চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাড়ছে মানবপাচার দ্রুত প্রতিরোধ উদ্যোগ নিন

২৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

মানবপাচার একটি গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। মানবপাচার প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ নানা পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। উল্টো মানবপাচারকারীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও মানবপাচারকে একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- রেখে আইনও প্রণীত হয়েছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠন করা হয়েছে মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটিও। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না মানবপাচার তৎপরতা। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনার খবর আসছে। বিভিন্ন সমীক্ষাও বলছে, বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মানবপাচারের একটি বড় উৎসস্থল। এর নেপথ্য কারণ নিয়ে রয়েছে নানা মত। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাচারকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এটি কারো কাম্য নয়।

পাচারের পাশাপাশি আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়, এমনকি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির মতো অমানবিক ব্যবসাও করছে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো। কয়েক বছর আগে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশ কিছু গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল। গত মে মাসে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে যে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩৭ জনই ছিল বাংলাদেশি। সে সময় জীবিত উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই ছিল বাংলাদেশি। শনিবার প্রকাশিত এক খবর বলছে, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে মেক্সিকোতে আটক হওয়া ৬৫ জনের মধ্যে ১৭ জনই বাংলাদেশি। আবার সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অভিবাসী আটকের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেখানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিল বাংলাদেশিরা। আটককৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী, তারা সবাই মানবপাচারকারী বা দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের অভিশাপই প্রধানত দেশের তরুণদের একটি অংশকে দালালদের সহায়তায় চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে উৎসাহিত করে থাকে। উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা দালালদের খপ্পরে পড়ে। দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার অভাবে নানা প্রলোভনের শিকার হয়ে নারী-শিশুরাও পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। এদের একটি বড় অংশই যৌনব্যবসায় কিংবা ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়। আর তাদের একটি বড় অংশই যায় বাংলাদেশ থেকে। জনসচেতনতার অভাবের পাশাপাশি পাচারকারীদের শণাক্ত করে আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে ব্যর্থতা এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ না থাকায় এমনটি হচ্ছে। পুলিশ বিভাগের তথ্যাযায়ী, মানবপাচারের অভিযোগে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ছয় হাজার ১০৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু শাস্তি হয়েছে মাত্র ২৫ জনের। আবার ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করা হলেও আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়নি। ফলে মানবপাচারের ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ মূলত মানবপাচারের উৎস দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ট্রানজিট ও গন্তব্য দেশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এটি একটি অশুভ লক্ষণ। তাই কালক্ষেপণ না করে এখনই মানবপাচার ঠেকাতে ও পাচারকারীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই গ্রহণ করা জরুরি। আমরা মনে করি, মানবপাচার প্রতিরোধে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। উপকূল ও সমুদ্রে চলাচলকারী নৌযান ট্রলার এবং এসব যানে কর্মরত ব্যক্তির রেজিস্ট্রেশন দ্রুত করতে হবে। কম খরচে বৈধ উপায়ে যাতে বিদেশে প্রচুর লোক যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধ উপায়ে বিদেশ যাওয়ার পরিণাম সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার যুৎসই কর্মসূচিও থাকতে হবে। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে লোকজন সহজেই দালালদের ফাঁদে পড়ে। এ জন্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক অন্দোলন। পাচার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়লে, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান দ্রুত গতিতে হলে এবং পাচারকারীদের শণাক্ত করে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সম্ভব হলে মানবপাচারের মতো গর্হিত কাজ অনেকটাই কমে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট