চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঈদে ঘুরে আসুন বোয়ালখালী

পাহাড়-নদী-সমতলে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে

সেকান্দর আলম বাবর , বোয়ালখালী

১৯ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এবারের ঈদে বেড়িয়ে আসতে পারেন পাহাড়-নদী-সমতলের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সুন্দরের স্থান বোয়ালখালী। পর্যটনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা গড়ে না উঠলেও প্রকৃতির সাজানো এ এলাকার কড়লডেঙ্গা, জ্যৈষ্ঠপুরা, বাঁশকল, কর্ণফুলী রিভারভিউ যে কাউকে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে সাহায্য করবে। পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণে পাহাড় ঘেরা, উত্তরে শান্ত মেজাজে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদী। মাঝখানে এক টুকরো সমতল। তাও হালকা উঁচু-নিচু। পাহাড়ে বন-বনানী, সমতলে সবুজ ঘাস। এ যেন প্রকৃতির নিজহাতে সাজানো শিল্পীর আঁকা চিত্র আর নকশাকারীর সুনিপুণ স্থাপত্যশিল্প। বাস্তবে এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা মিলবে বোয়ালখালীতে।
কড়লডেঙ্গা-জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ী অঞ্চল: পূর্বে বিস্তীর্ণ উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি, পাহাড়ের পাদদেশে সমতল ভূমি, খাড়া পাহাড়ের ঘা ঘেঁষে ঠা-া মেজাজে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদী। একবার না ঘুরলে বোঝাই যাবে না পৃথিবীর আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট থেকে এ স্পটের পার্থক্য কতটুকু ? সরকারের আশ্রয়ণ, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প পাহাড়ের নির্জনতাকে ভেঙেছে, এখন মানুষের আনাগোনা আর পাখির কুজনে-পাহাড়ের বয়ে যাওয়া ঝর্না আর নদীর কলতানে মুখরিত এ জনপদগুলো। পাহাড়ে কৃষিকাজে মন দিয়েছে ওই এলাকার মানুষ। কৃষি বিপ্লবের এ দৃশ্য দেখতে আসে প্রকৃতি আর কৃষিপ্রেমি মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালুরঘাট-চরণদ্বীপ-ভা-ালজুরি সড়ক ইতোমধ্যে হয়েছে। কালুরঘাট হয়ে সিও অফিসের ওপর দিয়ে উপজেলার প্রধান সড়ক কিংবা বেঙ্গুরা সড়ক হয়ে এ পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার এখন সহজ যাতায়াত। গুদামঘর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ শুরু হযেছে। এতে পূর্বাঞ্চলের মানুষের সহজ চলাচলের পথ উম্মুক্ত হবে, দেখার সুযোগ হবে দেশ-বিদেশের মানুষের অনিন্দ্য সুন্দর জ্যৈষ্ঠপুরা, জঙ্গল আমুচিয়া আর কড়লডেঙ্গাকে। উঁচু নিচু পাহাড়ের ঢালুতে সারি সারি গাছ, কিছু ভেতরে গেলেই মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঝর্না, সাথে কলকল শব্দে প্রবাহিত ছড়ার পানি যে কারো মন কাড়বে। এ ছড়ায় কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে যখন রেখে পাহাড়ি গাছ নামানো দৃশ্য যে কারো মন জুড়ায়। এছাড়া কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে এমনিতেই ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে প্রতিনিয়ত আসে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম ধার্মিকেরা। কারণ এখানে রয়েছে বু-আলী কলন্দর (র) মাজার, দূর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল মেধস আশ্রম, বৌদ্ধদের বৌধিবৃক্ষ।
মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ: বোয়ালখালীতে বিনোদনের নতুন সংযোজন কধুরখীলে ‘মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ’। কল্পনার চেয়েও বেশি ভাল লাগার স্থানে পরিণত হয়েছে এটি। নদীর পাড় ঘেঁষে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের স্পটটি যে কারো নজর কাড়বে। কর্ণফুলীতে নৌকায় চড়া, নদীর ধারে বসে হিমশীতল বাতাসে মন জুড়ানো, সূর্যাস্তের দৃশ্য পরোপুরি উপভোগ করা, এই এক অন্যরকম অনুভূতি। ঘুরলাম। পুরো বিকেলটা বেশ ভাল লাগার স্থান এটি। কর্ণফুলী পাড়ে পশ্চিম কধুরখীল পৌর এলাকার ১ নং ওর্য়াডে নাজিরখালী পয়েন্টে গড়ে উঠা মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ ভ্রমন পিপাসুদের এখন উপযুক্ত ও নিরাপদ স্থান। উত্তর পশ্চিমে শান্ত মেজাজে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদী, নদীর পাড় ঘেঁষে চলে যাওয়া দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটারের কালুরঘাট-ভা-ালজুরি সড়ক। এই সড়ক পাড়েই ঝিঁকঝাঁক পরিপাটি, নদী ভাঙনরোধে ফেলা ব্লক নিয়ে গড়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ। নদীর ভাঙনরোধে ব্লক নির্মাণের পরই ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী রায় রমেশ চন্দ্র সেন ও স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল কর্ণফুলীর এ অংশে ভাঙনরোধে ব্লক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে এ এলাকায় কাজ শেষ হতেই নদী তীরের চিরচেনা ভাঙন দূর হয়ে সৃষ্টি হয় প্রকৃতি আর কৃত্রিমতার অপরূপ সৌন্দর্য। এখন এটি ভ্রমণ পিপাসুদের প্রশান্তির একটি স্থান।
জ্যৈষ্ঠপুরা ‘বাঁশকল’: ইতোমধ্যে যারা ওইস্থান ঘুরে এসেছেন তাদের বর্ণনায় হয়তো উঠে আসবে এরকম, অনেক দেখা হয়েছে। জানার আকাক্সক্ষা থেকে আরো ঘুরলাম। নেই কৃত্রিমতার ছোঁয়া। তারপরও যেন কেউ তৈরি করেছে এটিকে পর্যটন স্পট। কোলাহলের বাইরে অপরূপ সাজে সজ্জিত প্রান্তর। নদীর কল-কল ধ্বনিতে বয়ে চলার সুমধুর আওয়াজ, পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে পাখির কুজন। সবকিছুই অসাধারণ। নির্জনতায় একাকি কিংবা সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে সময় পার না করলে বোধগম্য হতো ‘বাঁশকল’-এর গুরুত্ব।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুচ্ছগ্রাম গিয়ে ঠেকেছে কালুরঘাট-চরণদ্বীপ-ভা-ালজুরির কার্পেটিং সড়ক। সড়কের বামে ব্রিকসলিং রাস্তা প্রবেশ করেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে। শেখ হাসিনা সরকারের দেয়া এ পাকা ঘরগুলো তৈরি করেছে সেনাবাহিনী। ঘরগুলোর নির্মাণশৈলি অন্য যেকোন ঘর থেকে আলাদা। নদীর পাড়ে পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত ঘরগুলো যে কারোও নজর কাড়বে। আশ্রয়ণ প্রকল্প পার হয়েই কাটা পাহাড় দিয়ে শুরু ‘বাঁশকল’। স্থানীয়রা জানান, বাঁশকল যেতে বর্তমান কাটা পাহাড়টি পূর্বে সরুপথ ছিল। কোনমতে ওইপথ দিয়ে এক এক করে মানুষ পার হয়ে নদীরপাড় আর পরবর্তী পাহাড়ে যেত। কাটাপাহাড়ের দু’পাশে প্রচুর বাঁশ ছিল, যা এখনও আছে। বাঁশের ঘিঞ্জি (কল) পার হতে তাদের অনেক কষ্ট হতো বলেই স্থানীয়রা এর নাম দেন ‘বাঁশকল’। এখন এ এলাকাটিতে পর্যটকরা যায় একটু প্রকৃতির শান্ত মেজাজে বসে নিজেকে রিফ্রেশ করতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট