চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ছুটি শেষের চিরাচরিত দুর্ঘটনা

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিন

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। সবারই আশা কোনো রকমের দুর্ঘটনার শিকার না হয়ে ঈদের আনন্দকে সঙ্গী করে নিরাপদে সুস্থ দেহে কর্মস্থলে ফিরবেন। সরকারের পক্ষ থেকেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ঈদযাত্রায় সড়কদুর্ঘটনার হার কমেনি। বেপরোয়া গতিসহ নানা কারণে সড়কদুর্ঘটনা পিছু ছাড়েনি।গণমাধ্যমের খবর বলছে মাত্র ২০ ঘণ্টায় সড়কদুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯জন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। শুধু ঈদের ছুটিতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কদুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫০ জনের। সড়কদুর্ঘটনায় নিহতের এ সংখ্যাই বলে দিচ্ছে দেশের সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। সড়কদুর্ঘটনায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষদের মৃত্যুর এই চিত্র খুবই উদ্বেগকর।
ঈদ উৎসবে ঘরে ফেরার মহোৎসব প্রতি বছর দু’বার প্রত্যক্ষ করি আমরা। আবার দু’বারই কর্মস্থলে ফিরতে হয় মানুষকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দু’বারই দুর্ঘটনা নামক নিয়তি মানুষের সঙ্গী হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। নানা অনুসন্ধানী ও গবেষণারিপোর্ট বলছে ইদানিং বাংলাদেশে সড়কে মৃত্যুর প্রধান কারণ বেপরোয়া গতি। এআরআই এর গবেষণাপ্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মূল কারণ শণাক্তের পরও সমাধানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সড়কদুর্ঘটনা। ঈদের সময় তা মারাত্মক রূপ নেয়। আর এর প্রধান শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংগতকারণে বলতে হয়, সড়ক ঠিক করার পাশাপাশি চালকদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল বাস্তবায়ন করাও জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে অল্পবয়েসীদের হাতে মোটরসাইকেল বিপজ্জনক বাহন হয়ে উঠার খবরও বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় এসেছে। অনেক চালক রাস্তায় ন্যূনতম নিয়ম-কানুন মানে না। রাস্তা ফাঁকা পেলে তো কথাই নেই। বেপরোয়া হয়ে উঠে। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
যদিও ইদানিং সড়কদুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর সবাইকে আবেগতাড়িত করেনা, কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির স্বজনদের কাছে এর বেদনা সীমাহীন। আর তিনি যদি হন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাহলে ওই পরিবারের বাকি সদস্যদের জীবনে নেমে আসে অমানিশা। সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি তো আছেই। তাই সড়কদুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে আর নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। সরকারের উচিত এমন আয়োজন নিশ্চিত করা যাতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটিই কমে আসে এবং পর্যায়ক্রমে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্যে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণসমূহের দিকে নজর দিতে হবে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার। বিভিন্ন দেশে ভিডিও ফুটেজ দেখে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও তা অনুসরণ করা দরকার। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশে সড়কদুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সড়কদুর্ঘটনা রোধে এবং সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, চালক ও তার সহকারীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে অ্যাকশন প্ল্যানও আছে। আমরা সড়কনিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মনে রাখা দরকার, ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করতে হলে নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, দুর্ঘটনার পর জরুরি সেবার মানোন্নয়নের বিকল্প নাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট