চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

তামিম ইকবালের পর বিশাল শূন্যতা

চট্টগ্রামের ক্রিকেটাররা যথার্থ প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না : মহিউদ্দিন

দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু

১৮ আগস্ট, ২০১৯ | ২:১০ পূর্বাহ্ণ

সেই ২০০৭/৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিলো তামিম ইকবালের। তারপর থেকে বিশাল এক শূন্যতা। সে রকম আর কোন জাতীয় দলে খেলার মতো ক্রিকেটার চোখে পড়ছে না। কেন এমনটা হচ্ছে, এর কারণটা কী?

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার এবং পাতিয়ালায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোচ মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে ক্রিকেটাররা যথার্থ প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। বেসিকের দিকে কোন দৃষ্টি নেই। স্ট্রোককে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে অতি অল্পেতেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। কর্মকর্তারাও খুব একটা আন্তরিক নয়। সকলেরই কর্মাশিয়াল চিন্তাভাবনা। কোন ক্রিকেটার একটু ভাল খেললেই টাকার পেছনে ছুটছে। খেলাটাকে আন্তরিকভাবে নিচ্ছে না। এর মাঝেও অনেকে চেষ্টা করছে, কিন্তু যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাবে এগুতে পারছে না।

বেসিক ট্রেনিংটা হচ্ছে, এই যেমন বল ঠেকানো, ফ্রন্ট ফুট ও ব্যাকফুটে বল ডিফেন্স করা, ফুটওয়ার্ক, বলের লাইনে পা রেখে খেলা, চার ও ছক্কার দিকে না তাকিয়ে সিঙ্গেলস’র উপর খেলা। ভাল বল ছেড়ে দিয়ে বাজে বলটাকে কাজে লাগানো ইত্যাদি।
বতর্মানে রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী দীর্ঘদেহী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৬৮ সালে চিটাগাং কলেজে ছাত্রাবস্থায় ক্রিকেটে তার হাতেখড়ি। ১৯৭০ সালে আবেদিন কলোনি ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগে কয়েক বছর খেলার পর চট্টগ্রামের অন্যতম সেরা স্টার ক্লাবে ১৯৮০/৮১ সাল পর্যন্ত খেলে অবসর নেন। এ সময়ে চট্টগ্রাম যুব ও জেলা দলের হয়ে একাধিক টুর্নামেন্টে সাফল্যের সাথে অংশ নেন। খেলা ছাড়ার পর কোচিং-এ মনোনিবেশ করেন। ১৯৮২ সালে সরকারি খরচে পাতিয়ালা থেকে ক্রিকেট কোচ হিসেবে ১০ মাসের ট্রেনিং কোর্সে অংশ নেন। এরপর চট্টগ্রাম যুব, জেলা ও বিভাগীয় দলে অনেকবার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্লাব দলেও ফ্রেন্ডস ক্লাব ও স্টার ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন। এরপর চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে গড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে দল তার কোচিংয়ে ঢাকা লিগে অংশ নেন। এই রেলওয়ে দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে তার অনেকটা গর্ব করার মতো একটা ব্যাপার থাকলেও সেদিকে না গিয়ে মহিউদ্দিন সহজভাবেই বললেন, আকরাম খান, নুরুল আবেদিন নোবেল, শহীদুর রহমান, জাহিদ রাজ্জাক মাসুম ও ফজলে বারী খান রুবেলের মতো ক্রিকেটারকে এই রেলওয়ে দলে আমিই প্রথম কোচ হিসেবে বেসিক ট্রেনিং করিয়েছিলাম। আমারই অধীনে এরা সকলে ঢাকা লিগে অংশ নেয়। সেখানে ওদের খেলায় মুগ্ধ হয়ে বড় বড় ক্লাবগুলো ওদের দলে ভেড়ায়। সেখানে আরো অভিজ্ঞ কোচের ছোঁয়ায় ওরা আরো ভাল ক্রিকেট খেলেছে। আমি সৌভাগ্যবান যে, ওরা সকলেই জাতীয় দলের খেলার সুযোগ পেয়েছিলো।

আলাপ প্রসঙ্গে বেশ মজা করেই বলছিলেন আকরাম খান ও নোবেলের কথা। এক সময় বেশ ভালো ফুটবল খেলতেন আকরাম খান। চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগ লিগেও খেলেছিলেন। আমি তাকে বললাম, আকরাম তুমি ক্রিকেট খেল, ক্রিকেটে তোমার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। ও কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন আকরাম খান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। একই কথা তিনি নুরুল আবেদিন নোবেলকেও বলেছিলেন।

এবার তিনি কৃতিত্বটা নিতে চাইলেন ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো চিটাগাং অফিসার্স ক্লাব ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠার। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন ক্রিকেটার নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মসজিদের ঠিক বিপরীতে রাস্তার ওপারের মাঠে (এখন সেখানে নার্সারি করা হয়েছে)-ই চলতো প্রশিক্ষণ। এক সময়ে এ মাঠ ছেড়ে দিতে হয়। পরে জিমন্যাসিয়াম ও আউটার স্টেডিয়ামে চলতো একাডেমির প্রশিক্ষণ। পরে মাঠ পাওয়া না যাওয়ার কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
অন্য প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন বললেন এতোদিন ধরে বুকে চেপে রাখা এক বেদনার কথা। তিনি বলেন, অনেকটা অভিমান করেই এখন আর স্টেডিয়ামে যাই না। একবার ওনার উপর দায়িত্ব পড়েছিলো চট্টগ্রাম জেলা যুব দল গঠনের। তখন স্টার যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে ৬০ জনকে বাছাই করে ৫/৭ দিনের ট্রায়াল শেষে ১৬ জনের একটা তালিকা কর্মকর্তাদের জমা দেন। কিন্তু সেখান থেকে মাত্র ৩ জনকে রেখে ১৩ জন নতুন ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতেই তিনি ভীষণভাবে মর্মাহত হন এবং মূলত তারপর থেকেই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে তাঁর একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আমাদের মূল্যায়ন করা হয় না। কায়িক পরিশ্রম করতে না পারি পরামর্শতো দিতে পারবো। তাইতো অভিমান করেই সরে এসেছি।

তিনি বলেন, মরহুম মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি ক্রিকেট একাডেমি খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি। তাঁর ধারাভাষ্যকার হয়ে ওঠার কাহিনীটা বেশ চমকপ্রদ। অনেক বছর আগে চট্টগ্রামে বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে ঢাকা আবাহনী এবং চলচ্চিত্র নায়ক-নায়িকাদের এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ধারাভাষ্য দিয়েই শুরু হয় মহিউদ্দিন আহমেদের নতুন এক অধ্যায়। সেই যে শুরু, তারপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দিতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। স্টার সামার দিয়েই শুরু করার পর তিনি বহু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দেন এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট