চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুদের মানসিক চাপ আমরাই বাড়িয়ে দিচ্ছি!

শিমু বিশ্বাস

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মানব সভ্যতার বিকাশের শুরু থেকেই মানুষ তার কৌতূহল মেটানোর জন্য দূর থেকে দূরান্তরে ছুটে চলছে। কখনো সে খাদ্য অন্বেষণে, কখনো অজানাকে জানার জন্য, কখনো প্রয়োজন মেটানোর জন্য, কখনো জ্ঞান অন্বেষণের জন্য। কর্মব্যস্ততায় মানুষ আজ বিশেষভাবে নিয়োজিত। বলা যায়, আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষের নানা ব্যস্ততা ও কর্মকান্ডের ব্যাপকতা অনেকগুণ বেড়েছে। বর্তমান সময়টা যেন ছুটছে খুব দ্রুত গতিতে অনেকটা রকেটের মতো। এতটুকু অবসর যেন সে পায় না অথবা অবসরকে খুঁজে নিতে হয় অন্যরকম করে।

সময়টা যান্ত্রিক সভ্যতায় রূপ নিয়েছে। এ যুগে মানুষ যন্ত্রের মতন ছুটছে। কেমন যেন একটা যান্ত্রিক জীবন! যে জীবনে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয় নানা কাজে। সে কাজও যেন ফুরোতে চায় না। সারাটা দিন ব্যস্ত থাকার পর ক্লান্তিতে ঘরে ফেরা হয়। ঘরে ফিরে ও সে ক্লান্তি যেন ছাড়তে চায় না। ঘুম নেমে আসে চোখে। ঘুমোতে ঘুমোতেই সকাল। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আগেকার দিনগুলোতেও পুরুষ মহিলারা কাজ করতো। অনেক বেশি পরিশ্রম করতো। সারাদিন খেতে- খামারে কাজ। অনেক কষ্ট। তারপরে ও একটা সময়ে গিয়ে তারা কিন্তু ঠিকই

আনন্দ -উল্লাস, হৈ-চৈ পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি করতে পারতো। হাসি কান্না, সুখ-দুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার মতো তাদের যথেষ্ট সময় ছিলো।

কিন্তু এখন এ যান্ত্রিক যুগে কি সময় হয় আমাদের? ক’জন মানুষ পরিবারকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারছে? বেশিরভাগই পারছে না। তার কারণ ব্যস্ততা। এ ব্যস্ততা খুব ভয়ানক রূপ নিচ্ছে দিনের পর দিন। কেন আমরা এতটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি বলতে পারেন?
সে উত্তর আমাদের জানা নেই। বাস্তবতা হল এই জীবনকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে অর্থ উপার্জন বা বর্তমান সময়ের এই সমাজ ব্যবস্থা সবকিছুই আমাদের যান্ত্রিক করে তুলছে।

আজকাল অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা মা-বাবারা আমাদের শিশুকে যান্ত্রিক হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলছি। ভুলতে বসেছি শিশুদের মানসিক চাপ আমরাই বাড়িয়ে দিচ্ছি। সারাদিন পড়াশুনা, কোচিং, কোচিং শেষ হলে আবার বাসার টিচার, এরপর নাচ, গান, ড্রইং, আবৃত্তি পাশাপাশি এসব তো আছেই। লেখাপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা একটু হলে ও করতে হয়। তা না করলে শিশুটি আরো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। কারণ সংস্কৃতি মানুষের সুপ্ত ও মানবিক বিকাশ ঘটায়। এটি একজন মানুষকে সামাজিক মানুষ হিসেবে সমাজে বসবাস করার শিক্ষা দেয়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার যা ভয়াবহ অবস্থা তাতে একজন শিশুর যেন নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকে না। পড়ার উপর পড়া। এ বই, সে বই, কত বই! বইয়ের যেন বাহার! বাচ্চাটি ঠিকমতো তার স্কুলের ব্যাগটি কাঁধে নিতে পারে না শুধুমাত্র তার এত বইয়ের চাপে। সে ব্যাগ ও বহন করতে হয় বাচ্চাটির মা কিংবা বাবাকে। নেহায়েত বাচ্চার কষ্ট হয় বলে। কী যে কঠিন অবস্থা চলছে আমাদের চারপাশে। দিন দিন একজন মানুষ যেন রোবটে পরিণত হচ্ছে।

এতসব সমস্যার সমাধান হয় না কখনো কারণ যতক্ষণ আপনি শ্রম দিতে পারবেন ততক্ষণ আপনার মূল্য থাকবে আপনার কাজের জায়গাটিতে। আর এভাবে আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলো,আত্মীয় স্বজন থেকে দিনের পর দিন কেমন যেন একটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র আমাদের যান্ত্রিক জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।
সময় কখনো থেমে থাকে না। কিন্তু এই যান্ত্রিক জীবন আমাদের সময় প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে যেন তার নিজের স্বার্থে।
নিজের প্রয়োজনের তাগিদেই আসলে মানুষ এখন অন্যকে সময় দিতে পারছে না। অথবা সময় দেওয়ার মানসিকতা সে হারিয়ে ফেলছে। বর্তমানে মানুষের আশা, আকাক্সক্ষা, লোভ স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ইত্যাদি বেড়েছে। আর এর কারণে মানুষ এখন প্রতিনিয়ত অন্য মানুষগুলোর সাথে তুলনা করছে। কারো বাচ্চা পরীক্ষায় প্রথম হলে আমার বাচ্চাকেও হতে হবে প্রথম। আরেকজনের ছেলে ডাক্তার হলো বলে আমার ছেলেকেও ডাক্তার হতে হবে। হ্যাঁ ভালো কিছু সব মা-বাবারই আশা থাকে। তাই বলে আমরা দিনরাত অন্যদের ব্যাপারগুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছি। কে কতটা নিতে পারছে বা তার মেধা কতটুকু, সামর্থ্য কতটুকু তা একবার ও ভাবছি না। আর ভাবছি না বলেই আমরা এক-একজন যন্ত্র হয়ে উঠছি। এর জন্য বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের দিকে আঙুল তুলছে। সময়ের পদচারণায় আমরা এমন ব্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজেদের নিয়ে যেখানে গোটা সমাজটাই যেন ছুটছে দিন রাত। এই ছুটোছুটি আমাদের কাছের মানুষদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। দিচ্ছে সব রকম আবে

গ-অনুভূতিকে দূরে সরিয়ে। মানুষের মধ্যে মানবিকতা, সহানুভূতি, আবেগ, ভালোবাসা, মনুষত্ব্য আগে যেখানে ছিল সেখানে জায়গা করে নিয়েছে এখন স্বার্থপরতা, উচ্চাভিলাস, লোক ঠকানো, হিংস্বা, বিদ্বেষ, নিষ্পেষণ। এর থেকে দূরে গিয়ে বাঁচতে হবে আমাদের সকলকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট