চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাতের সফলতার উপর নির্ভর করছে রেফারেল পদ্ধতির সার্থকতা

চিকিৎসা শ্রমিকের দিনলিপি

ডা. হাসান শহীদুল আলম

৫ মে, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

অবশিষ্ট বিশ শতাংশ হচ্ছে মূলতঃ টারশিয়ারী ধাপের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা যোগ্য রোগী। অর্থাৎ হাজার তিনেক রোগীদের মধ্যে ৬০০ জন হচ্ছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করার রোগী। কিন্তু অতিরিক্ত ২৪০০ জন রোগী যাদের চিকিৎসা প্রাইমারী ও সেকে-ারী ধাপের হাসপাতালে হতে পারতো তাদের চাপে টারশিয়ারী ধাপের প্রকৃত ৬০০ জন ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’-এর রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, প্রাইমারী ও সেকে-ারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিধায় রেফারেল পদ্ধতি চালু হলেও রোগীরা রের্ফাড্ হয়ে টারশিয়ারীতেই চলে আসবে। অর্থাৎ প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাতকে সংকটমুক্ত না করে রেফারেল পদ্ধতি চালু করেও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সংকটমুক্ত করা যাবে না। অতএব, প্রাইমারী ও সেকে-ারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে সংকটমুক্ত করে তারপর রেফারেল পদ্ধতি চালু করতে হবে।
প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাতের সংকট সমাধানে জরুরী পদক্ষেপসমূহ :
এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতা নিরসনকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বা বিএমএ এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ক. ইউনিয়ন পর্যায় : ১) বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫৫৪ টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র স্থাপন করা ২) সেখানে মহিলা ও পুরুষ এমবিবিএস চিকিৎসককে চিকিৎসা করতে দেয়া ৩) উক্ত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর চৌহদ্দিতে করা
৪) উপজেলা থেকে ইউনিয়নে আসা-যাওয়ার জন্যে সার্বক্ষণিক সরকারী নিরাপত্তাকর্মী ও বাহন-এর ব্যবস্থা করা ৫) সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র ও সার্জিকেল যন্ত্রপাতি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, মাতৃমঙ্গল সম্পর্কিত বিবিধ কার্যক্রমের ব্যবস্থা রাখা।
খ.উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট নিরসনকল্প : ১) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেই বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের চিকিৎসকদের পোস্টিং দেয়া হোক ২) একত্রিশ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে ৪ জন জরুরী মেডিকেল অফিসার, ৪ জন আউটডোর মেডিক্যাল অফিসার, ৪ জন ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার সৃজন করা হোক ৩) একজন আর এম ও, একজন ইউএইচএফপিও পূর্বের মতোই থাকবেন ৪) সার্জারী, গাইনী, মেডিসিন, শিশু, এনেসথেশিয়া ইত্যাদি জুনিয়র কনসালটেন্ট পোস্টগুলো ডেন সর্বদা পূর্ণ রাখা হয় ৫) সম্ভব হলে ইএনটি, আই অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌন, হৃদরোগ ইত্যাদি জুনিয়র কনসালটেন্ট পোস্ট সৃজন করে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
২.চিকিৎসা সহকারী সংকট নিরসনকল্পে : ১) পোস্টগুলো সর্বদা যেন পূর্ণ থাকে ২) চিকিৎসা সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকাদের নিজ নিজ ইউনিয়নে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োগ দিলে ভালো হয়। ৩. চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও ওষুধপত্র নিশ্চিত করতে হবে। ৪. হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ত্রুটি সারাতে হবে : ১) জরুরী ফা- রাখতে হবে ২) সব ধরনের অপারেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৫. চিকিৎসকদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৬. বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্যে উপজেলার সাথে ইউনিয়ন সমূহের মধ্যে গাড়ী চলাচল উপযোগী রাস্তা থাকতে হবে ৭. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সার্বক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা : ক্রিটিক্যাল কেয়ার এর রোগীসমূহকে সেকে-ারী ধাপের জেলা হাসপাতালসমূহে অথবা টারশিয়ারী ধাপের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে সংকটের ধরণ অনুযায়ী ‘রের্ফাড্’ হিসেবে প্রেরণ করার জন্য সার্বক্ষণিক একাধিক এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৯. চিকিৎসকদের চাকুরীগত মর্যাদা আপগ্রেড করে সম্মানজনক অবস্থানে নেয়ার জন্যে প্রশাসনিক পুনর্গঠন করতে হবে এবং কর্মরত অবস্থায় চিকিৎসকদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
সেকে-ারী স্বাস্থ্যখাতের সংকটের সমাধানে :
জেলা হাসপাতালসমূহকে এমনিভাবে সুবিন্যস্ত করা হবে যাতে এখানে টারশিয়ারী হাসপাতালসমূহের কাছাকাছি চিকিৎসা রোগীরা পেতে পারে।
উপসংহার : এ পর্যন্ত যেটুকু আলোচনা হলো তার সারমর্ম হিসেবে উপসংহারে বলতে চাই যে, জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে যথাযোগ্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। অতঃপর প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাতকে সচল করার মাধ্যমে রোগীদের চাপে নিষ্পেশিত সেকে-ারী ও টারশিয়ারী স্বাস্থ্যখাত দুটিকে বিপর্যস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। এরপর রেফারেল পদ্ধতি চালু কররে তবে জনগণের সুচিকিৎসা পাওয়া নিশ্চিত হবে। আর সংকটের সমাধান না করে আগেই রেফারেল পদ্ধতি চালু করলে সেটা হবে ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেবার মতো একটি অবাস্তব কল্পনা। সমাপ্ত

লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাবিদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট