চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

চসিকের ৪৯তম সাধারণ সভা ব্যয় বাড়লো সাড়ে ৬ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে(চসিক) নিয়োজিত দৈনিক ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রণোদনা হিসেবে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল চসিকের ৪৯তম সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বছরে চসিকের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। চসিক জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে এবং ডোর-টু-ডোর কর্মচারীরাও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মতো একই হারে বেতন পাবেন। বর্তমানে চসিকে ৬৩১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দৈনিক ও নির্ধারিত বেতনে কর্মরত আছেন। অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর এই বেতন বৃদ্ধির ফলে প্রতিমাসে ৫৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হবে এবং বছরে মোট ৬ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়লো চসিকের। সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন দায়িত্ব গ্রহন পরবর্তী প্রথম ধাপে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় ধাপে তাদের বেতন বাড়ল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চসিকে

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র। সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কেএম ফয়েজুল্লাহ, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম, উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন-উর-রশিদ হাজারী, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেমসহ নগরীর সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন চসিক সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, এই নগরে ১ লাখ ৮৫ হাজার হোল্ডিং থাকলেও কাংঙ্খিত ট্যাক্স পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও নগর পরিসেবা সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চসিককে। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি কনজারভেন্সি আর ১৬টি নন-কনজারভেন্সি ওয়ার্ড রয়েছে। কনজারভেন্সি ওয়ার্ড থেকে ১৭ শতাংশ এবং নন-কনজারভেন্সি ওয়ার্ড থেকে ১৪ শতাংশ হারে কর ও রেইট আদায় করা হয়। তবে নন-কনজারভেন্সি ওয়ার্ডেও কনজারভেন্সি ওয়ার্ডের মত সেবা দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র দক্ষিণ পাহাড়তলীতে পরিচ্ছন্ন সেবা পরিপূর্ণভাবে দেয়া যাচ্ছেনা। অথচ বাংলাদেশ গেজেট আদর্শ কর তফশীল ২০১৬তে ২৭ শতাংশ কর ও রেইট আদায়ের বিধান রয়েছে। এর মধ্যে হোল্ডিং কর ৭ শতাংশ, পরিচ্ছন্ন ৭ শতাংশ, আলোকায়ন ৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা খাতে ৮ শতাংশ। কিন্তু চসিক পূর্বের মত কর ও রেইট আদায় করছে। কর ও রেইট আদায়ে সরকারি নির্দেশনার পরেও চসিক কোনো কর ও রেইট এখনো পর্যন্ত বাড়ায়নি। নিয়মিত যেসব নতুন স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে সেইগুলো হোল্ডিংয়ে আওতায় আনতে হবে। তা না হলে আয় বৃদ্ধি পাবে না। তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে নগরবাসীকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউন্সিলরদের আহবান জানান। এলাকার জীবনমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, নগরীর অনেক এলাকায় এখনো ওয়াসার সংযোগ লাইন স্থাপিত হয়নি। আবার অনেক এলাকায় পাইপ লাইন থাকলেও ওয়াসা পানি দিতে পারেনি। এ নিয়ে জনগণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাস্তা কাটতে হচ্ছে। তাতে নানামুখী দুর্ভোগ হচ্ছে।
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, আশঙ্কাজনক হারে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। নগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবাসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য। একারণে সমাজ ও পরিবারের মাঝে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। বর্তমানে কিশোর-কিশোরী, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা বিপথগামী হচ্ছে। এমনকি আজকাল মেয়েরাও মাদক সেবন করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জাতি মেধাশুন্য হয়ে পড়বে। দেশের অগ্রযাত্রায় স্থবিরতা নেমে আসবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ব্যহত হবে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান মেয়র।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফয়েজুল্লাহ নগরীর পাইপ লাইন সংস্কার ও সংযোগ কাজে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, নগরীতে পুরানো পাইপ লাইন সংস্কার ও নতুন পাইপ লাইন সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা। এই প্রকল্পের আওতায় ৪১টি ওয়ার্ডের ৬৫০ কিমি পুরোনো পাইপ লাইন সংস্কার ও প্রায় ৫০ হাজার নতুন পাইপ লাইন সংযোগ দেয়া হবে। নভেম্বরের দিকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সভায় উল্লেখ করেন। প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে শুরু হবে। আগামী বছর মার্চে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি কর্পোরেশন এলাকার কাউন্সিলরদের কাছ থেকে স্ব স্ব এলাকার সড়কের তালিকা চেয়েছে। চলতি ৩০ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে কাউন্সিলরদের এই তালিকা পাঠাতে মেয়রের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। তালিকা অনুযায়ী কাজ হলে আগামী একশ বছরে আর পাইপ লাইন সংস্কার বা সংযোগ করতে হবে না। কেননা এই প্রকল্পে ব্যবহৃত পাইপগুলোর মেয়াদ একশ বছর। তাই আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে তালিকা পেলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসুত্রিতা সৃষ্টি হবে না।
সভায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ওয়াসার সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন ৫০ শতাংশ সহায়তা দিচ্ছে। রাস্তা কর্তনের অনুমতি এবং নানামুখী সহযোগিতার ফলে ওয়াসা নগরীতে উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে সড়কের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য পুরোনো পাইপ লাইন সংস্কারের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। গত ১০ বছর আগে ওয়াসার পানি সরবরাহ ছিল মাত্র ১২ কোটি লিটার। বর্তমানে প্রায় ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছর আরো ১৪ কোটি লিটার যুক্ত হবে। এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই গ্রাহকেরা ওয়াসার কাছে আসবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। এসময় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, ছালেহ আহমদ, কফিল উদ্দিন, উত্তর পাহাড়তলী জহিরুল আলম জসিম তাদের এলাকার পানীয় জলের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
সভায় গত সভার কার্যবিবরণী আলোচনা সাপেক্ষে অনুমোদন হয়। এছাড়া সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ, আইন শৃংখলা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, যোগাযোগ, দারিদ্র হ্রাসকরণ ও বস্তি উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষন, নারী ও শিক্ষা, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার, ষ্ট্যান্ডিং ও নামকরণ উপ- কমিটির চেয়ারম্যানগণ স্ব স্ব কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন এবং সিদ্ধান্ত হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট