চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুবিবাহ প্রতিরোধে চাই সামাজিক আন্দোলন

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ

শিশুবিয়ে বা বাল্যবিয়ে বন্ধে কয়েক বছর ধরেই সরকার নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। নারীশিক্ষার বিস্তার, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলছে। এতে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি এখনও। ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে ৭৪ ভাগই বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের আগে। ১৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই। আর ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হয় ৫২ শতাংশ মেয়ের। বাল্যবিয়ের এই চিত্র অনাকাক্সিক্ষত। সারাজীবনই বাল্যবিয়ের কুফল ভোগতে হয় সংশ্লিষ্ট নারীকে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও পড়ে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব।

বাংলাদেশে সাধারণত অশিক্ষা, অসচেতনতা, নারীর নিরাপত্তাহীনতা, প্রভাবশালীদের কুমতলব, দারিদ্র্য, ‘উপযুক্ত’ পাত্রের সন্ধানলাভসহ নানা কারণে কন্যাশিশুরা অভিশপ্ত বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্রঘরের কন্যাশিশুরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বাল্যবিয়ের ফলে শুধু যে কন্যাশিশুরা শিক্ষা, উন্নয়ন ও শিশু হিসেবে বড় হওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তা নয়; বরং মেয়েদের জীবন নানা রকম সমস্যার আবর্তে প্রবেশ করে। এই সকল সমস্যায় তাদের সারাজীবন ভুগতে হয়। যে মেয়েদের শিশুবয়সে বিয়ে হয়, তারা স্কুলে যেতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পারিবারিক সহিংসতা, যৌনহয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হয়। তারা কম বয়সে গর্ভধারণ করে এবং যৌনসংক্রান্ত সংক্রমণ এমনকি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। নানা গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শিশুবিয়ের শিকার মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ বিবাহপরবর্তী সময়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। অবশিষ্টাংশ লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দিয়ে শিশুমায়ে পরিণত হয়। তারা সংসারের বোঝা বইতে না পেরে নানাবিধ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এমনকি একসময় সন্তান জন্মদানকালে মারা যায় অথবা রুগ্ন, স্বাস্থ্যহীন ও পুষ্টিহীন আরেক শিশুর জন্ম দেন। ফলে তাদের একদিকে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ এবং অন্যদিকে সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রাপ্তি থেকে জাতিকে বঞ্চিত করা হয়।

দেশের নানা প্রান্তে বাল্যবিয়ের কারণে অনেকের জেল-জরিমানাও হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভাবে এ ধরনের সামাজিক ব্যাধির মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং শান্তিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে। ফলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেলেও কাক্সিক্ষত গতি পাচ্ছে না। তাই শিশুবিয়ে বা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কঠোর আইনগত পদক্ষেপ, একইসঙ্গে যেসব কারণে বাল্যবিয়ে হচ্ছে, সেসব চিহ্নিত করে যুৎসই প্রতিবিধান উদ্যোগ নেয়া জরুরি। মূলোৎপাটন করতে হবে ইভটিজিং নামক সামাজিক ব্যাধিরও। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত ভূমিকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধেরও বিকাশ ঘটাতে হবে। মেয়ের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ বিষয়েও নজর দিতে হবে। নিতে হবে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সমাজের অগ্রসর নাগরিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাল্যবিয়ে রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নাটক-সিনেমা, কথিকা, টক শো, আলোচনাসভা, সেমিনার, বিভিন্ন প্রকাশনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাহলে দেশকে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সহজ হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট