চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দর্শনীয় স্থান গিজার পিরামিড

প্রবাস ডেস্ক

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ১:৩১ পূর্বাহ্ণ

মিশর বলতেই সবার মনে নিশ্চয়ই গিজা’র পিরামিডের চিত্র ফুটে ওঠে ! এটি খুফু’র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। অথচ প্রাচীন মিশরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৭৫টি পিরামিড রয়েছে। তবে সেগুলো রাজধানী কায়রোর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত। আপনি কি জানেন, মিশরে অন্তত ১৩০টিরও বেশি এমন ঘরানার স্ট্রাকচার আছে? সত্যিই তাই। পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি বলে কৌতুহলিদের আনাগোনো চলতেই থাকে মিশরে। সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পিরামিড সচক্ষে দেখা ও এরসব অজানা রহস্য ভেদ করা। তবে অনেকেই জানে না চার স্তরবিশিষ্ট পিরামিডগুলোর ভেতরকার গুপ্ত তথ্য। এমনই ২০টি অজানা তথ্য জেনে নিন-
১. মিশরের সবচেয়ে প্রাচীনতম পিরামিডটি ফরহো জোসেরের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এটি সাক্কারাতে অবস্থিত। রাজাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমাধিস্থল হলো সাক্কারা। জোসেরের পিরামিডটি তার কাঠামোর জন্য স্টেপ পিরামিড নামে পরিচিত। এই পিরামিড প্রায় ২ হাজার ৬৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল। অর্থাৎ বর্তমানে এর বয়স ৪ হাজার ৬০০ বছর!
২. প্রথম পিরামিডের স্থপতি ইমোটেপ ছিলেন প্রচুর প্রতিভাসম্পন্ন। তিনি একাধারে স্থপতি, মহাযাজক, গণিতবিদ সেইসঙ্গে মিশরীয় চ্যান্সেলর ছিলেন। জোসেরের পিরামিড নির্মাণের প্রায় ১৪ শতাব্দী পর তিনি প্রাচীন মিশরীয় চিকিৎসায় পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেন। যদিও বেঁচে থাকতে প্রতিভাবান এই ব্যাক্তিত্ব তেমন সমাদর পাননি। তবে ইমোটেপের মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর থেকে তার সুনাম ও প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে।
৩. মিশরীয় প্রথম সমতল (স্টেপড না) পিরামিড হিসেবে দহশুরের লাল পিরামিডটি পরিচিত হয়। এটি ফেরাউন সোফেরুর জন্য নির্মিত হয়েছিল। যিনি ২ হাজার ৬১৩ থেকে ২ হাজার ৫৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শাসন করেছিলেন।
৪. জনপ্রিয় পিরামিড গিজা মিশরের প্রথম দিকের তিনটি পিরামিডের মধ্যকার সবচেয়ে বড় পিরামিড। এটি ফেরাউন খুফুর জন্য নির্মিত হয়েছিল। যার শাসনকাল ছিলো ২ হাজার ৫৮৯ থেকে ২ হাজার ৫৬৬ খ্রিস্টাব্দ। এই পিরামিডটি তৈরি হয় খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খ- দিয়ে। পাথর খ-ের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মতো।
৫. প্রাচীন গ্রীকরা তাদের ভাষায় খুফু নামটি লিখতো ‘চোপস’। এজন্যই গিজার গ্রেট পিরামিডটি চোপস পিরামিড নামেও পরিচিত।
৬. খুফুর জন্য নির্মিত গিজার পিরামিডটির পাশে তার রাণীদের জন্য আরো তিনটি পিরামিড নির্মিত হয়। এতে ছোট ছোট মস্তবা রাখা হয় ফেরাউনের আত্মীয় ও কর্মকর্তাদের জন্য। কারণ মৃত্যুর পরের জীবনে ফেরাউনের সঙ্গে থাকতে এবং তার সেবা করতে সেখানে তার আত্মীয়-স্বজন ও রাণীরা থাকতেন।
৭. গিজার এই ঐতিহাসিক পিরামিড নির্মাণে প্রায় ২২ মিলিয়ন পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। গড়ে এসব পাথরের ওজন প্রায় আড়াই টন। এবং পিরামিডের পুরো কাঠামোর ওজন প্রায় ৫ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন টন।
৮. সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম বরাবর প্রায় নিখুঁতভাবে এই পিরামিড বসানোর পেছনে আছে দারুণ সহজ একটি কৌশল। গিজা পিরামিড নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন প্রকৌশলী গ্লেন ড্যাশ। গবেষণাপত্রে তিনি লিখেছেন, ফল ইকুইনক্স বা শারদ বিষুবকে ব্যবহার করে এত নিখুঁত হিসাব করে মিশরীয়রা। এই হিসাবের ফলাফল হিসেবে পিরামিডের চারটি কোণ উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে প্রায় নিখুঁতভাবে অবস্থান করছে।
৯. গ্রেট পিরামিড বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্য’র একটি। ইংল্যান্ডের লিঙ্কন ক্যাথিড্রাল নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার বছর (৩ হাজার ৮০০ বছর) পর্যন্ত এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ম্যানেমেড কাঠামো” হিসেবে বিবেচিত ছিল।
১০. খুফু’র পিরামিডের ভেতরে যদিও কোন চিত্রলিপি পাওয়া যায় নি। কারণ বিশ্বাস করা হয় যে, মৃত্যুর পর শান্তিতে ঘুমানোর জন্যই ফেরাউন তার এই পিরামিডটি তৈরি করেন। তিনি হয়ত চাননি তার পিরামিডের ভেতরে কোন চিত্রকর্ম রাখা হউক!
১১. গিজার পিরামিডের মাঝামাঝিতে খুফুর পুত্র খাফ্রের সমাধি নির্মিত হয়েছে। যিনি ২ হাজার ৫৫৮ থেকে ২ হাজার ৫৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পযর্ন্ত শাসন করেন। তার শাসনামলেই দ্য গ্রেট স্ফিনক্স নির্মিত হয়। গ্রেট পিরামিড বা বৃহৎ পিরামিডটির সামনে স্ফিনক্স, এটি একটি প্রাণীর মূর্তি যার শরীরটি সিংহের এবং মস্তকটি মানুষের। স্ফিনক্স-টি ২০ মিটার (৬৬ ফুট) উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ দশমিক ৫ মিটার এবং এটি সম্ভবত সাড়ে ৪ হাজার বছরেরও আগে বেলে পাথর দ্বারা নির্মিত একটি মূর্তি।
১২. গিজায় খুফু’র তিনটি পিরামিড থাকা স্বত্ত্বেও পরবর্তীতে খাফ্রের ছেলে এবং খফুর নাতি মেনকুরের জন্য আরো একটি পিরামিড নির্মিত হয়। মেনকুর ২ হাজার ৫৩২ থেকে ২ হাজার ৫০৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজত্ব করেন। তার পিরামিডটি উচ্চতায় মাত্র ২১৮ ফুট। যা গ্রেট পিরামিড তুলনায় দুই গুণ বেশি ছোট।
১৩. ফেরাউন খুফুর তিনটি পিরামিড এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যেন আকাশ থেকে নিচে দেখলে মনে হকে থ্রি-স্টার তারা। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, প্রাচীন মিশরীয়রা ভাবতেন মৃত্যুর পরে মানুষ তারা হয়ে রাতের আকাশে জ্বলে ওঠে। তারা মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম বিশ্বাস করত। এবং পুনর্জন্মের দেবতা ওসিরীসের শক্তিকে বিশ্বাস করত এবং তিনি ফেরাউনদের পুনরায় জীবন দান করবেন এটা ভেবে পিরামিডে নিজেদের দেহ সুসজ্জিতভাবে সংগ্রহ করত।
১৪. নির্মাণের সময় গিজার পিরামিডের বাইরের আবরণ এক বিশেষ পাথর দ্বারা আবৃত করা হয়। এই চুনাপাথরগুলো অত্যন্ত মসৃণ। এই পাথরগুলোর কারণে সূর্যের আলোর প্রতিফলনে দূর থেকে হীরার মতো দেখায় পিরামিডের কাঠামোকে।
১৫. সর্বশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে গিজার পিরামিড আসলে স্থানীয় শ্রমিকদের সাহায্যে তৈরি হয়েছিল, দাসদের দ্বারা নয়।
১৬. মিশরীয় পিরামিডের ভিতরের তাপমাত্রা সারা বছরই ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে দিন ও রাতের ব্যবধানে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে।
১৭. মৃত ফেরাউনের লাশ মমি করে একটি স্যারকোফাগাসের (মৃতদেহ রাখা বাক্স) ভিতরে রাখা আছে। যদিও প্রতিটি পিরামিডের প্রবেশদ্বারটি সিলগালা করা হয়েছিল। তবে ইতিহাস খুঁড়তে গিয়ে প্রাচীনকালেই তা অবমুক্ত হয়।
১৮. প্রাচীন মিশরে নির্মিত সব পিরামিড নীল নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। মিশরীয়দের ধারণা সূর্য পশ্চিমে মৃত রাজাদের সম্মান জানিয়ে অস্ত যায়।
১৯. প্রাচীন নির্মাতাদের দ্বারা ব্যবহৃত মর্টার পাথর তৈরির গোপন রহস্য আজো ভেদ হয়নি। প্রাচীনকালকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই এই পাথরের ব্যবহার করা হয় পিরামিডগুলোতে। তবে অবাক করা বিষয় এই যে, বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি থাকা স্বত্ত্বেও আজো মর্টার তৈরির সূত্রটি জানা সম্ভব হয়নি।
২০. ফেরাউন পেপির শাসনকালের মধ্য দিয়ে পিরামিড যুগের সমাপ্তি ঘটে। তার শাসনকাল ছিল ২ হাজার ২৭৮ থেকে ২ হাজার ১৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পযর্ন্ত। শেষ ফেরাউন তার চূড়ান্ত বিশ্রামস্থান হিসেবে পিরামিড তৈরি করেন। সেখানে তার চিত্তাকর্ষক সমাধিও তৈরী করা হয়েছে। ১৭২ ফুট (৫৪ মিটার) উচ্চতাসম্পন্ন তার পিরামিডটি দেখতে সাক্কারাতে প্রথম সুপরিচিত নির্মাতা জোসেরের পিরামিডের ন্যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট