চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সুদীপ্ত হত্যার নির্দেশদাতা ‘বড়ভাই’ মাসুম ঢাকায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ আগস্ট, ২০১৯ | ১১:৪০ অপরাহ্ণ

অবশেষে পালিয়ে যাওয়ার আগেই সুদীপ্ত হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল রাত ১০টার দিকে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিদারুল আলম মাসুমের দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করায় গত শনিবার দুপুরে তিনি নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দুটি জমা দিয়ে আসেন।
পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মেট্রো) মঈনুদ্দিন বলেন, ‘সুদীপ্ত হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামীর জবানবন্দিতে দিদারুল আলম মাসুমের নাম এসেছে। এই হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে তাকে আমরা ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি।’
সুত্রে জানা যায়, শনিবার অস্ত্র জমা দিয়ে মাসুম প্রথমে তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে যায় এবং সেখান থেকে গতকাল রবিবার সকালে ঢাকায় যায়। ইতিমধ্যে তার কানাডার ভিসাও রেডি করা ছিল। দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
মাসুম নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে নগরীর এক ডজন হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করেও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
গত ২৯ জুন লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলালের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্য গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকে আহত হন। এ ঘটনার পর গত ২২ জুলাই দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক। অভিযোগে দিদারুল আলম মাসুমকে ১৯৯১ সালের ১৩ আগস্ট যুবলীগ নেতা রিপন হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি, ১৯৯৩ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল মোমিন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ যুবলীগ নেতা মিজান হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি, ১৯৯৭ সালের ১৩ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা মুজিবর হত্যার ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তার বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ২০১৫ সালে ২৮ মে খোকন সরকার হত্যা, ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল শরীফ ওরফে টেম্পো শরীফ হত্যা ও ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখল ও মাদক ব্যবসারও অভিযোগ আনা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নগরের লালখান বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার আলম বাজার গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে দিদারুল আলম মাসুম। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে তিনি মধ্যপ্রাচ্য চলে যান। সেখানে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি দেশে ফিরেন। ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল নগরীর ওয়াসা মোড়ে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষে দিনদুপুরে প্রকাশ্য শর্টগান বের করে গুলি চালান দিদারুল আলম মাসুম। ওই সময় তার কাছে থাকা অস্ত্রের বৈধতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে বের করে নিয়ে এসে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার একডজন অনুসারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোক্তার হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু নামে দুইজন বড় ভাইয়ের নির্দেশে সুদীপ্তকে পিটিয়ে খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকার করেছেন। তবে বড় ভাই হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু গত ১২ জুলাই মিজানুর রহমান নামে আরেক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট