চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

জঙ্গি সাইফকে নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল তানজির

ফেসবুকে দু’ মাসের পরিচয়ে বান্ধবীকে নিয়ে ঘর ছাড়ে

নাজিম মুহাম্মদ

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ফেসবুকের মাধ্যমে দুই মাসের পরিচয়ে বান্ধবীকে নিয়ে ঘর ছেড়ে জঙ্গি নেতা সাইফুল ইসলাম সাইফের কাছে চলে যায় কলেজ ছাত্রী সাফিয়া আকতার তানজি। কথা ছিলো- সাইফকে নিয়ে সিরিয়া চলে যাবে। তানজির সাথে ঘর ছাড়ে নগরীর সলিমা সিরাজ মহিলা মাদ্রাসার ফাজিল শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাতুল নাঈমা। তানজি কলেজে অধ্যয়নরত ছিল বিধায় পুর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তাকে নিয়ে গিয়ে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বরিশালে মাদ্রাসায় ভর্তি করায় সাইফ। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা সাইফ বরিশালের উদয়পুর মুসলিম আখন্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত সুলতান সোলেমানসহ বিভিন্ন বিদেশি ভাষার সিরিয়ালের বাংলা ডাবিংয়ে কণ্ঠ দেয়ার কাজ করেন। সাইফকে পাওয়া গেলে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
বাবা আবদুস সালাম মসজিদের ইমামতি করার পাশাপাশি লোকজনকে দোয়া পড়া দিতেন, এসব পছন্দ হতো না তানজির। নিজের মতাদর্শের বিশ্বাসী কাউকে না পাওয়ায় একাধিক পাত্র আসলেও বিয়ে করতে রাজি হয়নি। অবশেষে স্কুল শিক্ষক সাইফের জঙ্গি কর্মকা-ই পছন্দ হয় তার।
গত ২৬ জুন সকালে কেনাকাটার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মায়ের মুঠোফোনটি হাতে ছিল। জোহরের নামাজের পর মায়ের কাছে ফোন করে তানজি বলে, ‘আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে এসেছি’। বিকেলে চলে আসবো। পরে সন্ধ্যায় জান্নাতুল নাঈমা নামের একজনের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে বলে, ‘আমি বাসায় আসবো না। একটি ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে। আমার বাসা থেকে বের হবার বিষয়টি পুলিশকে বলবেন না। বললে ক্ষতি হয়ে যাবে। এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়। গত ৭ জুলাই মধ্যরাতে বরিশালের কোতোয়ালী থানার রূপাতলি বাস স্ট্যান্ড এলাকার আয়শা ছিদ্দিক (রা.) মহিলা মাদ্রাসার হোস্টেল থেকে দুইজনকে আটক করে র‌্যাব-২।
এ ব্যাপারে গত ১০ জুলাই নগরীর বন্দর থানায় ১৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন র‌্যাব-২ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ফারুখ হোসেন। এরমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, জান্নাতুল নাঈমা, সাফিয়া আকতার তানজি, আফজাল হোসেন ও গৃহবধূ আলেমা আক্তার স্বপ্না। আফজাল নিষিদ্ধ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা (একাংশের) শিবিরের সভাপতি বলে জানা যায়। নাঈমা সন্দ্বীপের হারামিয়া গ্রামের হাফেজ আবুল কাশেমের মেয়ে। নগরীর হালিশহর বি ব্লকে পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতো।
চট্টগ্রাম মেট্টোপালিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পলাশ কান্তি নাথ জানান, গ্রেপ্তার তিন নারী ও এক যুবককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা নিজেদের কথাবার্তা আদান প্রদানে নির্দিষ্ট ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করতো। চারজন ছাড়া আরো যাদের কথা এসেছে তারা এ ঘটনায় কতটুকু জড়িত তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হবে। গ্রেপ্তার চারজনই জিজ্ঞাসাবাদে সাইফের কথা বলেছে। তাকে পাওয়া গেলে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে এমনটি আশা করছি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্কুলের শিক্ষকতার পাশপাশি সাইফ জঙ্গি গ্রুপ আনসার আল ইসলামের সাথে জড়িত। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তানজি ও নাঈমাকে খালাতো বোন পরিচয়ে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে আয়শা ছিদ্দিকা মাদ্রাসায় (আবাসিক) ভর্তির ব্যবস্থা করে দেয় সাইফ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট