুক্ত ঠোসা বা ফোসকায় পরিণত হতে থাকে। এই ফোসকাগুলি বেশ টলটলে থাকে এবং সহজেই ফেটে গিয়ে লালচে ঘা দেখা দেয়। যার উপরিতল সোনালী রঙের ঝুরঝুরে খোসা আবৃত থাকে। আর নন-বুলাস এর ক্ষেত্রে গোলাপি বিচিগুলি ফুসকুরি বা পুঁজযুক্ত হতে পারে। পরে এগুলি অপেক্ষাকৃত শক্ত আবরণ নিয়ে ঘায়ে পরিণত হয়। চামড়ার লক্ষণের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর,

গা-ব্যাথা বা স্থানীয় লিম্ফ-গ¬্যান্ড স্ফীতি থাকতে পারে। দেখতে ভয়ানক লাগলেও, এই চর্মরোগটি সাধারণত খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি করে না। এমনকি রোগ পরবর্তী দাগও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। রোগ নিয়ে শিশুরা দিব্যি স্বাভাবিক থাকে।
খুব সামান্য ক্ষেত্রে এটি কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- স্টাফাইলোকক্কাল স্কেল্ড স্কিন সিনড্রোম, টক্সিক শক সিনড্রোম, গে¬ামেরুলো নেফ্রাইটিস, রিউমেটিক ফিভার, ইত্যাদি। চিকিৎসার প্রথমেই পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানসমূহ পরিষ্কার করে এন্টিবায়টিক মলম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আক্রান্ত স্থানের সাথে জীবানুর ঘাঁটি নাকের ছিদ্র, বগল তল, পায়খানার রাস্তার মুখেও মলম লাগাতে হবে। প্রয়োজনে মুখে খাবার এন্টিবায়টিক দিতে হয়। মনে রাখতে হবে এটি কিন্তু অন্যকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই ঘা সম্পূর্ণ না শুকালে জন যোগাযোগ বা স্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। টাওয়াল, কাপড়-চোপড় অন্য কেউ যাতে ব্যবহার না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট