চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বই

প্রফেসর ডা. মো. আবু তাহের

২৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

আগস্ট মাস শোকের মাস। শুরুতেই স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং ১৫ আগস্ট কালোরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুসহ যারা শাহাদাত বরণ করেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও আন্দোলনে ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ১১ বছর জেলে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন। সুখ-স্বাচ্ছন্দ নিজে পাননি; পরিবারকে দিতে পারেননি। তথাপি স্বাধীনতার লক্ষ্য থেকে এক চুলও বিচ্যুত হননি। তিনি বাঙালীর অনেক বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন, সৃষ্টিতে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। এ জাতির জন্য একটি স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দিয়েছেন। তাই কোন বাঙালীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাক না কেন বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করতে পারে না। আর যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দেবে তাঁরা অতীতের ন্যায় আগামীতেও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই বলছি এখনো সময় আছে, গর্বিত অতীতের আলোয় উজ্জীবিত হয়ে আগামীকে বিনির্মাণ করি সঠিক ইতিহাসের কল্যাণীয় ধারায়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেও সম্মানিতবোধ করি।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রত্যুষে ১২:২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার পর রাত ১:৩০ মিনিটের সময় ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধুকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়। আর সেই কারাগারের প্রিজন (কারাধ্যক্ষ) ছিলেন হাবিব আলী। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদশের অভ্যুদয় ঘটে। অতঃপর ইয়াহিয়া খান ২৬/১২/১৯৭১ তারিখে ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ক্ষমতা হস্তান্তরকালে ইয়াহিয়া খান ভুট্টোর কাছে প্রার্থনা করেন যে, “আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে শেখ মুজিবকে হত্যা করার অনুমতি দাও। আমার জীবনে যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলো শেখ মুজিবকে ফাঁসির কাষ্ঠে না ঝোলানো”। তখন প্রেসিডেন্ট ভুট্টো প্রিজন হাবীব আলীর কাছে এ মর্মে জরুরী বার্তা পাঠান, “যেন শেখ মুজিবকে মিয়ানওয়ালী কারাগার থেকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়”। নির্দেশ অনুযায়ী প্রিজন হাবীব আলী যথারীতি ট্রাক নিয়ে কারাফটকে আসেন এবং সেলের মধ্যে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার সঙ্গে যেতে অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়। অতঃপর বঙ্গবন্ধুকে ট্রাকের মধ্যে লুকিয়ে প্রিজন হাবিব আলী তার চশমা ব্যরাজ বাড়ীতে নিয়ে যান।
সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধু তার স্ত্রীর কাছে টেলিফোন করার ইচ্ছা পোষণ করলে প্রিজন হাবিব আলী বলেন, এটা সম্ভব নয়। আমার একমাত্র কাজ আপনার জীবন রক্ষা করা। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি কি খবরের কাগজ পড়তে পারি? প্রিজন হাবিব আলীর উত্তর ছিল, ‘না’। এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি কি এক কাপ চা পেতে পারি? তখন বঙ্গবন্ধুকে এক কাপ চা দেয়া হয়। এ বাড়ীতে বঙ্গবন্ধু ২দিন অবস্থান করেন। ২ দিন পর প্রিজন হাবিব আলী বঙ্গবন্ধুকে এক সময়কার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শাহুল্যা নামক স্থানে অবস্থিত একটি রেস্ট হাউসে নিয়ে যান। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে ২৫ কিমি দূরে এ শাহুল্যাতে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। শুরুতেই ভুট্টো বলেন, ঘড়ি ও ধস ঃযব চৎবংরফবহঃ ড়ভ চধশরংঃধহ ধহফ ঈগখঅ. “ তারপর বঙ্গবন্ধু বলেন, গৎ. ইযঁঃঃড়, ঞবষষ সব ভরৎংঃ, যিবঃযবৎ ও ধস ধ ভৎববসধহ ড়ৎ ঢ়ৎরংড়হবৎ? উত্তরে ভুট্টো বলেন, ঘবরঃযবৎ ুড়ঁ ধৎব ধ ঢ়ৎরংড়হবৎ হড়ৎ ুড়ঁ ধৎব ধ ভৎববসধহ. তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, ওহ ঃযধঃ পধংব ও রিষষ হড়ঃ ঃধষশ ঃড় ুড়ঁ. তখন ভুট্টো বাধ্য হয়ে বলেন, ুড়ঁ ধৎব ধ ভৎববসধহ. তারপর দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয় এবং ভুট্টো অনেকগুলো প্রস্তাব দিলেন।

বঙ্গবন্ধু বিনয়ের সাথে সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শুধু বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি আমার প্রিয় সহকর্মীদের সাথে কথা বলতে না পারব, ততক্ষণ আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়। শেষে তিনি বললেন, আমি কি এখন দেশে যেতে পারি? ভুট্টো বললেন, হ্যাঁ, যেতে পারেন। কিন্তু কিভাবে যাবেন? পাকিস্তানের চওঅ ভারতের উপর দিয়ে যায় না। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘সেক্ষেত্রে আমি লন্ডন হয়ে যাব’। এরপর ৮ জানুয়ারি ১৯৭২, বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে চওঅ এর একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। লন্ডনে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু বিবিসি’র তৎকালীন বাংলা বিভাগের প্রধান সিরাজুর রহমানের সহায়তায় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থন দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। অতঃপর তিনি লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রাবিরতিতে তিনি দিল্লীতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুন্ঠ সমর্থন এবং ১কোটির বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান এবং এও জানতে চান কবে নাগাদ ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীন দেশে আপনার জন্মদিন পালনের পূর্বে অর্থাৎ আগামী ১৭/০৩/১৯৭২ এর মধ্যে সব ভারতীয় সৈন্য ফিরিয়ে আনা হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এও এক বিরল দৃষ্টান্ত। তৎকালীন বিশ্বনেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের ভূয়শী প্রশংসা করেন। ফিদেল কাস্ট্র্রো বলেন, ”আমি হিমালয় দেখিনি তবে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও সাহস হিমালয়ের সমান”। অথচ ভাবতে অবাক লাগে, যে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, যে পাকিস্তানের কারাগার বঙ্গবন্ধুকে আটকে রাখতে পারেনি, মৃত্যুদন্ড দিয়েও কার্যকর করতে পারেনি, অথচ তার স্বপ্নের স্বাধীন দেশে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান নায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ বেদনাবিধুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বঙ্গবন্ধরু ব্যক্তিগত সহকারী আ.ফ.ম, মুহিতুল ইসলাম। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে ট্রেজারার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে জনাব মুহিতুলকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য রেখেছিলেন। মুহিতুল সাহসী মানুষ। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লালবাগ থানায় মামলা করার সুযোগ না পেলেও দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ২ অক্টোবর মামলা দায়ের করার সুযোগ পান এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় খুনিদের বিচার হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ জনের সাজা কার্যকর হয়েছে এবং আরো ৬ জন খুনি পলাতক রয়েছে। খুনিরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ধরে নিয়ে এসে অনতিবিলম্বে সাজা কার্যকর করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে- এটি একটি নিছক হত্যাকান্ড নয়। এ হত্যাকান্ডের পিছনে যাঁরা ষড়যন্ত্র ও মদদ যুগিয়েছেন তাদের মুখোশ উম্মোচনের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবী। তাহলে বাঙালী জাতির বুকভাঙ্গা দীর্ঘদিনের দুঃখ বেদনার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।

ঋঁষনৎরমযঃ ঋবষষড়ংিযরঢ় নিয়ে যখন আমি টঝঅ এর ঞবীধং অ ্ গ টহরাবৎংরঃু যখন পড়তে গেলাম তখন আমার সুপারভাইজার চৎড়ভ. এধৎু গপষবধহ এবং বিভাগের ঈযধরৎসধহ চৎড়ভ. ঋ.গ. ঘধভঁশযড় একটি গাড়ী করে বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে দেখান। এক পর্যায়ে তারা আমাকে এবড়ৎমব ইঁংয ঈবহঃৎধষ খরনৎধৎু এর ঐধষষ ড়ভ ঋৎধসব এ নিয়ে বলেন, মি. তাহের, তুমি কি এই লোকটিকে চিনো। উত্তরে বললাম, চিনি। তিনি বাঙালী জাতির জনক। পরের প্রশ্ন-কেন তাঁকে হত্যা করা হলো? উত্তরে বললাম কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তবে হত্যাকারীদের কেন তৎকালীন সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত করা হলো? বিষয়টি সেখানে আমি বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি এবং আপনাদের সবারই জানা আছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী; আর পরাজয়ের গ্লানি দীর্ঘস্থায়ী। বাঙালী জাতিকে আজীবন এ কলংকের তিলক ও গ্লানি বহন করে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন সহজ সরল দৃঢ়চেতা তেমনি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। তাঁর “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” ও “কারাগারের রোজনামচা” পড়লে তা সহজেই বুঝা যাবে। আর একটি বিষয় পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে এত বই, প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি কোন রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার এত নজরদারী ছিলনা। পাকিস্তানের ওহঃবষষরমবহপব ইৎধহপয ১৯৪৮-৭০ পর্যন্ত প্রতি মুহূর্ত বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক কর্মকান্ত পর্যবেক্ষণ করত এবং তা সাথে সাথে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হতো। এ ফাইলটির নম্বর ছিল চ.ঋ. (চবৎংড়হধষ ভরষব) ৬০৬-৪৮। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ ফাইলগুলো সংগ্রহ করা হয় এবং ফটোকপি করে ডকুমেন্টগুলো গোয়েন্দা সংস্থার নিকট ফেরত দেয়া হয়। যেহেতু ডকুমেন্টগুলো গোপনীয় দলিল হওয়ায় তা পরে উব-পষধংংরভরবফ করা হয়। বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থার হুবহু ডকুমেন্টগুলো “ঝবপৎবঃ উড়পঁসবহঃং ড়ভ ওহঃবষষরমবহপব ইৎধহপয ড়হ ঋধঃযবৎ ড়ভ ঃযব ঘধঃরড়হ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ” শীর্ষক ১৪টি খন্ডে প্রকাশিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটো খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম খন্ডের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের অধিকার অর্জন, দেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা এবাং বাঙালীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নিয়ে রাজনীতি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাঁর কৌশলী পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি কখনো আপোষ করেননি। একটি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে সংগ্রাম, অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় এনে দিয়েছেন। জাতি হিসেবে বাঙালী বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছে, স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র অর্জন করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যদি বাঙালী জাতির জীবনে কালো দিবসটি না আসত তবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে দিয়ে যেতেন। বাংলাদেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো। বিশ্বসভায় মাথা উচুঁ করে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতো। বাঙালীর অধিকারের কথা বলতে গিয়েই বারবার নির্যাতন ভোগ করেছেন। আর বাঙালীর বিজয় মেনে নিতে পারে নাই বলে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তানপ্রেমীরা। তাঁরা বাঙালীর অগ্রযাত্রাকে অনেকাংশে ব্যাহত করেছেন”।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন ও অহংকার। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বিশ্বস্ত ৪ সহকর্মী জাতীয় নেতা সকলেই শহীদ হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো স্বাধীনতা ও বাঙালীর সেকুলার অস্তিত্বের শত্রুপক্ষ আজো ধ্বংস করতে পারেনি। তারা একের পর এক হত্যাকান্ড চালিয়ে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলোকে ভেঙে ফেলে বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তান/তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। সাময়িক সাফল্য শত্রুপক্ষ অর্জন করলেও চূড়ান্ত সংগ্রামে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা স্বাধীনতার মিত্রের মুখোশ ধারণ করে পুনরায় মানুষের মধ্যে গুজব ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, মত ও জনগণকে আগামীতে আরো সতর্ক থাকতে হবে। সাথে সাথে আজকের শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর আরাদ্ধ সাধনা অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠাসহ গরীব-দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এ সংগ্রামে সারথী হিসেবে পেয়েছি আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে, যাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমানে যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে তা পৃথিবীর কোন শক্তি আর থামাতে পারবে না; জয় আমাদের সুনিশ্চিত। আমরা আশা করি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব-ইনশাআল্লাহ।
বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন বহুদূরে, রেখে গেছেন তার অমর সৃষ্টি স্বাধীন, সার্বভৌম ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। আর কেউ বঙ্গবন্ধুও হতে পারবে না, তবে বাঙালীর হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন-আছেন-থাকবেন অনন্তকাল। যতদিন এ বাংলায় চন্দ্রসূর্য উদয় হবে, যতদিন এ জনপদে পাখির কলরব থাকবে, নদীর কলতান থাকবে, সাগরের গর্জন থাকবে, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে দেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুও বেঁচে থাকবেন। পরিশেষে বলতে চাই-
‘মুজিব তুমি জন্মেছিলে বলেই/জন্ম নিয়েছে দেশ/মুজিব তোমার আরেকটি নাম/স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ।’

লেখক : প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি; সাবেক ডীন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট