চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ

রোজী আকতার

৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে একদিকে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে অন্যদিকে এর প্রভাব শরীরে থেকে যায় দীর্ঘদিন। তবে বিশ্রাম ও নিয়ম মেনে চললে এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়াও সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বর কী: ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে। ইজিপ্টাই মশার কামড়ে এটি হয়। এতে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে রূপ নেয়। যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।
যেভাবে ছড়ায়: ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়।
রোগের প্রকৃতি: শিশু ও ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এ জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এতে বিপদ বেশি। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কখন ডেঙ্গু হয়: সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ জ্বরে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে গরম এবং বর্ষার সময়টাতেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে এ জ্বর একদম হয় না বললেই চলে। শীতে লার্ভা অবস্থায় ডেঙ্গু মশা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতেই সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশা বিস্তার লাভ করে।
জ্বরের লক্ষণসমূহ: এ জ্বর অনেক ক্ষেত্রে কম হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। দেখা যায়, জ্বর তিন-চার দিন পর ভালো হয়ে যায়। তবে এরপর প্লাটিলেট কম হতে থাকে। এরপর মাঝখানে একটি বিরতি দিয়ে আবার জ্বর আসে। এই জ্বরের সঙ্গে প্রচ- মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং চোখের পেছনে ব্যথা করবে। জ্বর যদি জটিল পর্যায় হয়, তাহলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, রক্তবমি হতে পারে। এই জ্বরে যেহেতু পানিশূন্যতা বেশি হয়, তাই প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এতে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘাম হতে পারে। বমি বমি ভাব হতে পারে, খাবারে অরুচি হতে পারে। অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের যে লক্ষণ, সেগুলো প্রায় সবই ডেঙ্গু জ্বরে থাকবে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম: ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। এর লক্ষণ হল- রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া। নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠা-া হয়ে যায়। হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন: এখন যেহেতু ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি তাই জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। তবে জ্বর এলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বা আতঙ্কিত হতে হবে, তা নয়।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ: ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হল এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহৃত জিনিস যেমন, মুখ খোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনে ঘরের চারদিকে দরজা জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনে ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট