চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিদায় ইংল্যান্ড, অপেক্ষা এবার ভারতের

হুমায়ুন কবির কিরণ

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রায় দেড় মাস, আক্ষরিক অর্থে ৪৬ দিনের লম্বা সফর। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ উত্তেজনা সারা বিশ্বে ক্রিকেট ভক্তদের মাতিয়ে রেখেছিল এই ৪৬ দিন। লর্ডসে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে অতীতের গর্ভে চলে গেল চার বছর পর হাজির হওয়া ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব- বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। আরেকটি উৎসবের জন্য অপেক্ষা এবার ২০২৩ সালের, যেটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতে।
ইংল্যান্ডে এবারের বিশ্বকাপটি ছিল পঞ্চমবারের মত আয়োজন, সব মিলিয়ে দ্বাদশ। ইউরোপের যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি বিশ্বকাপ আয়োজন করে এশিয়া, আফ্রিকা আর ওশেনিয়া মহাদেশও। আঁতুড়ঘরে আরেকটি বিশ্বকাপ ফিরতে ফিরতে তাই এক-দেড় দশক তো লাগবেই। এদিক থেকে কেবল ভেন্যুর কারণেই এবারের বিশ্বকাপ ছিল বিশেষ মাহাত্ম্যের। গত ২৯ মে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠান আর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ১০ অধিনায়কের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসরের বর্ণাঢ্য যাত্রা।
মাঠের খেলা গড়ায় পরদিন দ্য ওভালে, ইংল্যান্ড- দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে। ১০ দল নিয়ে আয়োজিত এবারের আসরে ফরম্যাট ছিল রাউন্ড রবিন লীগ, যে কারণে সব দলই খেলেছে একে অপরের বিপক্ষে। বিরতিহীনভাবে ৩০ মে থেকে ৬ জুলাই ছিল রাউন্ড লীগ পর্ব। তবে ৩৮ দিনের নিরবচ্ছিন্ন সূচিতে বিরতি ঘটেছে একাধিকবার, বৃষ্টির বাগড়ায় কোনো বলই হতে
পারেনি চারটি ম্যাচে। তারপরও বাকি যে ৪১টি ম্যাচে ফল হয়েছে, সেখানে ছিল ঘটন-অঘটনের মুহূর্ত, রুদ্ধশ্বাস লড়াই আর অনাকাংক্ষিত ঘটনা। আসরে ম্যাচের পর ম্যাচ সেঞ্চুরি করে গেছেন রোহিত শর্মা (৫টি), আট ইনিংসের সাতটিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, ভয়ানক সব ইয়র্কারে বারবার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছেন মিচেল স্টার্ক, গতি-বাউন্সারে ঝড় তুলেছেন জোফরা আর্চার-মার্ক উড, বাঁহাতি পেসে মারাত্মক সুইংয়ের ‘কামড়’ দিয়েছেন মোহাম্মদ আমির ও ট্রেন্ট বোল্ট, কম যাননি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানও। তার স্লোয়ারে-কাটারে হাপিত্তেশ করেছেন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানরা। ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ও রানআউটের প্রদর্শনী দেখিয়েছেন শেল্ডন কটরেল, মার্টিন গাপটিল, জিমি নিশাম। আছে গ্যালারিতে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সমর্থকদের মারামারি, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে কোনো কোনো ক্রিকেটারের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মতো দৃষ্টিকটু ঘটনাও। বৃষ্টির হানা আর স্টাম্পে বল লাগার পর বেল না পড়ার অনাকাংক্ষিত আর উদ্ভট ব্যাপার তো ছিলই।
টক-ঝাল-মিষ্টির এমন সব ঘটনা মিলিয়েই জমজমাট ছিল পুরো বিশ্বকাপ, আলোচনা-সমালোচনায় জাগরূক ছিল ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে। নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীদের দেড় মাস ঘোরের মধ্যে রেখে ব্যাট-বল উৎসবের সেই মহাআয়োজনের পর্দা নেমে গেল পরশু। চার বছর পরের বিশ্বকাপ শুরুর আগে যা হবে, তার সবই হবে বিচ্ছিন্নভাবে, দ্বিপক্ষীয়-ত্রিদেশীয় বা মহাদেশীয় আয়োজনে বা বিশওভারি ক্রিকেটের মোড়কে। কিন্তু পঞ্চাশওভারি রোমাঞ্চের ক্রিকেট উৎসব আর তার মিলন মেলার স্বাদ কি আর তাতে মিটবে?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট