চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকনাফের পাহাড়ে চলছে যৌথ অভিযান

নিহত ওমর ফারুকের ভাইকে অপহরণচেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা টেকনাফ

২৬ আগস্ট, ২০১৯ | ২:০১ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এবার নিহত যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের ভাই আমির হামজাকে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছে। খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দরা জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে নিহত যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের ভাই আমির হামজাকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। উপস্থিত গ্রামের লোকজন দ্রুত এগিয়ে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ফাকা গুলিবর্ষণ করে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এরপর পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আস্তানায় যৌথ অভিযান শুরু হয়। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ রাত সোয়া ১০টায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ধরতে পাহাড়ে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। আশা করছি রাতের মধ্যেই সফলতা

পাব’। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ৪-৫টি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। ডাকাতি ছাড়াও তারা অপহরণ, ছিনতাই, মাদক কারবারে জড়িত। এসব দলের মূলহোতা রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম। বর্তমানে সে মিয়ানমারের মংডুতে অবস্থান করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রায়ই সে গোপনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজির হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা বিভিন্ন ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে তাদের গোপন আস্তানা তৈরির চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি আস্তানা তৈরিও হয়ে গেছে। শুধু ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গা নন, ক্যাম্প এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের কাছেও এসব ডাকাত গ্রুপ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোড়া এলাকায় স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সদস্যরা এই হত্যাকা-ে জড়িত। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ শুক্কুর নামে দু’জন ২৩ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। ফারুক হত্যার ঘটনায় এটা স্পষ্ট, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ডাকাত দলের সদস্যরা এখন বেপরোয়া। তাদের হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডাকাত দলের সক্রিয়রা হচ্ছে জাকির ডাকাত, সলিম, কামাল, খায়রুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, নেছার, সাইফুল ওরফে ডিবি সাইফুল, রাজ্জাক, ভুলু ওরফে বুইল্লা, রফিক, নুর মোহাম্মদ, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে আবদুল হাকিম। তার একজন স্ত্রী ও ভাই এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ক্যাম্প এলাকায় এক ডাকাত খুন হয়েছে। তাঁদের মতে জাদিমোড়া ২৭ নম্বর ক্যাম্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েক দফা ওই ক্যাম্পে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিল র‌্যাব। অভিযানের সময় র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে ডাকাত দলের সদস্যরা। সন্ধ্যার পর ক্যাম্প এলাকায় ঢুকতেও ভয় পান অনেকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সক্রিয় ডাকাত দলের সদস্যরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে প্রায়ই লুটপাট চালায়। এছাড়া ডাকাত দলের কোনো কোনো সদস্য পুলিশ পরিচয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বাসায় ঢুকে মালপত্র লুট করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পের ভেতর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হয়।

রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে অস্ত্র মামলা হয় ১২টি, ২০১৮ সালে ১৩টি ও ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১১টি। ২০১৭ সালে মাদক মামলার সংখ্যা ছিল ২২টি, ২০১৮ সালে ৯৫ ও ২০১৯ সালে ৯১টি। ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ১৬টি ও ২০১৯ সালে ১৩টি। অপহরণ মামলা ২০১৭ সালে একটিও ছিল না। ২০১৮ সালে ৯টি ও ২০১৯ সালে ১০টি। ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্ততি মামলা ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৭টি, ২০১৯ সালে একটিও নেই। হত্যা মামলা ২০১৭ সালে ৮টি, ২০১৮ সালে ১৫টি ও ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ২০টি। মানব পাচার মামলা ২০১৭ সালে একটিও ছিল না। ২০১৮ সালে ২টি ও ২০১৯ সালে ২২টি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট