চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সর্প দ্বীপ ইলহা দ্য কুইমেডা গ্রান্ডে

হোমশিখা দত্ত

১ আগস্ট, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

কিন্তু যখন জানা যায় দ্বীপটি সর্পদ্বীপ নামেও পরিচিত, তখন বিস্মিত হতেই হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।

(গত সংখ্যার পর)
কুইমাডা গ্র্যান্ডের সাথে সাথে ব্রাজিল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রাণীরা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে বিবর্তিত হতে থাকলো বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু তাদের বিবর্তন আর মূল ভূখন্ডের প্রাণীদের বিবর্তন একই হলো না। এর প্রধান কারণ, মূল ভুখ- আর দ্বীপের আবহাওয়া তখন একই রকম নয়।
এই বিবর্তন ঘটতে লাগলো সহ¯্র বছর ধরে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সোনালী ল্যান্সহেড সাপের কথা। সাপেরা শিকার করে খায় এমন ছোটখাটো প্রাণী দ্বীপে ছিলো না। কিন্তু পাখি ছিলো প্রচুর। বিবর্তন হতে হতে সাপগুলোর বিষ খুব শক্তিশালী হয়ে উঠলো। যাতে তারা পাখি শিকার করতে পারে এবং শিকার করা পাখিটি যেন তৎক্ষণাৎ মারা পড়ে। এদিকে দ্বীপবাসী পাখিগুলোরও তো বিবর্তন হয়েছে বংশ পরম্পরায়।
কুইমাডা গ্র্যান্ডেতে বাস করে এমন অনেক শিকারী প্রাণী রয়েছে। সেখানকার স্থানীয় পাখিরা বংশের পর বংশ ধরে শিকারীর শিকার হতে হতে এখন ধরা পড়ার ব্যাপারে খুব সচেতন। ল্যান্সহেড সাপও এখন দ্বীপবাসী পাখি ধরার জন্য অপেক্ষা করে না। যে পাখিগুলো ভ্রমণপথে বিশ্রাম নিতে কুইমাডা গ্র্যান্ডেতে নেমে আসে আকাশ থেকে, ল্যান্সহেড সাপেরা সেই পাখিগুলো শিকার করার জন্য ওঁত পেতে থাকে।
মূল ভূখ-ের সুবর্ণ ল্যান্সহেড সাপের জ্ঞাতি ভাই ল্যান্সহেড সাপ ব্রাজিলের ৯০ শতাংশ ‘সাপের কামড়ে মৃত্যুর’ জন্য দায়ী।
সম্ভবত মূল বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের বিষ পাঁচগুণ বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, লড়াই করে বেঁচে থাকার তাগিদে। যাই হোক, এমনধারা শিকারীর শিকার তো হাতছাড়া না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সোনালী ল্যান্সহেড সাপের কামড়ে মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই, যেহেতু তাদের একমাত্র বাসস্থান মানববসতি কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে সাধারণ ল্যান্সহেড সাপ, অর্থাৎ ব্রাজিলের মূল ভূখ-ের ল্যান্সহেড সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ৭ শতাংশ, যদি না কোনো তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসা করেও ল্যান্সহেড সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির বেঁচে যাওয়ার গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। এবং তখনো মৃত্যুর আশঙ্কা রয়ে যায় ৩ শতাংশ।
এটা কল্পনা করা কঠিন, এমন সুন্দর একটা জায়গা, সেখানেই কিনা প্রতি পদক্ষেপে
মৃত্যুফাঁদ পেতে রাখা? কিন্তু এটাও ঠিক যে, এই সাপের মারাত্মক বিষের ভিতর লুকিয়ে আছে হৃৎপি-ের সমস্যার মোকাবেলা করার অমিত সম্ভাবনা। তাই বিশ্বব্যাপী কালোবাজারে ব্যাপক চাহিদা এই বিষের। আর সেজন্যেই কুইমাডা গ্র্যান্ডে দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ সোনালী ল্যান্সহেডস-এর কামড়ে নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকির চেয়ে অর্থের প্রলোভনই বড় হয়ে দাঁড়ায় আইনভঙ্গকারী কালোবাজারী আর চোরাচালানকারীদের চোখে।
বিষাক্ত সুবর্ণ ল্যান্সহেড সাপ দ্বীপটির মাটিতে আটকা পড়েও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলেছে। সংখ্যায়ও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এটিকে বিলুপ্তির অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন বলে ঘোষণা করেছে। সে কারণেও এই সাপকে রক্ষা করার জন্য সে দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুধুমাত্র ব্রাজিলিয়ান নৌবাহিনী ও চিকো মেন্ডেস ইনস্টিটিউট ফর বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ব্রাজিলিয়ান ফেডারেল কনজারভেশন ইউনিট -এর নির্বাচিত গবেষকরা সেখানে যেতে পারেন। অবশ্য কোনও স্থানীয় পালিয়েও যাওয়ার সাহস পাবে না ব্রাজিলের উপকূল থেকে মাত্র প্রায় ২৫ মাইল দূরের এই দ্বীপটিতে। (শেষ)
[সূত্র : ডয়চে ভেলে]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট