চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাতকানিয়া ও চন্দনাইশকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়ছে মানুষ

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ৪ দিন ধরেই অচল শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গৃহহীন হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। চন্দনাইশের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো পানি নিচে রয়েছে। লোহাগাড়ায় টংকাবতী নদীর ভাঙ্গনে এলাকাবাসীর মাঝে আতংক কাজ করছে। এদিকে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
চন্দনাইশ : আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা ৮দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চন্দনাইশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল ১৫ জুলাই বিকালে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পুরো চন্দনাইশ উপজেলা এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। উপজেলার পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছে না বানভাসি মানুষ। উপজেলার দক্ষিণ হাশিমপুর বড়পাড়া (কসাইপাড়া), পাঠানিপুল, দেওয়ানহাট, এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে দুই থেকে আড়াই ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গত ১৩ জুলাই সকাল থেকে গতকাল ১৫ জুলাই সকাল পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ৮ দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন যাপন করছে উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ। গত ১৩, ১৪ জুলাই শঙ্খনদীর পানি উপচে পড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলে উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ১৩ জুলাই দুপুর থেকে বন্যার পানি বাড়তে থাকে এবং স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যায় রূপ নিয়েছে। অনেকেই নিজস্ব বাড়ি-ঘর ছেড়ে নৌকায় করে আত্মীয়-স্বজন কিংবা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ নিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় ছুটছেন সরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এছাড়া স্থানীয় অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করছেন বন্যা দুর্গত এলাকায়। তবে তীব্র পানির স্রোতের কারণে প্রকৃত বানভাসির কাছে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে চন্দনাইশের বিস্তীর্ণ এলাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে তীব্রগতিতে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেনি। চন্দনাইশ থানা পুলিশ ও দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় চন্দনাইশের কসাইপাড়া অংশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহন চলাচল করলেও তীব্র যানজট লেগে থাকে মহাসড়কে। গতকাল ১৫ জুলাই মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলেও যানজট রয়েছে। এতে সড়কের উভয় পাশে কমপক্ষে ২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বাস চালক রফিকুল ইসলাম। এভাবে শত শত যানবাহন মহাসড়কে আটকে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মহাসড়কে তীব্র যানজট হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পায়ে হেঁটেও গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। দেড় লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপজেলার ভানবাসী একটি পরিবারেও চুলায় আগুন জ্বালানো সম্ভব হয়নি। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে যানবাহন চলাচল করতে না পারার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু পিকআপ চালক যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। খরস্রোতা শঙ্খনদীর পানি উপচে পড়ে তীব্রগতিতে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার চাগাচর বারুদখানা, রায়জোয়ারা, দিয়াকুল, লালুটিয়া, বৈলতলী, বরমা, দোহাজারী, কিল্লøাপাড়া, জামিজুরী, পূর্ব দোহাজারী, হাশিমপুর, চন্দনাইশ পৌরসভা, বরকল, বরমা, ধোপাছড়ির, ছামাছড়ি, শামুকছড়ি, ছিড়িংঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে থাকা বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে কৃষকদের চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যে সব কৃষক ইতিমধ্যে আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করেছে তাদের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে দূর্দশায় পড়েছে আউশ চাষিরা। ধোপাছড়ি ইউনিয়ন দিয়ে গতকাল সোমবার পর্যন্ত তীব্র গতিতে পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রতিদিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্ল­াবিত হচ্ছে। অনেক এলাকার শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছেন না। প্রায় প্রত্যেকটি স্কুলে উপস্থিতির সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবনে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলায় বেশ কয়েকটি মাছের প্রজেক্টও ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরাও পড়েছেন লোকসানে। উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ডুবে থাকায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বরকল ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেছেন, তার ইউনিয়নে অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ সড়ক ও মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শতভাগ আউশ ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা বলেছেন, অবিরাম বর্ষণের ফলে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চন্দনাইশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার পানিবন্দী অসহায়দের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে সাথে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারিভাবে গত ৪ দিনে ৪৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১৫ মেট্রিক টন ত্রাণ মজুদ রাখা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে ২ হাজার পেকেট ইতোমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগ লোক পানিবন্দি হয়ে আছে। অনেক জায়গায় যোগাযোগের সমস্যার কারনে ত্রান নিয়েও যাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একজন টেক অফিসার নিয়োগ করে বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন। অপরদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, এখন রকম ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। পানি নেমে গেলে মাঠ পর্যায়ে প্রতিবেদন দেয়া সাপেক্ষে ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব। ২ হাজার ১’শ ২৫ হেক্টর টার্গেটের মধ্যে ১ হাজার হেক্টর ইতিমধ্যে ভেসে উঠেছে। আজ এবং কাল বৃষ্টি না হলে আরো ৫’শ হেক্টর ভেসে উঠবে। তাছাড়া আউশ ধান পানিতে সাধারনত নষ্ট হয় না। যে সকল সবজি হারব্রেট করা রয়েছে তা ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই বলে তিনি জানান। অপরদিকে মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, চন্দনাইশে ছোট বড় ৩ হাজারের অধিক মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। এসব মৎস্য প্রকল্প ৫’শ হেক্টর জলাশয়ে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, চন্দনাইশ-সাতকানিয়া এলাকায় ৯’শ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। ইতোমধ্যে এ সকল লাইনের বেশ কিছু এলাকা পানিতে নির্মজ্জিত রয়েছে। বন্যার কারণে ৪টি খুঁটি, ১১টি ট্রান্সফর্মার, ৩টি ক্লোফার্ম নষ্ট হলেও বিদ্যুৎ লাইন চালু রাখার জন্য ১১ জন লাইনম্যান, প্রকৌশলী, এজিএম, জিএম সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আলম বলেছেন, বন্যার সময় একজন দু’বছরে শিশু পানিতে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তাছাড়া গত ১৪ জুলাই দু’জনকে সাপে কাটলে তাদেরকেও প্রাথমিক চিকিৎসার পর চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশে ছোট বড় ২৫ টি গরুর খামার, ব্রয়লার, লেয়ার ও দেশীয় মিলে ৯৬ টি পোল্টি ফার্ম রয়েছে। এ সকল খামার ও ফার্ম থেকে মুরগী ও গরু সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তেমন কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। তবে চারণভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গরুর খাদ্য সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চন্দনাইশে ৮০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি চন্দনাইশকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে সরকারি ও বেসরকারিভাবে যথাযথ ত্রাণ প্রেরণের আহবান জানান।
লোহাগাড়া : আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ তুলাতলী বাজার এলাকায় টংকাবতী নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে অনেক বসতরঘর ও দোকানপাট। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় নির্ঘুম রাত যাপন করছেন শত শত বসতঘরের লোকজন। স্থানীয়রা জানান, উত্তর আমিরাবাদ চৌধুরী পাড়া সড়কের তুলাতলী বাজার এলাকা টংকাবতী নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মহাসড়কের বার আউলিয়া কলেজ গেট থেকে বারদোনা পর্যন্ত এসড়ক বিস্তৃত। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চৌধুরী পাড়া, দয়ার বর পাড়া, শীল পাড়া, বৈরাগী পাড়া, দাশ পাড়া ও বারদোনা এলাকার প্রায় ৭-৮ হাজার লোকজন চলাচল করেন। এছাড়াও উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বার আউলিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। টানা কয়েকদিনের বর্ষণে সড়কের তুলাতলী বাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী। স্থানীয় নিলু দাশ জানান, উত্তর আমিরাবাদ চৌধুরী পাড়া সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপুর্ণ। টংকাবতী নদীর ভাঙ্গনে এ সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় টংকাবতীর পানি ঢুকে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বিলীন হয়ে যেতে পারে বসতঘর। তাই টংকাবতীর ভাঙ্গর রোধে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এস এম ইউনুছ জানান, তুলাতলী বাজার এলাকায় টংকাবতীর ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছি। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হবে।
সাতকানিয়া : আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বসত ঘর ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অন্যত্র আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট ও চলাচলের সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং পানিতে ডুবে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে সাতকানিয়াবাসীর। বানভাসি লোকের প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সরকারি সহায়তার ফলে সাতকানিয়াকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন আ.লীগ নেতারা। অন্যদিকে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে সরকার কৃর্তক বরাদ্ধকৃত চাউল, নগদ টাকা, রান্না করা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে উপজেলা নির্বাহী নিজে ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করেছেন। অপরদিকে, গতকাল সোমবার সকালে বাজালিয়া ইউনিয়নে দ্বি-তল বিশিষ্ট একটি পাকা বসতঘর বিলীনসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক বসতঘর ইতিমধ্যে সাঙ্গু গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ ও চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ গৃহহারা ও ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আত্মীয় স্বজনের বসত ঘরে।
বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ডা. নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, বিগত প্রায় ১০ দিন ধরে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণের ফলে সাতকানিয়ায় চরতী, ঢেমশা,পশ্চিম ঢেমশা,বাজালিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর, কেঁওচিয়া,কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া,আমিলাইশ, এওচিয়া ও সাতকানিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। পানি উঠে উপজেলা পরিষদ, আদালত এলাকা, পৌরসভা ভবন, থানা, সাতকানিয়া কলেজ, আদর্শ মহিলা কলেজ, জাফর আহমদ চৌধুরী কলেজ, বাজালিয়া অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ে। ডুবে যায় উপজেলার সবচেয়ে উচু এলাকা হিসেবে পরিচিত কেরানীহাটও। তবে গত রবিবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করে। এ রিপোর্ট লেখা (সোমবার রাত ১০টা) পর্যন্ত সময়ে কেরানীহাট থেকে দস্তিদার হাট পর্যন্ত সড়ক থেকে সম্পূর্ণ রূপে বন্যার পানি নেমে গেছে। সড়কের আশ-পাশ উঁচু এলাকা থেকে পানি কমলেও নিচু এলাকার অন্তত ৪ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে। গৃহহারা হয়েছে লক্ষাধিক লোক। পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহ জানান, তাঁর ইউনিয়নের মোট ৬টি ওয়ার্ড এখনো পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ৮০ শতাংশ মানুষ গৃহহীন ও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য একটি সাইক্লোন শেল্টার অনুমোদন ও টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। এটির কাজ শুরু করে দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।
বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, বাজালিয়া ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৮মে.টন চাউল ও সাড়ে ৪শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। গতকাল সকালে এ ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় খলিল সওদাগরের দ্বি-তল বিশিষ্ট পাকা দালান বন্যার পানির স্রােতে সম্পূর্ণ রূপে ধসে যায়। গতকাল বিকালে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা ধসে যাওয়া বাড়ি ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমিলাইষ চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, ইতিমধ্যে আমিলাইষে ২১টি বসতঘর শঙ্খনদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। গৃহহারা মানুষগুলো স্কুুল, মাদ্রাসা ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে ৯ মে. টন চাউল, ৬শ প্যাকেট শুকনো ও রান্না কারা খাবার বানভাসিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ছদাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের ছদাহা ইউপি-মিঠাদিঘি সড়কের একটি ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন সাতকানিয়াকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সাতকানিয়ার বানভাসি মানুষদের জন্য বন্যা কবলিত সবকটি ইউনিয়নে ৯৫ মেট্রিক টন চাউল, সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২লাখ ৫০ হাজার টাকা, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। আগামীতে আরো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় গত চারদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিম শরীফ জানান, পৌরসভাসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সমূহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজ, জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ ও বাজালিয়া অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজসহ প্রায় ৩০টির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় বেশ কয়েকদিন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আজ অথবা কালকের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম যথারীতি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সামশুল হক জানান, সাতকানিয়ার ১শ ৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় ৩ দিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করা যাচ্ছে না। গতকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেই এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট