চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জামরুলের এতো গুণ!

ময়মী খোন্দকার

১৭ মে, ২০১৯ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

জ্যৈষ্ঠ মাস হলো মধু মাস। ঋতুচক্রে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গরমকাল হলেও ফলের বিবেচনায় এই মাসদ্বয়কে বলা যেতে পারে মধুঋতু।

হরেকরকম সুমিষ্ট আর রসালো ফলের সমাহারে টইটম্বুর এই মাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফল হলো জামরুল।

ইট-পাথরের এই শহরে সবুজ পাতাকে আড়াল করে গাছের ডালে থোকায় থোকায় ধরা পাকা জামরুলের দেখা মেলা ভার।

যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত শহরবাসীর অনেকের কাছেই হয়ত রসালো এই ফলটি খুব একটা পরিচিত নয়।

তারপরেও কখনো পথের পাশে, আবার কখনোবা কোনো সৌখিন বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা পাওয়া যায় জামরুল গাছের।

বলা হয়ে থাকে, প্রকৃতি যত বেশি রোদে তপ্ত থাকে, জামরুল তত বেশি মিষ্টি হয়। অন্যদিকে বৃষ্টিবহুল বছরে জামরুলের স্বাদ হয় পানসে।

এদিক থেকে এ বছর সুমিষ্ট জামরুল প্রাপ্তির সম্ভাবনাই বেশি।

সাধারণত মাঘ মাস থেকে চৈত্র মাসের মধ্যে জামরুল গাছে ফুল আসে আর চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মধ্যে পাকা জামরুল পাওয়া যায়। সাধারণত বীজ থেকে গাছ হয়। কিন্তু ডাল কেটে পানিতে রাখলে শেকড় জন্মায়।

ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল জামরুল। এটি সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সামোয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে জন্মে।

জামরুলের যত বাহার:

জামরুল এক রকমের হালকা সবুজ রঙের মিষ্টি স্বাদের পানসে ফল, দেখতে ঘণ্টাকৃতি। তবে লাল, সাদা, হালকা সবুজ, গোলাপি; এমনকি কালো রঙের জামরুলও পাওয়া যায়। কালো বর্ণের জামরুল ‘ব্ল্যাক পার্ল’ নামে পরিচিত। এ ফলকে ঢাকাইয়া ভাষায় আমরূজও বলা হয়।

কেন খাবেন জামরুল ফল:

জামরুলের মতো নিরীহ-সাধাসিধে ফল খুব কমই আছে। দেখতে ছোট ফল হলেও মানবদেহে এর কার্যকারিতা আকারে বড় এমন যেকোন ফলের চাইতে কম নয়।

চলুন দেখে নেয়া যাক জামরুলের নানাবিধ উপকারিতা-

পুষ্টিমান: জামরুল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ যা কমলার তিন গুণ এবং আম, আনারস ও তরমুজের সমান। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ লিচু ও কুলের সমান এবং আঙুরের দ্বিগুণ। আয়রনের পরিমাণ কমলা, আঙুর, পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়েও বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ আপেল, আঙুর, আম ও কমলার চেয়ে বেশি।

প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলে থাকে: জলীয় অংশ ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ, ক্যারোটিন আছে ১৪১ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ আছে ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ আছে ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম, ক্যালরি শক্তি ৫৬, প্রোটিন ০.৫ থেকে ০.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.২ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১.১ থেকে ১.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ থেকে ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯ থেকে ৪৫.২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১.৭ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৫ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪.১ মিলিগ্রাম, কপার ০.০১ মিলিগ্রাম, সালফার ১৩ মিলিগ্রাম, ক্লোরিন ৪ মিলিগ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি রয়েছে ৩৯ কিলোক্যালারি।

জামরুলের গুণাগুণ-

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে: জামরুলের উচ্চমাত্রার ফাইবার হজমের জন্য দারুণ উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শুধু তাই নয়, এর বিচি ডায়রিয়া প্রতিরোধে অনেকটা ওষুধের মতো কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে: জাম্বোসাইন হচ্ছে এক ধরনের ক্ষারজাতীয় উপাদান। এটি স্টার্চকে চিনিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুস্থ মানুষের দেহে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধা ঠেকিয়ে দিতে দক্ষ জামরুল। কাজেই জামরুল খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে যাবে না।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে: জামরুলে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান। তাই নিয়মিত জামরুল খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে: পুষ্টি উপাদানের সম্মিলিত উপস্থিতি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খুবই কার্যকরী। অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকিও কমে আসে উল্লেখযোগ্য হারে। কার্ডিওভাসকুলার বিষয়ক জটিলতা হ্রাস পায়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক আর করোনারি রোগের ঝুঁকিও আপনাকে পেরেশানিতে রাখবে না।

মস্তিষ্ক লিভার সুস্থ রাখতে: মস্তিষ্ক ও লিভার সুস্থ রাখতে জামরুল টনিক হিসাবে কাজ করে।

বাতের জন্য: জামরুল ভেষজগুণসমৃদ্ধ ফল। বাত নিরাময়ে এটি ব্যবহার করা হয়।

চোখের কালি দূর করতে: ঘুম না হওয়া কিংবা দুশ্চিন্তায় যাদের চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, তারা সেই কালি দূর করতে নিয়মিত একটি করে জামরুল খেয়ে দেখতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধক: জামরুলের শক্তিশালী উপাদানগুলো জীবাণু এবং ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকায় এই ফল। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

বিষাক্ত উপাদান পরিষ্কার করতে: শরীরে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত উপাদান ঘুরে বেড়ায়। শত শত বছর ধরে দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে বের করে দিতে জামরুলের কাযর্করী ভূমিকা পালন করে। লিভার আর কিডনির বিষ দূর করে বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতে যেন এক অব্যর্থ টোটকা এই জামরুল।

জামরুল গাছের যত্ন: জামরুল গাছে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের তেমন কোন উপদ্রব দেখা যায় না। কচি পাতা খেকো পোকার আক্রমণ কদাচিৎ দেখা যায়। এদের দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সুমিথিয়ন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট