চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৪ মে, ২০১৯ | ২:৫৭ অপরাহ্ণ

স্বপন দত্ত
মন খারাপের চিলেকোঠা

ছেলেটি : চাঁদ জেগেছে লাজুকলতায়, কন্যে, চোখে তাপ,
মেয়েটি : চোখ দিও না, মেলবে ফণা ঘুমিয়ে থাকা সাপ।

ছেলেটি : নিত্য চন্দ্রকলায় সাজো ছলাকলার ভেলায়,
মেয়েটি : না, সাজি নি, মন মজেছে বিপজ্জনক খেলায়।

ছেলেটি : আমার গল্প মন-খারাপের দিয়েছি টিপছাপ,
চিনিয়েছিলে কোথায় আছে তলোয়ারের খাপ।

মেয়েটি : বেশ করেছি মুখ্যু ছেলে! পেলে প্রথম পাঠ,
করেছিলাম রাজ্যে আমার তোমাকে স¤্রাট।

ছেলেটি : চাই নে ক্ষণিক রাজ-রাজত্ব চাই নে সিংহাসন,
অন্তবিহীন তোমাকে চাই চাইছি আজীবন।

মেয়েটি : বলেছি তো শুকতারা যে, সন্ধ্যাতারা সে-ই,
সাতমহলায় অনেক ধাঁধা এই আছি, এই নেই।

আবু তাহের মুহাম্মদ
সাজেক মেঘ

সরিছে উত্তরিমেঘ শৈল রাশি রাশি
আধখানা প্রান্তর গাঢ সবুজ সাজেকে
টিলাগুলোতে ডানার পরশ আহা উহু
দুরন্ত হাওয়ায় উড়ু উড়ু শীতল দু’বাহু।

দৈবাৎ ফিরেছে কুটুম্বি প্রস্ত প্রস্ত ছায়া
ক্ষণিক স্তম্ভিত পুলকে ফিরছে পর্যটক
নৃ-জাতি পসরা খোলে, শোনায় অস্থির বেহাগ
বৈরাগ গিরি ফেরা বিষন্ন কথক।

সাজিদুল হক
রঙহীন তুলির আঁচড়

আমাকে না জানিয়ে চলে যায় শৈশব
তারুণ্য পালিয়েছে পেছনের দরোজায়
তুমি চুরি করেছো আমার যৌবন
অল্পটুকু সময় ছিলো নিজেকে ভাববার
বসন্ত কোথায় সেখানে!
শূন্য হেমন্তের আদিগন্ত
কলাপাতার সবুজ পুড়েছে স্পর্শহীন
কবি অপেক্ষায়
শ্রাবণধারায় ভিজবে সারা দুপুর;
একটি শাদা কাগজ বর্ণমালা ছাড়া
প্রকাশ করেনি কিছুই
রঙহীন তুলির আঁচড়ে আসবে না
তোমার মুখের অভিমানী রেখা।

ফাউজুল কবির
কিছু শব্দ গোপনে কিনেছি

আজ কিছু শব্দ গোপনে কিনেছি
সাবধান! ঠোঁটে তর্জনী তোলো
কাউকে যাবে না বলাÑ
কিছু কালো শব্দ কিছু নীল শব্দ
আর কিছু শব্দ একান্ত গোলাপি
মনে হয় লালও ছিলো চার কি পাঁচটা
অন্ধকার ছিলো দোকানে দোকানে সড়কে গলিতে
তারাদের চোখের শাসন মাস্তানের ভয়
পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে মুড়িয়ে
কয়েক বার গাড়ি অদল-বদল করে
অবশেষে পৌঁছে গেছি নিরাপদে নিজের বাড়িতে।
আহা! কী যে মজা হবে গোপনের শব্দ নিয়ে
গোপনেরা বড় বেশি মুগ্ধকর আসক্তি জমায়
ফুর্তি আনে রক্তে রক্তে স্নায়ুতে শিরায়
কাছে টানে শুধু মন ধরে প্রাণ ধরে চুল ধরে টানে
অস্তিত্বের হৃদয়ের ঠোঁটে মাখে অধরা চুম্বন
আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠি স্বস্তি-স্বস্তি সাবাশ-সাবাশ
চুপি চুপি পকেটেই রাখি দারুণ সুখের দুটি হাত
অকস্মাৎ কম্পিত স্তম্ভিত ইজমে আসে হাতের আঙুল
দেখি নাই হয়ে গেছে সব অদৃশ্য হয়েছে হাওয়ায়Ñ
আমার সমস্ত কালো শব্দ
আমার সমস্ত নীল শব্দ
গোলাপি ও লাল শব্দগুলি
বোধহয় কেউ করেছে হাত-সাফাই দুর্দান্ত ম্যাজিকে
শুধু একটি মাত্র শব্দ বসে আছে করুণ ফ্যাকাশে
পকেটের গভীর তলায় একাকিনী: সঙ্গ বোবা ও নির্বোধ
নাম তার চেনা জানা খুব সাধারণÑশোকার্ত ভুবন
নিরন্তর জীবনের ঘষা খেতে খেতে স্বপ্নহীন পাথর এখন।
তবে আমি এতটা আনন্দ আর কষ্টে কিনেছি যে সব শব্দ
সাহসের বুকে জীবনকে রেখে বাজি
আমাকেই একা ফেলে তারা সব কোথায়
গেলো কোথায় পালালো।

জিললুর রহমান
সবক’টা গাছ আজ কাঁদুনে উইলো

সব ক’টা গাছ আজ কাঁদুনে উইলো
সাবারাং থেকে টেকনাফ ধরে
উখিয়ার যতো জলা পাহাড়ে জঙ্গলে।

রেইনট্রি রাবার বন মেহগনি শাল
যেমন অঝোরে কাঁদে বরিষণে
বিক্ষুব্ধ বাতাস হা হা
প্রসুতির মতো গোঙাতে গোঙাতে কাঁদে।

আরাকান ঘিরে বাদাবন যতো জানে
রক্তঝরা প্রতিটি প্রান্তর
হু হু কাঁদে আকিয়াব আকিয়াব।

একাত্তরে যশোর রোডের চিত্র
পুনরাভিনয় চলে নাফ অববাহিকায়।

পুলক পাল
আমাদের জলজন্ম

তুমি কী সেখানে আসো গুরু
যেখানে যৌবন আসে মেয়েদের
ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ও কামিজে
সালোয়ারের বিস্রস্ত দাগে।
দাড়ি কামানোর শুরু কবে হয়েছিল গুরু ?
গুরুতর স্খলনের আগে নাকি পরে
এইসব লঘু বাক্যের গুরু চিন্তামণি
পদ্ম-পুকুরের জলে টাল খায়
প্রস্ফুটিত পদ্ম-কোরকে
স্ব-ফণা সাপের নাচ দেখিবার অভিলাষে
হাত গেল পদ্মনাভিমূলে
তুমি কী তথায় আসো গুরু
যেখানে তথাগত গুপ্তচক্র ভুলে
জলের মসুল হয়ে পদ্মাপুরাণ থেকে নেমে
বয়ে যায় নদীর প্রমত্ততায়
আমাদের জলজন্মের যৌবনে।

হাসান হাফিজ
এড়ানো দুষ্কর

ভালোবাসলে
ভালো আর কতটুকু হয়?
গাঙ পাড়ি দিতে গেলে
নিমজ্জন হতে পারে
বিদ্যমান আশঙ্কা ও ভয়।

ভালোবাসলে
বিষ পান
তিতা জান
অহং এবং মান
ধুলায় গড়ায়

তারপরও ভালোবাসা
তোমাকে অগ্রাহ্য করা
যায় না বলেই আমি
আর্ত অসহায়!

আবসার হাবীব
বাস্তবতার গল্প

জীবনের থলে নিয়ে বাড়ি ফিরছে একেক চাকুরীজীবী।

আমিও একজন চাকুরে,
আমার অবস্থান ভালোই, তবে বলা ভালোÑ
খুবই ভালো বলা যায় না।
চাকুরী মানেই মাসের শেষে মাসহারা,
এক টাকা হোক
আর লাখ টাকা
মাসের শেষে হিসাব কষতে হয়।

বেতনের দিনক্ষণে স্ত্রী খুবই নরম সুরে জানতে চায়
পেয়েছো?
কেন?
না, কিছু না- এম্নি

স্ত্রীর সাথে সংসারের বাজার-ফর্দ লিখতে বসে
ঠিক থাকে না অনেক সময় মেজাজ,
প্রিয়তমা স্ত্রীকে তখন অসহ্য মনে হয়।

কী নিবিড়তা দিয়েই না সে তবু
সবকিছু থেকে আগলে রেখেছে এই সংসার।

এই সংসার এমনই,
একের প্রতি অন্যের ভালোবাসায় ভরা জীবনের গল্প।

বিজন মজুমদার
হাওয়ার মতো বাঁচি

সময় এখন বড়ই বেশি রুদ্রক্ষরা
আত্মজ আজ মতিছিন্ন ছন্নছাড়া
নিয়ন আলোয় হারিয়েছে
ফ্যাকাশে এক ঝরাপাতা
লিখতে লিখতে একজনমে
ফুরোবে না স্মৃতির খাতা।
জন্ম-মৃত্যুর আঁতুড় ঘর এক
শালবনেতে ছাওয়া
দেখতেই দেখতেই ফুরিয়ে যাবো
ফুৎকারেতে হাওয়া।

সৈয়দ রফিকুল আলম
পিছুডাক

স্বপ্ন ক্যানভাসে আস তুমি প্রতিমা-প্রতিভূ চিত্রল সৌকর্যে
তুমি যে তোমার মতো, চঞ্চলা হরিণী-দামিনী ধনাঢ্য কন্যা।
শরীরী কিংখাবে মোড়া আদলÑ পোশাক সাজে চটুলগামিনী
ললাটে বিন্যস্ত চুলÑগরিয়সী ছন্দোময়ে হিরণ্য ঐশ^র্যে।

যুগ যুগ পিছে ফেলে সময়ের ক্রান্তিকাল ছুঁয়েছি আমরা
কতো না পরিবর্তন শহরে, বন্দরে, মনে, সুশান্তিকা প্রকৃতিতে
কালের করলে গ্রাসে কতো, মুছে গ্যাছে মধুরিমা খঞ্জরিতে
তবু কেন ছাই-পড়ে মনে, দরিয়া তুফানে চুবানো এ-মরা?

চোখের তারার দ্যুতি নিভে গ্যাছে অবিশ্রাম সময়ের ফেরে
বার্ধক্য আসন্নে ছোঁয়া, থাকি তো দু’জনে অজান্তিকের বাসরে।
জানি, কালে-অকালেও হবে না স্মৃতিকথন স্বর্ণালী আসরে
নীরব ছায়ার টান কেন ডাকে অন্তঃশীল ক্যানভাসে ঘুরে।

তোমার ডাহুক মন, কোলাজে আজো কি স্মৃতি চিহ্ন হয়ে আছে?
মন বলে হেরে যাওয়া ডানা ভাঙা পাখি, চৈতন্যে বিভায় নাচে।

রিজোয়ান মাহমুদ
এক অ-কবি

শব্দ ও সবুজ নিয়ে ব্যর্থকাম এক অ-কবি
লীহেপের কাছে নদীগর্ভ রোদ নিয়ে ফিরে
যেতে চেয়েছিল। একটি কামিয়া দূর থেকে
সেটি দেখে, জেনেছিল বৃক্ষ আজ ধর্মপাখির
দখলে । যে অকবি চুপচাপ শুয়েছিল তলে
সে দেখেছে পাতা সব জ্বলে, জ্বলে না কা-
যে আছে কৌশলে ।।

ফারহানা আনন্দময়ী
একটি না কবিতা

কতদিন হলো বিকেল নামে নি কবিতাবাড়ির ছাদে
বিকেলগুলো থাকে না আগের মতো,
কমলা আলো হারালে
না-কবিতারা ছুটে বেড়ায় বিকেল থেকে বিকেলে
এঘরে, ওঘরে। কবিতারা ঠায় বসে হুইল চেয়ারে;
বিকেলগুলো থাকলো না আর সেই বিকেলে
ডিসি হিল অপেক্ষায়, ডাক দেয় শিল্পকলা…জানে
গহন কোন্ বনের হরিণ ছিল আমার মনে
ঝুপ্ ক’রে নামা খয়েরি বিকেল থমকে থাকেÑ
আবুল হাসানে…
চিবুকের কাছেও আজ বড় অচেনা,
নিজেই চিনি না নিজেকে
কবিতা কী ক’রে পথ চিনে ফিরবে কবিতাবাড়িতে!

বিষণœ ছাদ থেকে ব্যাকুল পথের দূরত্ব কতদূর?
আকাক্সক্ষার সাঁকো পেরোলেই জ্বলে ওঠেÑ
অপারগতার লালবাতি
ভুলে যাই, শেষ কবে কবিতা এসেছিল কবিতার কাছে
না-কবিতারা শুধু ফিরে ফিরে আসে বিকেল থেকে বিকেলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট