চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বহুতল ভবনে চোখের পলকে চুরি স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি

নাজিম মুহাম্মদ

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ২:২৯ পূর্বাহ্ণ

চোখের পলকে আট দশতলা উঁচু ভবনে উঠে যে কোন কক্ষে চুরি করতে পারে একুশ বছরের যুবক মালিঙ্গা। অনেকটা স্পাইডার ম্যান স্টাইলে পাইপ বেয়ে অতিসহজেই উঠে যায় উঁচু ভবনে। চুরি করা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার আর মোবাইল জমা দেয়া হয় নগরীর বাকলিয়া থানার শান্তিনগর বগারবিল এলাকার কথিত ‘বড়ভাইয়ের’ কাছে। বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় থেকে সদ্য কৈশোর পার হওয়া তরুণের দল চুরি করে নগরজুড়ে। গত দুই মাসে একাধিক চুরি করার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে মালিঙ্গা। আনোয়ার হোসেন ওরফে মালিঙ্গা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার বাংলাবাজার গ্রামের গুজা জাফরের ছেলে। নগরীর শান্তিনগর বগারবিল লুৎফুর বাবার কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন কুমিল্লার মুরাদনগর থানার কাজীয়াতল গ্রামের মৃত রেনু মিয়ার ছেলে মাছুম আলি (১৯) ও বি বাড়িয়ার সরাইল থানার লকুমিয়ার ছেলে জিল্লুর রহমান (১৮)।
একধিক চুরি ও চুরি করার কৌশল জানিয়ে গতকাল বুধবার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন মালিঙ্গা।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালিঙ্গা জানান, তার মা বাবা বাকলিয়া বগারবিল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ছোট বেলা থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরিত্যক্ত লোহার টুকরো সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। বিগত তিন চার বছর আগে বাকলিয়া শান্তিনগর বগারবিলের একজন ‘বড় ভাইয়ের’ সাথে তার পরিচয়। তিনি সরকারি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। চুরি করে যা পাওয়া যেতো সবকিছুই বড় ভাইয়ের হাতে জমা দিতো। তাদের মতো আরো একাধিক চোরের গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
চুরি করে আনা প্রতিটি মোবাইলের দুই হাজার আর প্রতিটি ল্যাপটপের জন্য তিন হাজার টাকা করে দেয় ‘বড় ভাই’।
মালিঙ্গা জানান, উঁচুতলার ভবনের পেছনে লোহার পাইপ বেয়ে অনায়াসে আট দশ তলা পর্যন্ত উঠতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক চুরির ঘটনার বর্ণনা দেন মলিঙ্গা। সম্প্রতি চট্টেশ্বরী মোড়ের মধুবন গলির ভেতরে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় রান্নাঘরের পাশের গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে কিছু স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও একটি ল্যাপটপ চুরি করেন। গত ১৯ জুলাই ভোর চারটার সময় সার্সন রোডের ব্যাটারি গলির একটি বাসায় গ্রিল ভেঙ্গে ঢুকে স্বর্ণালংকার,নগদ টাকা ও চারটি মোবাইল সেট চুরি করে। গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় জামালখান আইডিয়াল স্কুলের পাশে একটি ভবনের পাইপ বেয়ে আটতলার একটি বাসার রান্নাঘরের এডজাস্টফ্যান ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে পাঁচটি মোবালি সেট চুরি করে মালিঙ্গা। গত ৯ আগস্ট বিকেলে কাজির দেউরি কাঁচা বাজারের বিপরীতে একটি ভবনের পেছনের পাইপ বেয়ে উঠে চারতলার একটি ফ্ল্যাট বাসার বেলকনি দিয়ে ঢুকে নগদ টাকা, অনেক স্বর্ণালংকার ও একটি মোবাইল চুরি করে। একইভাবে গত ১৬ আগস্ট ভোরে দিদার মার্কেটের পাশে একটি ভবনের পাইপ বেয়ে উঠে তৃতীয় তলার একটি বাসার বাথরুমের এডজাস্ট ফ্যান ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে একটি ল্যাপটপ, তিনটি মোবাইল ও নগদ টাকা চুরি করে।
মালিঙ্গা বলেন, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ চুরি করে বগারবিলের কথিত ‘বড়ভাইয়ের’ হাতে তুলি দিয়েছি। দুই একদিন বিরতি দিয়ে নগরজুড়ে আমরা চুরি করতাম। কারণ চুরি না করলে ‘বড়ভাই’ মারধর করতো।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে এগারোটায় নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা থেকে মালিঙ্গা ও তার দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তাদের কাছে ঘরের দরজা জানালা ভাঙ্গার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক চুরির সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারও করেছে। আমরা জানতে পেরেছি তাদের গ্রুপে আরো একাধিক সদস্য রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত আছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট