চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর’

ডেইজী মউদুদ

১৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আজ পহেলা ভাদ্র , শরৎ ঋতুর সূচনা। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। ভাদ্র ও আশ্বিন এ দু’মাস শরৎকাল । বর্ষার পরের ঋতুই শরৎ। তাই শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল, স্নিগ্ধ।শরতের আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না।শরৎকালের রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘমুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। অপরূপ বিভাও সৌন্দর্যের কারণে শরৎকাল কে বলা হয়ে থাকে ঋতু রাণী। মানুষ মাত্রই শরৎ কালে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য দেখে মোহিত না হয়ে পারেনা। শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাশফুল নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। গাছে গাছে শিউলির মন- ভোলানো সুবাসে প্রকৃতি হয়ে উঠে মায়াময়। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। ¯িœগ্ধ ঋতুটি তাই ভাবিয়েছে সৃজনশীলদের। চর্যাপদের পদকর্তা থেকে শুরু করে আজকের তরুণতম কবির রচনায়ও শরৎকাল তার নান্দনিক ব্যঞ্জনা নিয়ে উদ্ভাসিত। বৈষ্ণব সাহিত্যেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভাদ্র মাস কে নিয়ে বৈষ্ণব পদাবলীর এই পদটি সম্ভবত: বিদ্যাপতি রচিত রাধা বিরহের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ।
‘ এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর’ । মধ্যযুগের ধারাবাহিকতা শেষে আধুনিক যুগের কবিদের কবিতায়ও শরতের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের কাব্যে ও গানে শরতের বন্দনা অনবদ্য।কবি পদ্মায় বোটে ভ্রমণকালে শরতের ময়ূরকণ্ঠী নীল নির্মল আকাশে শিমুল তুলার মতো শুভ্র মেঘেদের দলবেঁধে ছুটে বেড়ানো দেখে লিখেছিলেন, ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া/ আমি দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া’ ।
বাংলার প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদাহাসির প্লাবণ। মাঠে মাঠে সবুজের মেলা। সত্যিকার অর্থে শরতের মন মাতানো প্রকৃতি তেমন কি যে খুঁজে ফেরে, তা বোঝা বড়ই মুশকিল! ক্ষণিকের অতিথি এই শরৎ। শরতের এ সময়টা শস্যপূর্ণা। ধানক্ষেত এ সময় ফল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। মাস দু-এক পরেই কৃষকের গোলা ভরবে ধানে। কিষাণীর নোলক দোলানো হাসি বলে দেবে পরিতৃপ্তির কথা। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শরৎকালের সেই মাধুর্য এখন আর খুঁজে পায় না মানুষ। এবার গ্রীস্মের স্থায়িত্ব ছিল বেশী।গরমের প্রচ- দাপটে আকাশে মেঘ জমতে পারেনি। ফলে বর্ষা ঋতু আসেনি সময়মতো। কিন্তু আষাঢ়শেষে প্রকৃতি জুড়ে নেমেছে শ্রাবণধারা ।অব্যাহত এই বর্ষণের রিমঝিম জলনুপুরের নিক্কনে আজ থেকে শুরু হচ্ছে শরৎকাল।কখনো কাঠফাটা রোদ , কখনো বা অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের আলোছায়ার খেলা, এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার এই রোদেই আজ থেকে শরতের বন্দনা শুরু । প্রকৃতির এ অপরূপ রূপমাধুরীতে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য চায়। হয়তো ইচ্ছা হয় গোধূলির ওপারে হারিয়ে যেতে প্রিয়জনের হাতটি ধরে। কিন্তু ব্যস্ত এ নগরীতে, শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা পারি না মনের আকাঙক্ষায় শরতের রঙে সাজাতে। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই শরতের কাশফুল, গোধূলি, শিউলি আর জ্যোৎস্নার মাঝে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট