চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলাবদ্ধতা ও জনভোগান্তি

মাহমুদুল হক আনসারী

১১ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ক য়েক দিনে র ভারী বর্ষ ণে জলাবদ্ধতাসহ নানা কারণে বেড়েছে জনভোগান্তি। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে শহর-নগর পানিতে থৈ থৈ করছে। শহরের অলিগলি নালা-নর্দমা পানি আর কাদা ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। নালাগুলো বাসা-বাড়ির উচ্ছিষ্টের ময়লায় জ্যাম হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের খোড়াখুড়িরও শেষ নেই। এক পক্ষ শেষ করলে আরেক পক্ষ কাজ শুরু করে। উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন যাদের হাতে তারাই জানে কবে নাগাদ এসব রাস্তা খোঁড়াখুড়ির ভোগান্তি থেকে জনগণ নিস্তার পাবে। ফলে ভরা বর্ষা মৌসুমে উন্নয়ন কর্মকা-ের অসমাপ্ত কাজের ফলে জনগণের ভোগান্তিরও শেষ নেই।
জনগণ অধীর আগ্রহে বর্ষার বৃষ্টির অপেক্ষা করলেও বিরতিহীন টানা বর্ষণে নি¤œআয়ের মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে। এই কয়দিন বৃষ্টিতে শহরের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজের নিচতলা পানিতে ভাসছে। খালবিল যা শুকিয়েছিল তা এখন পানিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। এ অঞ্চলের পুকুর ও মৎস্য খামারের চাষীদের অনেক মাছ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস ভারী বর্ষণের ও পাহাড় ধসের আশংকার কথা জানিয়েছে। নগরীর দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে আছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও ক্লাস ঠিকমতো করা সম্ভব হচ্ছে না। পাইকারী বাজারে অনেকগুলো দোকানে পানি উঠার সংবাদ পাওয়া যায়। নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগারে ভোগান্তির সীমা নেই। রাস্তাঘাটে পরিবহন সংকটে পড়ছে জনগণ। সরকারের সেবা সংস্থাসমূহ পাহাড় ধসের আশংকায় থাকা পাহাড় থেকে জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে। তবুও চট্টগ্রামের অনেক পাহাড়ী এলাকায় বসবাসকারী মানুুষের বসবাস ও অবস্থান আছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টিতে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। পাহাড়ী অঞ্চল চট্টগ্রাম সবসময় ভূমিধস ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকে। অপরিকল্পিত নগর বাড়িঘর নির্মাণ ও জনবসতির কারণে এ অঞ্চলের পরিবেশ সবসময় ঝুঁকির মধ্যে। স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর মধ্যেও পাহাড়কে পাহাড়ের মতো রাখা যাচ্ছে না। একটি মহল প্রশাসন ও পরিবেশের সাথে নিয়মিত যুদ্ধ করে এ অঞ্চলের পরিবেশকে ধ্বংস করছে। এসব পাহাড়ের মাটিগুলো বৃষ্টির সাথে সাথে সমতলে নেমে আসে। রাস্তা নালা এসব মাটি এসে ভরাট করে দেয়। কে শুনে কার কথা। পাহাড় নদী পর্বত সবকিছু পরিবেশের একেকটি নিদর্শন। কিন্তু মানুষ সে নিদর্শনগুলোকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে না।
পাহাড় পাহাড়ের স্থানে নেই। নদী দখল হয়ে গেছে। নালা ভরাট করে মার্কেট, ঘর নির্মাণ হচ্ছে। শহরে এক ইঞ্চি খালি জায়গা না রেখে ঘরবাড়ি তৈরী করা হয়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ও আইন মানা হয় না। একটা শহর অথবা গ্রাম নগর অপরিকল্পিত চিন্তায় চলতে পারে না। প্রশাসন এক সেক্টর আরেক সংস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ উন্নয়নের নামে চলতেই আছে। এক পক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করতে দেখছি। নানা অজুহাত অভিযোগ জনগণ শুনতে পায়। বাস্তবে যে সেক্টরের দায়িত্ব সে কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হয় না। প্রতি বছর বর্ষা আসলে নগরীর জলাবদ্ধতার সীমা থাকেনা। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি আর বাণী পাওয়া যায়। বাস্তবে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে কোনো অবস্থায় নিস্তার পাচ্ছে না। নগরে জনগণের আধিক্য বাড়ছে। অপরিকল্পিত মার্কেট ঘরবাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। পরিবহণ ও গণপরিবহণ নিত্যদিন অহরহ বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে জনগণের জীবনমানের সুরক্ষার জন্য সঠিক কর্মপরিকল্পনা দেখছি না। লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রজেক্ট হাতে নিয়ে কাজ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে জনগণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়ন নগরবাসীর কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঝড় বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরজীবনে। ছাত্র-ছাত্রী থেকে নি¤œমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলোর জন্য এ সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। উন্নয়ন-পরিকল্পনা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে নগরকে এগিয়ে নিতে হবে। খাল বিল নালা নর্দমা দখল মুক্ত করতে হবে। পাহাড়-পর্বতকে তার স্বকীয়তায় রাখতে হবে। আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকার রাস্তা পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিতভাবে করার দায়িত্ব সকলের। বৈশ্বিক পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সাথে সম্পর্ক রেখে দেশের শহর-নগরকে গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট