চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

গৃহহীন দুটি পরিবারকে নিজ অর্থে ঘর নির্মাণ

সীতাকু-ে দুই ভিক্ষুকের জীবন বদলে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নিজস্ব সংবাদাদাতা , সীতাকু-

১৯ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ের বাড়বকু- ইউনিয়নে দুই প্রতিবন্ধী গৃহহীন ভিক্ষুককে ব্যক্তিগত অর্থে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এতে পরিবার দুটি এখন নিজের ঘরে নিশ্চিন্তে রাতযাপন করতে পারছে।
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অকল্পনীয় এ সহযোগিতা পেয়ে আবেগাপ্লুত দুই পরিবারের সদস্যরা, তার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করছেন। চেয়ারম্যান বলছেন, দুটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারাটাই তার জন্য বিশাল অর্জন বলে মনে করছেন তিনি। এর বেশি আর কিছুই চাওয়ার নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু- ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মিয়াজীপাড়ার মৃত এবাদুল হকের ছেলে নুরুল আলম (৬৫) জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। শারীরিক অসুস্থতায় কাজ করতে পারেন না। তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ শতক জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে ঘর তৈরির মতো কোন অর্থ না থাকায় প্রতিবেশিদের ঘরের বাইরে, বারান্দায় ও রান্নাঘরে ঘুমিয়ে রাত কাটাতেন স্ত্রীকে নিয়ে। গত সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থীর পক্ষে ওই এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে আলমকে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে দেখেন বাড়বকু-ের ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী। এ সময় তিনি তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন তার কোন ঘর নেই। ভিক্ষা করে জীবনধারণ করছেন স্বামী-স্ত্রী। সেদিনই তিনি তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেবার উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন টিন ও মজবুত কাঠে সুদৃশ্য বাড়ির মালিক আলম।
একইভাবে পার্শ্ববর্তী ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইব্রাহিমও অর্থের অভাবে একটি ঘর তৈরি করতে পারছিলেন না। বহু পুরোনো তার বাঁশ-বেড়ার ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে ভেঙে বিলীন হবার অবস্থা হয়েছিল। এতে ঝড়-বৃষ্টি ও শীতে প্রচ- কষ্ট করলেও কিছুই করার ছিল না তার। কিন্তু তাদের এ দুঃখের কথাও সম্প্রতি জানতে পারেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী। সাথে সাথে তিনি জরাজীর্ণ ঘরটি ভেঙে সেখানে নতুন ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যক্তিগত অর্থে। ইব্রাহিমের ঘরটিরও নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
লোকমুখে এসব তথ্য পেয়ে সরেজমিনে বাড়বকু-ের ৬ নং ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী নুরুল আলমের বাড়ি ও ৫ নং ওয়ার্ডে ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্মিত সুদৃশ্য ঘর দুটি দেখা যায়।
পরিদর্শনকালে মিয়াজী পাড়ায় নুরুল আলমের বাড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবন্ধী আলম ও তার স্ত্রী হারেছা খাতুন বলেন, নিজেদের ৪ শতক জায়গা থাকলেও ঘর নির্মাণের টাকা ছিল না। তাই অন্যের ঘরের দরজায়, বারান্দায় শুয়ে রাত কাটিয়েছি শীত-বর্ষায়। কিন্তু এখন আর বাইরে রাত কাটায় না। চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী নিজের টাকায় আমাদের শক্ত একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। প্রায়ই টাকা পাঠান। তা দিয়ে সংসার চালাই। এখন ভিক্ষা করা বন্ধ করে দিয়েছি। এই দম্পত্তি ঘরটি পাবার আগের দুঃসহ কষ্টের কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহর জন্য দোয়া করেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দরিদ্র ইব্রাহিম বলেন, আমিও মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে সংসার চালাতাম। অনেক আগের বেড়ার ঘরটি ভেঙে পড়তে পড়তে বিলীন হয়ে যাবার পরও নির্মাণ করার মতো টাকা ছিল না। হঠাৎ-ই চেয়ারম্যান আমার ঘরটি তৈরি করে দেবার উদ্যোগ নিলে আমি নতুন ঘর পেলাম। ইব্রাহিমের স্ত্রী সাফিয়া খাতুন বলেন, চেয়ারম্যানের এই দান আমার মাথার ওপরে থাকবে। এ ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না। শুধু ঘর নয় পাশে ভাঙা রান্না ঘরটিও করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট