চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরিদর্শনে পাউবো’র টিম

মাতারবাড়ি বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক

মহেশখালী

এ.এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী

১৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। বেড়িবাঁধের ভাঙন দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ১০-১৫টি বসতঘর ও গোয়ালঘর ভেসে গেছে সম্প্রতি। ইউনিয়নের পশ্চিমে সাগরের কূলঘেষে অবস্থিত ষাইটপাড়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ার কারণে সাগরের পানির করাল গ্রাসে বিলীন হতে চলেছে বেড়িবাঁধটি। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) টিম হতবাক হয়েছেন।

মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর আবেগময় স্ট্যাটাস ও ফ্যাক্স বার্তা পেয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিমের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার জেলা শাখার তত্ত্বাবধায়ক রুহুল আমিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরার নেতৃত্বে একটি টিম গত ১৪ আগস্ট বিকেল ৪টায় মাতারবাড়ির সাইটপাড়ার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এমনকি কীভাবে এ বাঁধ সাগরের প্রচ- ঢেউ থেকে রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে কোন সূত্র খুঁজে না পাওয়ায় তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি এ টিম। তবে আপাতত বর্ষায় সাগরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে কাজ শুরু করবেন বলে চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজনকে জানিয়েছেন।

এদিকে জোয়ারের পানি বাড়লেই পুরো ইউনিয়ন ডুবে গিয়ে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত রমজানের ঈদের পর পর ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তা রহস্যজনক কারণে বন্ধ করে দেয়ায় ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে বলে ষাইটপাড়ার বাসিন্দারা জানান। এতে ওই এলাকার একটি মসজিদসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া বেড়িবাঁধ অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি। পড়ে গেছে অনেক গাছপালা। বাকি বেড়িবাঁধে বসানো বালুভর্তি জিও টিউব থাকায় তা মোটামুটি অক্ষত রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করার কারণে বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে উপকূলের এই ইউনিয়নটি। মাতারবাড়ির চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত কর্তারা মুখে আশ^াস দিয়ে আসছে শুধু। পানি নিষ্কাশনের সকল স্লুইচ গেট কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মাতারবাড়িবাসীকে। এছাড়া মাতারবাড়ির পশ্চিমে সাগর চ্যানেল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করায় পশ্চিমের দীর্ঘতম চরটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় সাগরের প্রবল ঢেউ সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধের ওপর। যার কারণে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা পূর্বকোণকে বলেন, মাতারবাড়ি ষাইটপাড়ার ভাঙা বেড়িবাঁধ এলাকায় জোয়ারের পানি ঠেকাতে ৭০০ মিটার জিও টিউব দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বর্ষাকালশেষে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
উপজেলার সাগর ও নদীর মাঝখানে অবস্থিত মাতারবাড়ি ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ ও চিংড়ি জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন সফল করতে মাতারবাড়িবাসী ২টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৬১৪ একর ব্যক্তি মালিকাধীন খতিয়ানভুক্ত জমি দিয়েছে। এ জমি ২০১৪ সালে অধিগ্রহণ করার পর কোলপাওয়ার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ প্রকল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাতারবাড়ির সাইরার ডেইলের পশ্চিমে সাগরের পাড়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করায় বর্ষার শুরুতে মাতারবাড়ির দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার চরটি বিলীন হয়ে গেছে। এতে সাগরের প্রবল ঢেউ একের পর এক আঘাত হানায় নয়াপাড়া নামক স্থানে প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে সাগরের সাথে একাকার হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিম পরিদর্শনের সময় উপস্থিত মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও লোকজনকে বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হলে দীর্ঘ পরিকল্পনার দরকার। আপাতত বর্ষায় সাগরের জোয়ার থেকে এলাকাকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করবেন এবং বর্তমানে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। এ সময় চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ অনুরোধ করে বলেন, বাঁধ নির্মাণের সাথে সাথে বাঁধের বাইরে পাথর ফেলা না হলে কোন অবস্থাতে বাঁধ রক্ষা করা যাবে না। বাঁধ রক্ষার বিষয়টি মাতারবাড়িবাসীর অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট