চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বামী ও ভাই হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রিনা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শালা ও দুলাভাইয়ের বাড়িতে শোকের ছায়া

নিজস্ব সংবাদদাতা

২১ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১৭ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় ট্রাক উল্টে দুই মোটরসাইকেল আরোহী দুলাভাই-শালা মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গত সোমবার রাত সাড়ে দশটায় নিহত হওয়ার ঘটনায় দুইজনের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বামী ও ভাই হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ব্যাংকার রিনা আকতার। পল্লী চিকিৎসক ভগ্নিপতি মো. শাহজাহান ও তার শ্যালক ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার অভ্যর্থনা বিভাগের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আরজুর মৃত্যুতে যেন শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো পটিয়ায়। ঘটনার পর থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) সারাদিন পটিয়ার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এ দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। নিহত পল্লী চিকিৎসক মো. শাহজাহানের একমাত্র কন্যা মুনতাহা (১৩) ইউনিয়ন কৃষি স্কুল এন্ড

কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। গতকাল (মঙ্গলবার) সরেজমিনে গিয়ে নিহত শালা আরজু ও দুলাভাই শাহাজাহানের গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত শাহজাহানের স্ত্রী ব্যাংকার রিনা আকতার কাঁদতে কাঁদতে বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। একটু জ্ঞান ফিরলে নির্বাক থাকিয়ে থাকেন। নিহত আরজুর মেজ বোন জয়নাব বেগম জ্ঞান হারিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ায় তাকে স্বজনরা পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে দেখা যায়। জয়নাব বেগমও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে অফিসার হিসেবে সদ্য যোগদান করেছেন। তাদের আত্মীয় স্বজনেরা জানান, আরজু ও শাহজাহানের মধ্যে খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আরজু প্রায় সময় ঢাকা থেকে পটিয়ায় আসার সময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছলে দুলাভাই শাহজাহান মোটরসাইকেল নিয়ে তাকে আনার জন্য যেতেন। কোন সময় আরজু দুলাভাইকে বাড়িতে আসার কথা না জানালে রাগান্বিত হতেন।

এ সময় সন্তান হারানো আরজুর পিতা জহির আহম্মদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ৬ মেয়ে আর একমাত্র ছেলে। ২০১৪ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে চাকুরিতে যোগ দেয়। তারপর থেকে আরজুর মাসিক বেতনের আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে আসছিল। আমি অনেক কষ্ট করে আমার একমাত্র ছেলে আরজু ও ৬ মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। ছোটখাট একটি চাকরি করতাম। এখন তো কিছুই করতেছি না। বাড়িতে সময় কাটাচ্ছি। আমার ৬ মেয়ে মধ্যে দুইজন ব্যাংকে চাকরি করে। তারা দুইজনসহ মোট তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আরো তিন মেয়ের মধ্যে একজন স্নাতকের ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আর বাকি দুইজন এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে’। তিনি বুক চাপড়ে বলেন, ‘এতো বড় শোক আমি কীভাবে সহ্য করব’।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে পৌরসদরের কাগজীপাড়া এলকায় শাহ্ আশরাফিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নিহতদের নামাজে জানাজা শেষে তাদের দুইজনকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপশি চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে চাপা পড়ে ঘটাস্থলে প্রাণ হারান রিনা আকতারের স্বামী পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান (৪০) ও তার একমাত্র ভাই ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম আরজু (২৮)।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট